শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৮ অপরাহ্ন




বাজারদরেই জমির দলিল চালু করতে কমিটি

বাজারদরেই জমির দলিল চালু করতে কমিটি: বাজারদরেই জমির দলিল চালু করতে কমিটি

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: মঙ্গলবার, ৮ নভেম্বর, ২০২২ ৮:০৪ am
fertiliser Ministry of Land জমি জরিপ ভূমি মন্ত্রণালয়Urea ইউরিয়া সার Urea Fertilizer ইউরিয়া ফার্টিলাইজার সার Urea Fertilizer ইউরিয়া ফার্টিলাইজার সার
file pic

জমি রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনতে বাজারদরেই জমির নিবন্ধন বা দলিলব্যবস্থা চালু করতে একটি কমিটি করেছে সরকার।

সাত সদস্যের এ কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিবকে (কেন্দ্রীয় ব্যাংক)। কমিটির ৫ জন সদস্য হলেন ভূমি মন্ত্রণালয়, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং নিবন্ধন অধিদপ্তরের একজন করে প্রতিনিধি। সদস্যসচিবের দায়িত্ব পালন করবেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব (কেন্দ্রীয় ব্যাংক)।

এই কমিটিকে আগামী ১ ডিসেম্বরের মধ্যে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনাসহ এ বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহকে দিতে বলা হয়েছে। সোমবার আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব জেহাদ উদ্দিনের সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা এবং নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় সমন্বয় কমিটির ২৬তম সভা গত ২৯ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, জমি কেনাবেচায় মৌজাদর পদ্ধতি আর থাকবে না। এর বদলে যে দামে জমি কেনাবেচা হয়, সে দামেই হবে জমির নিবন্ধন বা দলিল। বাজারমূল্যে জমির কেনাবেচার বিষয়ে একটি কার্যকর নতুন পদ্ধতি বের করার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

ওই সভার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে গত রোববার বাজারদরেই জমির দলিলব্যবস্থা বাস্তবায়নসংক্রান্ত একটি সভা হয়। সেই সিদ্ধান্তের আলোকেই সোমবার এই কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কমিটিতে সদস্য হিসেবে কাদের নাম রাখা হবে তা চূড়ান্ত করে জরুরি ভিত্তিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠাতে এনবিআর চেয়ারম্যান, ভূমিসচিব, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক সচিব, বিএফআইইউ-এর প্রধান কর্মকর্তা, নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একান্ত সচিব, সিনিয়র সহকারী সচিব (কেন্দ্রীয় ব্যাংক) এবং যুগ্ম সচিবকে (কেন্দ্রীয় ব্যাংক) অনুরোধ করা হয়েছে।

কমিটির কার্যপরিধি

জমি রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাজারমূল্যে জমি কেনাবেচার পদ্ধতি বাস্তবায়নের জন্য নিবন্ধন অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহপূর্বক কমিটিকে সরবরাহ করবে। কমিটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনাসহ একটি প্রতিবেদন প্রণয়ন করবে। কমিটি প্রয়োজনীয়সংখ্যক সভা আয়োজন করবে এবং ১ ডিসেম্বরের মধ্যে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনাসহ এ বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের কাছে জমা দেবে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নিবন্ধন অধিদপ্তর কমিটিকে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করবে এবং বিএফআইইউ কমিটিকে সার্বিক সহায়তা প্রদান করবে।

২৯ আগস্টের সভায় অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘উচ্চমূল্যের জমি অনেক কম মূল্যে দেখানোয় বিপুল পরিমাণ বৈধ অর্থ অবৈধ হয়, যা কি না পরে বিদেশে পাচারও হয়। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অনেক বৈঠক করলেও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধার করে আনার চেয়ে পাচার রোধ করা ভালো। জমি নিবন্ধন বাজারভিত্তিক হলে মানি লন্ডারিং বা মুদ্রা পাচার কমে আসবে।’

ওই বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছিলেন, ‘জমি নিবন্ধনের সময় প্রকৃত মূল্য না দেখানোর কারণে অনেক সময় বৈধ অর্থ অবৈধ হয়ে যায়। বাজারভিত্তিক লেনদেনের মাধ্যমেই এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।’

জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ বলেন, ‘কমিটির প্রতিবেদন পাওয়া গেলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

বাস্তবের চেয়ে দাম অনেক কম দেখিয়ে জমি কেনাবেচা বা নিবন্ধন করা হয়। বর্তমানে মৌজাদর (রেট) অনুযায়ী জমি কেনাবেচা বা নিবন্ধন করা হয়। মৌজাদর মানে হচ্ছে সর্বনিম্ন দর, অর্থাৎ মৌজাদরের চেয়ে কম দাম দেখিয়ে কেউ জমি কেনাবেচা করতে পারবেন না। মৌজাদর নির্ধারণের কাজটি হয় ‘সর্বনিম্ন বাজারমূল্য বিধিমালা’ অনুযায়ী। সারা দেশের বিভিন্ন এলাকার মৌজাদর সর্বশেষ নির্ধারণ করা হয় ২০১৬ সালে, এখনো সেই দরে নিবন্ধন চলছে।

বিধিমালা অনুযায়ী, বাজারমূল্য নির্ধারণ করে একটি কমিটি। কমিটির মাধ্যমে দুই বছর পরপর বাজারমূল্য হালনাগাদ করা হয়। এ ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময়ে (২২ মাস) দলিলে উল্লেখ করা দামের গড় করে নতুন দর নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। পরে এর ভিত্তিতে মৌজাদর চূড়ান্ত করেন ভূমি নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক।

নিবন্ধন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার গুলশান সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ের অধীন মৌজা আছে ১৪টি। এ ১৪ মৌজায় ৮ ধরনের জমি আছে। মৌজাদর অনুযায়ী ধরনভেদে এ এলাকার ১ শতাংশ জমির দাম ১ লাখ থেকে ৫৮ লাখ টাকা। কিন্তু গুলশানের কোথাও ১ কোটি টাকার নিচে ১ শতাংশ জমি কেনাবেচা হয় না। ধানমন্ডি এলাকার মৌজাদর অনুযায়ী ১ শতাংশ জমির দাম ৪৩ লাখ ৯৩ হাজার ৩০০ টাকা। কিন্তু বাস্তবে ধানমন্ডির কোথাও এ দামে জমি বেচাকেনা হয় না।

জমি নিবন্ধনে বর্তমানে স্ট্যাম্প ডিউটি দেড় শতাংশ, নিবন্ধন মাশুল ১ শতাংশ, স্থানীয় সরকার কর ৩ শতাংশ এবং এলাকাভেদে ১ থেকে ৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) দিতে হয়। আবার কোনো প্রতিষ্ঠানের জমি-ফ্ল্যাট কেনাবেচা হলে যোগ হয় আরও ৪ শতাংশ উৎসে কর।

অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, জমি নিবন্ধন থেকে সরকার বছরে ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে। বাজারমূল্য পদ্ধতি করা হলে এ খাত থেকে সরকারের আয় বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত এ বিষয় নিয়ে ৪টি বৈঠক করলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। জমির প্রকৃত বাজারদর ও মৌজাদরের তারতম্য দুর্নীতিকে উৎসাহিত করে জানিয়ে ২০২০ সালের ২৩ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে একটি চিঠি দিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এতে বাজারমূল্য নির্ধারণ বিধিমালা সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছিল।

অর্থমন্ত্রী গত ১৫ জুন সরকারি ক্রয় কমিটির বৈঠকের পর সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, বর্তমানে প্রতিটি মৌজার জন্য দাম ঠিক করে দেয়া আছে, এর চেয়ে বেশি দামে নিবন্ধন করা যাবে না। কালো টাকা সেখানেই সৃষ্টি হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে বাজারভিত্তিক জমি নিবন্ধন পদ্ধতির কোনো বিকল্প নেই। কাজটা করার বিষয়ে আমরা এবার বদ্ধপরিকর। এতে সরকারের আয় বাড়বে, মানুষের ভোগান্তি কমবে এবং অপ্রদর্শিত আয়ের উৎস কমবে।’




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD