বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫, ০৫:০০ অপরাহ্ন




বাংলাদেশের ২০ সূচকের ১৭টিতে ‘লালবাতি’

বাংলাদেশের ২০ সূচকের ১৭টিতে ‘লালবাতি’: বাংলাদেশের ২০ সূচকের ১৭টিতে ‘লালবাতি’

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: সোমবার, ৭ নভেম্বর, ২০২২ ১২:৪৩ pm
শেয়ার বাজার শেয়ারবাজার দাম বাড়বে কমবে Inflation মূল্যস্ফীতি dse cse ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসই Dhaka Stock Exchange চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ Chittagong Stock Exchange dse cse ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসই Dhaka Stock Exchange চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ Chittagong Stock Exchange শেয়ারবাজার dse ডিএসই Share point সূচক অর্থনীতি economic দরপতন dse ডিএসই শেয়ারবাজার দর পতন পুঁজিবাজার CSE BSEC share market DSE CSE BSEC sharemarket index discrimination সূচক market down
file pic

টানা তিন টার্ম ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। নিরঙ্কুশ ক্ষমতা পেয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় আরও খড়গহস্ত হয় সরকার। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে বাধাসহ নতুন নানা আইন-কানুন প্রণয়ন করে। ফলে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও রাজনৈতিক অধিকারসহ সব সূচকই খারাপের দিকে যেতে থাকে। জ্বালানি, দ্রব্যমূল্যসহ নিত্যপণ্যের সবকিছুর দামই আকাশচুম্বী। ২০টি সূচকের মধ্যে ১৭টিতেই বাংলাদেশের অবস্থান রেডজোনে। গত বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছর আরও একটি সূচকের অবনতি হয়। গত ১৯ বছরের তুলনায় সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশের সূচক। এমন চিত্রই উঠে এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ করপোরেশনের’ (এমসিসি) জরিপে। সংস্থাটির জরিপ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দৈনিক যুগান্তর।

জানা গেছে, এমসিসি প্রতিবছর বিভিন্ন দেশের ‘রেড’ বা লাল এবং ‘গ্রিন’ বা সবুজ (ভালো) সংকেত দিয়ে সূচকের মান প্রকাশ করে। তৃতীয় পক্ষ (থার্ড পার্টি) দিয়ে এ মূল্যায়ন করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি।

সম্প্রতি ২০২৩ সালের জন্য বাংলাদেশের মূল্যায়ন প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে এমসিসি। সেখানে ‘বাংলাদেশ স্কোরকার্ড’-এ উল্লেখ করা হয়, মাত্র তিনটি সূচক রয়েছে গ্রিন বা সবুজ জোনে। গত দুই দশকের মধ্যে এই প্রথম এত বেশিসংখ্যক লাল সূচকভুক্ত হলো বাংলাদেশ। লাল সূচক বেশি পাওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ ফান্ডের (এমসিএফ) মোটা অঙ্কের অনুদান পাওয়া ফের অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। স্কোরকার্ডের উন্নতির ভিত্তিতে সাধারণত কোনো দেশকে এই ফান্ডে যুক্ত করা হয়। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) পক্ষ থেকে দীর্ঘ কয়েক বছর চেষ্টা করেও এই ফান্ডে যুক্ত হতে পারছে না বাংলাদেশ। এবারও হলো না। এটাকে ব্যর্থতা হিসাবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু স্কোর উন্নয়নে কোনো উদ্যোগ নেই ইআরডির।

প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বাংলাদেশ যে ১৭টি সূচকে রেডজোনে আছে, সেগুলো হচ্ছে- কন্ট্রোল অব করাপশন (দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ), রাজনৈতিক অধিকার, সরকারের কার্যকারিতা, জমির অধিকার ও প্রাপ্যতা, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কার্যকারিতা, বাণিজ্য নীতিমালা, ফ্রিডম অব ইনফরমেশন (তথ্যের স্বাধীনতা), ঋণ প্রাপ্তির সহজলভ্যতা, অর্থনীতিতে নারী ও পুরুষের সমতা, কর্মসংস্থানের সুযোগ, স্বাস্থ্য খাতে সরকারি ব্যয়, প্রাথমিক শিক্ষায় সরকারি ব্যয় এবং প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা। আরও আছে বেসামরিক লোকের স্বাধীনতা, আইনের কার্যকারিতা, ফিসক্যাল পলিসি (রাজস্বনীতি) এবং শিশুস্বাস্থ্য।

এছাড়া সবুজ তালিকায় থাকা সূচকগুলো হচ্ছে-মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, টিকা দেওয়ার হার এবং মাধ্যমিক শিক্ষায় নারীদের অন্তর্ভুক্তির হার।

সূত্র জানায়, ২০০৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি সূচক রেডজোনভুক্ত হলো ২০২৩ সালের প্রতিবেদনে। গত ১১ বছরের চিত্র হচ্ছে-২০২২ সালের প্রতিবেদনে রেডজোনে ছিল ১৬টি সূচক। এছাড়া ২০২১ প্রতিবেদনে রেডজোনে ছিল ১৩টি সূচক। ২০২০ সালে ১২টি, ২০১৯ সালে ১১টি, ২০১৮ সালে ৭টি এবং ২০১৭ সালে ছিল ১০টি সূচক। এর আগে ২০১৬, ২০১৫ এবং ২০১৪ সালের প্রতিবেদনে ছিল ৯টি করে সূচক। এছাড়া ২০১৩ ও ২০১২ সালের প্রতিবেদনে রেডজোনে ছিল ১০টি করে সূচক।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান জানান, এই প্রতিবেদনে দুর্নীতির যে অবস্থা সেটির বাস্তব প্রতিফলন ঘটেছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে দুর্নীতিতে ‘জিরো টলারেন্স’। কিন্তু কীভাবে এটা বাস্তবায়ন হবে সে নিয়ে কোনো নীতিমালা বা কর্মপরিকল্পনা করা হয়নি। ফলে অদ্যাবধি কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আসেনি। মাঝে মাঝে চুনোপুঁটিদের ধরা হলেও রুই-কাতলাদের কখনো জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয়নি। তাই দুর্নীতির ব্যাপকতা ও গভীরতা একই জায়গায় আছে। এই প্রতিবেদন দেখে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, মার্কিন এ প্রতিবেদনে যে অবনতিশীল অবস্থা ফুটে উঠেছে তার সঙ্গে দ্বিমত করার সুযোগ নেই। দেশে কর্মসংস্থানে যে দুর্বল অবস্থা সেটি স্পষ্ট। করোনা মহামারির আগে থেকেই পোশাক খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ কমতে থাকে। করোনাকালীন সেটি প্রকট আকার দেখা দেয়। ২০২১ সালে কিছুটা পুনরুদ্ধার হতে শুরু করেছিল। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এখন আবার খারাপের দিকে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য খাত যে বেহাল, তা করোনার সময়ে প্রকাশ পেয়েছিল। এছাড়া ওই সময় দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলেনি। পরবর্তীকালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পূরণে নানা কর্মসূচি নিয়েছিল। কিন্তু আমাদের তো সে ধরনের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এমন মূল্যায়ন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের অবস্থা কোথায় নিয়ে যায় তা সহজেই অনুমেয়।

সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের-সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বর্তমান একটা জটিল পরিস্থিতি চলছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে রাজনৈতিক সংকট। এই পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হচ্ছে। দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা না থাকা, সুশাসনের সংকট, দুর্নীতি রোধ ও জবাবদিহিতার ব্যাপক ঘাটতি আছে। এ কারণে কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ চিহ্নিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতি কোনোভাবেই উন্নত না হয়ে বরং দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের অবস্থা ফুটো কলসিতে পানি ঢালার মতো হয়েছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক।

ইআরডি সূত্র জানায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ ফান্ড গঠন করে। এটি পরিচালনার জন্য ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠা করে মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ করপোরেশন (এমসিসি)। ফান্ড গঠনের প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া। এমসিএফ-এর আওতায় স্টেট ডিপার্টমেন্ট দুটি কর্মসূচির মাধ্যমে নির্বাচিত দেশগুলোকে সহায়তা করে থাকে। এর একটি হচ্ছে থ্রেসহোল্ড কান্ট্রি বা কম অঙ্কের সহায়তার দেশ। এই প্রোগ্রামের আওতায় সাধারণত ১০ কোটি থেকে ৪০ কোটি মার্কিন ডলার পর্যন্ত অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে। অন্যটি হচ্ছে কমপ্যাক্ট অর্থাৎ বড় অঙ্কের সহায়তা। এর আওতায় ৫০ কোটি মার্কিন ডলার থেকে বিভিন্ন অঙ্কের অনুদান দেওয়া হয়।

এই ফান্ডের সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে যুক্ত করতে প্রতিবছর বৈঠক করে মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ করপোরেশন (এমসিসি)। কোনো দেশকে মূল্যায়নের জন্য প্রথমদিকে ১৭টি নির্দেশক থাকলেও সর্বশেষ ২০১২ সালে নতুন নির্দেশকসহ মোট ২০টি নির্দেশক যুক্ত করা হয়। ওই বছরই প্রথমবারের মতো মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ ফান্ডে বাংলাদেশের যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। সে সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বাংলাদেশ সফর করেন। ওই ফান্ডে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে তাকে অনুরোধ জানানো হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পরে স্টেট ডিপার্টমেন্টের আমন্ত্রণে এ সংক্রান্ত এক বৈঠকে অংশ নিয়েছিল সরকারের প্রতিনিধিও। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিবছর বাংলাদেশের পার্টনারশিপ ডায়ালগ অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনাও হয়েছিল। এর মধ্যে এমসিএফ-এর বিষয়ে বাংলাদেশ থেকে টেকনিক্যাল টিম পাঠাতে বলেছিল। কিন্তু টেকনিক্যাল টিম পাঠানো হলেও চ্যালেঞ্জ ফান্ডে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি আর এগোয়নি।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD