শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩, ০১:৪৭ অপরাহ্ন




এলসি খোলায় ফের কড়াকড়ি

আউটলুকবাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২২ ৬:৫৮ am
বন্দর আমদানি বাণিজ্য import trade trade Export Promotion Bureau EPB Export Market বাণিজ্য রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ইপিবি trade Export Promotion Bureau EPB Export Market বাণিজ্য রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ইপিবি
file pic

ডলার সংকটে পড়ে এলসি খোলা কমিয়েছে ব্যাংকগুলো। ছোট কিছু ব্যাংক এখন কোনো ধরনের এলসি খুলছে না। আগের এলসির দায় পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছে কোনো কোনো ব্যাংক। ডলারের বিকল্প মুদ্রায় লেনদেনের চেষ্টা করলেও তাতে সাড়া নেই। সম্প্রতি চীনা মুদ্রায় এলসি খোলার সুযোগ দেওয়া হলেও ব্যাংকগুলো আগ্রহ দেখাচ্ছে না। সাড়া মিলছে না গ্রাহকদের দিক থেকেও। সংকট উত্তরণে আমদানি কমানোকে একমাত্র সমাধান দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এজন্য এলসি খোলায় আরও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে সতর্কতা।

এমন বাস্তবতায় দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আজ রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে আর্থিক খাতের বিশিষ্টজন অংশ নেবেন। সেখানে চলমান ডলার সংকট, বৈদেশিক মুদ্রার মজুত, আমদানি-রপ্তানি পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।

অন্যদিকে, ডলার সংকট কাটানোর উপায় নির্ধারণে আজ আবার বৈঠকে বসছে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাফেদা। বৈঠকে প্রবাসী আয়ে আরোপিত চার্জ পুরোপুরি মওকুফের প্রস্তাব এবং দেশের বাইরে ছুটির দিনে নিজস্ব এক্সচেঞ্জ হাউস খোলা রাখার বিষয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া সুবিধাভোগীর কাছে দ্রুত রেমিট্যান্সের অর্থ পৌঁছানো, এক্সচেঞ্জ হাউস বাড়ানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে। গত ৩১ অক্টোবর সংগঠন দুটিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়ার পর এ বৈঠক ডাকা হয়েছে।

সংশ্নিষ্টরা জানান, আমদানি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে নতুন এলসি কমছে। যদিও বাকি বা দেরিতে পরিশোধের শর্তে আগে খোলা এলসির দায় পরিশোধ বেড়েছে। যে কারণে বৈদেশিক মুদ্রার খরচ কমেনি। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এলসি খোলা ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ কমলেও আমদানির দায় পরিশোধ বেড়েছে ১১ দশমিক ৭০ শতাংশ। এর কারণ, এলসি খোলার সঙ্গে সঙ্গে কোনো পণ্য আমদানি হয় না। বেশিরভাগ এলসির দেনা পরিশোধ হয় পণ্য দেশে আসার পর। অবশ্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশিরভাগ আমদানি হচ্ছে বায়ার্স ক্রেডিট বা ডেভার্ড পেমেন্টের মাধ্যমে। এ উপায়ে পণ্য পাওয়ার পর নির্ধারিত সময় শেষে এলসির দায় পরিশোধ করতে হয়।

আমদানি কমাতে শতভাগ এলসি মার্জিন নির্ধারণের পাশাপাশি এলসি খোলার আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনাপত্তি নিতে হচ্ছে। সব ঠিক থাকার পরও কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক বলে দিচ্ছে, এই এলসি খোলা যাবে না। বিশেষ করে গাড়ি, টিভি, ফ্রিজ, ফুল, ফলের মতো পণ্য আমদানিতে অনেক ক্ষেত্রে অনাপত্তি দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেননা, এ ধরনের পণ্যের এলসি খোলার খুব কম দিনের মধ্যে পণ্য এসে যায়। দায় পরিশোধও করতে হয় দ্রুততম সময়ে। এসব পণ্যের বাইরে অন্য যে কোনো ক্ষেত্রে ডলার সংস্থান না করে এলসি না খোলার বিষয়ে সতর্ক করা হচ্ছে। ফলে এখন রপ্তানি আয়ের বিপরীতে ব্যাক টু ব্যাকের বাইরে এলসি হচ্ছে খুব কম। অধিকাংশ ব্যাংক এখন এলসি খোলার আগে আমদানিকারককে ডলার সংগ্রহ করার শর্ত দিচ্ছে। আর আগের দায় পরিশোধে দফায় দফায় সময় নিচ্ছে। ফলে নতুন প্রজন্মের ও ছোট ব্যাংক এলসি খোলা এক রকম বন্ধই রেখেছে। একটি বড় শিল্প গ্রুপ বেসরকারি খাতের প্রথম প্রজন্মের একটি ব্যাংকে ১৫ মিলিয়ন ডলারের দায় পরিশোধের মতো ডলার জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে। গত সপ্তাহে ওই গ্রুপের পক্ষে ব্যাংকটি কোনোমতো ৭ মিলিয়ন ডলার জোগাড় করলেও বাকি ৮ বিলিয়ন ডলার বকেয়া রাখা হয়েছে।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, রপ্তানিকারকদের বাইরে কোনো ব্যাংক এলসি খুলতে চাচ্ছে না। খুললেও ২০ হাজার ডলারের বেশি এলসি নিচ্ছে না। এতে স্থানীয় শিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কেননা, অনেকে আছেন বাইরে থেকে কাঁচামাল আমদানি করে শুধু দেশের বাজারে বিক্রি করেন। তাঁদের তো ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে, পরিচালন ব্যয় হচ্ছে। অথচ উৎপাদন করতে পারছেন না। ফলে তাঁরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তিনি বলেন, রিজার্ভ যেমনই থাকুক, বর্তমান পরিস্থিতি উত্তরণে একবারে ৩ থেকে ৪ বিলিয়ন ডলার বাজারে ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে। তাতে দেখা যাবে, হয়তো ৬ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় হয়েছে।

বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল মার্চেন্ডাইজ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিইএমএমএ) সাবেক সভাপতি মাইনুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, শতভাগ এলসি মার্জিন দিয়ে এলসি খোলার ফলে এমনিতেই খরচ বেড়েছে। কেননা, আগে যেখানে পণ্য আসার পর টাকা দিতে হতো, এখন পণ্য আসার দুই থেকে তিন মাস আগে দিতে হচ্ছে। এর পরও অনেকে এলসি খুলতে পারছেন না। পুরোনো ব্যবসায়ীরা দুটি এলসির আবেদন করলে একটা করতে পারলেও নতুনরা একেবারেই পারছেন না। এর প্রভাবে ইলেকট্রিক সামগ্রীর দর বেড়ে যাচ্ছে।

অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, রপ্তানির অর্থ দেশে না এনে উপায় নেই। ফলে ডলার সংকট উত্তরণে এখন রেমিট্যান্স বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রণোদনার হার আড়াই শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা যেতে পারে। পাশাপাশি যেসব বাধা রয়েছে, তা দূর করতে হবে। ওয়েজ আর্নারস বন্ডে বর্তমানে ১ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করা যায় না। আবার কারও ৫০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র থাকলে তিনি ৫০ লাখ টাকার বেশি কিনতে পারেন না। আপাতত এ ধরনের বাধা তুলে দিতে হবে। পাশাপাশি নানা উপায়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠাতে প্রবাসীদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের মতো বিশ্বের অন্যান্য দেশেও মূল্যস্ম্ফীতি বাড়ছে। মূল্যস্ম্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সবাই এখন চাহিদা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। তবে অন্য দেশগুলো নীতি সুদহার বাড়ানোর মাধ্যমে খরচে লাগাম টানার চেষ্টা করছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় কমছে। আবার হুন্ডি প্রবণতা বেড়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে কমছে প্রবাসী আয়ও। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে প্রায় ৮ লাখ ৭৫ হাজার শ্রমিক দেশের বাইরে গেছেন। গত বছর যান ৬ লাখ ১৭ হাজার। করোনার মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে জনশক্তি রপ্তানি ছিল মাত্র ২ লাখ ১৮ হাজার। অথচ ওই অর্থবছরে ৩৬ শতাংশের বেশি বেড়ে রেকর্ড ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। গত অর্থবছর তা ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ কমে ২১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বাড়লেও গত ১১ সেপ্টেম্বর দর বেঁধে দেওয়ার পর থেকে কমতে শুরু করেছে। সেপ্টেম্বর মাসে প্রায় ১১ শতাংশ কমার পর অক্টোবরেও কমেছে প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশ। মূলত দর বেঁধে দেওয়ার পাশাপাশি আমদানিতে কড়াকড়ির কারণে রেমিট্যান্সের টাকায় অর্থ পাচার, আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের দায় পরিশোধসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের কারণে প্রবাসী আয়ের উল্লেখযোগ্য অংশ এখন হুন্ডিতে আসছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যাচ্ছে।

ডলার বিক্রি কমিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাক: বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় রিজার্ভ কমছে। এরই মধ্যে ৩৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমেছে। গত বুধবার রিজার্ভ ছিল ৩৫ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক এ পরিমাণ রিজার্ভ দেখালেও আইএমএফের মানদণ্ডের আলোকে হিসাব শুরু হলে এখান থেকে প্রায় সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলার বাদ দিতে হবে। এর মানে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ এখন ২৭ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। আইএমএফের সসফরত প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর এলসি খোলায় আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে গত সোমবার ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাফেদার নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে জানানো হয়, সরকারি সার, জ্বালানি, খাদ্যসহ অতি প্রয়োজনীয় আমদানির বাইরে কোনো ডলার সহায়তা দেওয়া হবে না। এর পর বুধবার মাত্র ১ কোটি ৬০ লাখ এবং বৃহস্পতিবার সাড়ে ৩ কোটি ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সোমবার যেখানে ৭ কোটি ২০ লাখ এবং মঙ্গলবার ৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রায় ৫০৮ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত অর্থবছরের পুরো সময়ে বিক্রির পরিমাণ ছিল ৭৬২ কোটি ১৭ লাখ ডলার। সমকাল




আরো






© All rights reserved © 2022-2023 outlookbangla

Developer Design Host BD