আমদানি ব্যয় বাবদ এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দেনা পরিশোধের পর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও কমে গেছে। সোমবার আকুর দেনা বাবদ ১৩৬ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। ফলে রিজার্ভ কমে তিন হাজার ৪৪০ কোটি ডলারে বা ৩৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে গেছে। বৃহস্পতিবার রিজার্ভ ছিল তিন হাজার ৫৭৫ কোটি ডলার। এছাড়াও আমদানি ব্যয় মেটাতে ব্যাংকগুলোকে ডলারের জোগান দেওয়া হয়েছে। যে কারণে রিজার্ভ কমেছে। তবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এখনো দেনা সমন্বয় করা হয়নি। আজ এটি সমন্বয় করা হতে পারে। সমন্বয় হলেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ওই ডলার বাদ দেবে।সূত্র জানায়, আকুর সদস্য দেশগুলো দুই মাসের বাকিতে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য সম্পন্ন করে। দুই মাস পরপর দেনা পাওয়া সমন্বয় করে। এবার সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসের দেনা সমন্বয় করা হয়েছে। আকুতে নয়টি দেশ বাকিতে লেনদেন করে। দেশগুলো হচ্ছে-বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, মালদ্বীপ, ভুটান, শ্রীলংকা, মিয়ানমার ও ইরান।
আকুর সদস্য দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ প্রতি মাসেই রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি করে। এ কারণে প্রতি কিস্তিতেই দেনা শোধ করতে হয়। এবার শোধ করা হয়েছে ১৩৬ কোটি ডলার। গত জুলাই আগস্টের দেনা গত সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পরিশোধ করা হয়েছিল ১৭৩ কোটি ডলার। ওই দেনা পরিশোধের পর রিজার্ভ ৩৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে গিয়েছিল। এবার আমদানি কমায় দেনা অনেক কমেছে। কারণ ডলার সঙ্কটের কারণে আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করায় আমদানি কমেছে। এ কারণে দেনাও কমেছে।সূত্র জানায়, আকুর দেনা বাবদ এক সঙ্গে বেশি পরিমাণ ডলার পরিশোধ করতে হয় বলে রিজার্ভের ওপর চাপ পড়ে। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে আকুর দেনা শোধের পর রিজার্ভ বেশি কমে যাচ্ছে। আগে কমে গিয়ে আবার বেড়ে যেত। এখন কমছে, কিন্তু বাড়ছে না।
এদিকে রিজার্ভ বাড়ার প্রধান দুটি উপকরণ রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ দুটোই কমেছে। গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর দুই মাসেই এ দুই খাতে আয় কম হয়েছে। এতে রিজার্ভের ওপর চাপ বেড়েছে। গত অক্টোবরে রেমিট্যান্স কমেছে সাড়ে ৭ শতাংশ ও রপ্তানি আয় কমেছে প্রায় ৮ শতাংশ। এদিকে বৈদেশিক বিনিয়োগেও মন্দা। বৈদেশিক অনুদানও ছাড় হচ্ছে কম। আমদানি বাড়ার হার কমলেও গত সেপ্টেম্বরে বেড়েছে প্রায় তিন শতাংশ। সব মিলে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের চেয়ে ব্যয় হচ্ছে বেশি। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার চলতি হিসাবে ঘাটতি বেড়েই যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই সেপ্টেম্বরে এ হিসাবে ঘাটতি বেড়ে ৩৬১ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ ঘাটতি ছিল ২৫৪ কোটি ডলার।
রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি বাড়ায় বাণিজ্য ঘাটতি হচ্ছে। তবে সম্প্রতি আমদানি কমায় এ ঘাটতি কিছুটা কমেছে। গত অর্থবছরের জুলাই আগস্টে এ ঘাটতি ছিল ৪৫৫ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এ ঘাটতি বেড়ে ৪৩০ কোটি ডলার হয়েছে।আইএমএফের নিরাপদ মান অনুযায়ী কমপক্ষের তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। এই রিজার্ভ দিয়ে চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। তবে আমদানি কমলে পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। তবে নিট হিসাবে রিজার্ভ আরও কম। এর পরিমাণ দুই হাজার ৭০০ কোটি ডলার হবে।