প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগের আগামী সম্মেলনে একজন কাউন্সিলরও যদি তাকে দলের নেতৃত্বে দেখতে না চান, তাহলে তিনি বিদায় নিতে প্রস্তুত আছেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন টানা চার দশক ধরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়ে আসা শেখ হাসিনা।
গত দুটি সম্মেলনের আগে প্রধানমন্ত্রী নিজেই তার বয়সের কথা তুলে ধরে বলেছিলেন, নতুন নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে পারলে তিনি খুশি হবেন। তবে প্রতিবার সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু কন্যাকেই নেতৃত্বে রেখেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
সে বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে ওই সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, এবার কোনো চমক সম্মেলনে থাকবে কি না, শেখ হাসিনা কোনো নতুন নেতৃত্বকে সামনে নিয়ে আসবেন কি না।
উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আওয়ামী লীগের একটি কাউন্সিলরও যদি বলে, আমাকে চায় না, আমি থাকব না।”
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট সেনাবাহিনীর একদল সদস্য যখন সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করে, তখন স্বামীর কর্মসূত্রে ইউরোপে ছিলেন শেখ হাসিনা। তার সঙ্গে থাকা ছোট বোন শেখ রেহানাও প্রাণে বেঁচে যান।
এরপর দীর্ঘদিন নির্বাসনে কাটাতে হয় শেখ হাসিনাকে। ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার অনুপস্থিতিতেই আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তাকে দলীয় সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এখন তিনি দলের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন এবং একটানা ১৩ বছর ধরে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে কে থাকবে তা পুরোপুরি কাউন্সিলরদের সিদ্ধান্ত।
“আমার তো সময় হয়ে গেছে।… বিদায় নেওয়ার জন্য আমি প্রস্তুত।”
যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ দিনের সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে এই সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে তা সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাজনৈতিক সমর্থন ও মানবিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখা, আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত, জাতীয় আদালত এবং আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে চলমান মামলায় সমর্থন প্রদান, জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর অব্যাহত দমন-পীড়ন বন্ধে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা করা, আসিয়ানের পাঁচ দফা ঐকমত্যে মিয়ানমারের অঙ্গীকারসমূহ ও কফি আনানের কমিশনের সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নে মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করা, মিয়ানমারে জাতিসংঘসহ মানবিক সহায়তাকারীদের নির্বিঘ্নে প্রবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে সম্মানের সঙ্গে ও নিরাপদে তাদের নিজ দেশে ফিরতে পারে সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করার জন্য জাতিসংঘকে কার্যকর ও জোরালো ভূমিকা রাখার জন্য আহ্বান জানিয়েছি।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রীয় সফরে লন্ডনে যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় এবং রাজা তৃতীয় চার্লস আয়োজিত সিংহাসনে আরোহণ অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এরপর নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে ১৯ সেপ্টেম্বর লন্ডন ত্যাগ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে শেখ হাসিনা গত ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৭তম অধিবেশনে ভাষণ দেন এবং এর ফাঁকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। স্থানীয় সময় ২৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সড়কপথে নিউ ইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে যান প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা।
প্রধানমন্ত্রী গত রবিবার দেশের উদ্দেশে যাত্রা করেন। এরপর লন্ডনে দুই ঘণ্টার যাত্রাবিরতি দিয়ে সোমবার দিবাগত রাত ১টায় দেশে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। এই দীর্ঘ সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী।