জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, দেশের সার্বিক অবস্থা নাজুক। রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল। সামনে নির্বাচন কিভাবে হবে, সব দল অংশগ্রহণ করবে কি না, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না বুঝতে পারছি না। আমাদের ধারণা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু হবে না। রংপুর-লালমনিরহাট জেলায় ৫ দিনের সফর উপলক্ষে তিনি সোমবার দুপুর ২টায় রংপুর সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
জিএম কাদের বলেন, দেশে নিপীড়নের রাজনীতি চলছে। বিরোধী দলকে কোন বক্তব্য দিতে দেয়া হচ্ছে না, তাদের কথা শুনতে দেয়া হচ্ছে না, সমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। নির্যাতনের মাধ্যমে সরকার বিরোধীদের কন্ঠরোধ করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে ভয়-ভীতির উর্ধ্বে এনে আন্দোলন গড়ে তোলা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, জোটগত কিংবা এককভাবে নির্বাচনের বিষয়ে জাতীয় পার্টি এখনও কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। আমাদের নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভবিষ্যতে রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকে থাকবে কি না তা নির্ভর করছে এ নির্বাচনে। আমরা তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত আলোচনা করে দেশ ও জাতির স্বার্থে যেটি ভাল হবে সেই সিদ্ধান্তই নেব।
তিনি আরও বলেন, এই সরকার দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। এ বিষয়ে আমি সংসদের ও বাইরে অনেকবার কথা বলেছি। বর্তমান সরকার সুশাসন দিতে পারেনি। নির্বাচনের আগে আমরা ভেবেছিলাম আওয়ামী লীগ সরকার দেশে গণতন্ত্রকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেবে, দূর্নীতি দূর করবে, দেশে অন্যায়-জুলুম, নির্যাতন ও অবিচার থাকবে না। কিন্তু সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি’র চেয়ে এই কাজগুলো বেশি করেছে। বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মতাদর্শ নিয়ে অনেক পাথর্ক্য থাকলেও দূর্নীতি, অন্যায় নির্যাতন নিয়ে তাদের মাঝে তেমন কোন পার্থক্য নেই। দেশের মানুষ বিএনপি আওয়ামী লীগের বাহিরে কোন রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় আনতে চাচ্ছে। দেশের মানুষ সুশাসন ও সামাজিক নিরাপত্তা চাচ্ছে।
জিএম কাদের বলেন, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অনেক নাজুক। সরকার সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই ঋণ নিয়ে মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বর্তমান ঋণগ্রস্থ এ দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গেছে, আমদানী ব্যয় বেড়েছে। দেশ দেউলিয়া হওয়ার শংঙ্কা দেখা গেছে। সরকার আমাদের এ কথাকে যতই উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করুক, প্রকৃতপক্ষে মেগাপ্রকল্প কোনটি লাভজনক হচ্ছে না।
জিএম কাদের আরও বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে দেশে দূর্নীতি অনেক কম ছিল, সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন হয়নি। বতর্মানে সরকার সমর্থিত গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানই বলছে আওয়ামী লীগের আমলেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু পরিবারের উপর অত্যাচার হয়েছে।
তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির মাঝে কোন ভাঙ্গন নেই। জাতীয় পার্টি আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। তাই দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও বিদেশী শক্তি সবাই জাতীয় পার্টির কাছে অনেক কিছু প্রত্যাশা করছে।
রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন ঘনিয়ে এলে রাজনৈতিক দলগুলো থেকে অনেকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আশাব্যক্ত করেন। আমি রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রার্থী হিসেবে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে বেছে নিয়েছি। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা তাকেই সমর্থন দিবে এবং জয়ের কাজ করবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান, জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এসএম ইয়াসির, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, ছাত্র সমাজ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আল মামুনসহ অন্যরা। এরপর জিএম কাদের নগরীর দর্শনাস্থ পল্লী নিবাসে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কবর জিয়ারত করেন।