শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৪০ অপরাহ্ন




দেশে ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি ডায়াবেটিস রোগী

দেশে ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি ডায়াবেটিস রোগী: দেশে ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি ডায়াবেটিস রোগী

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: সোমবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২২ ৬:১৬ am
Diabetes World Diabetes Day Diabetes World Day ডায়াবেটিস ইনসুলিন হরমোন নিঃসরণ
file pic

বাংলাদেশে দিন দিন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে ডায়াবেটিস এখন মহামারি হয়ে উঠছে। সারা বিশ্বে এটি একটি আতঙ্কের নাম হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখের উপরে বলে ধারণা দিয়েছে আইডিএফ নামের আন্তর্জাতিক একটি সংস্থা। এদের মধ্যে ৫৯ লাখেরও বেশি রোগী (প্রায় ৪৫ শতাংশ) ডায়াবেটিস-সেবার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি। টাইপ-২ ডায়াবেটিসের সংখ্যা শতকরা ৯৫ ভাগ। তবে সচেতন হলে এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা জানা থাকলে ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। নিয়ন্ত্রণে না রাখলে জটিলতা তৈরি হতে পারে রোগীর। পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ১০০ জনের মধ্যে ২৬ জন মহিলাই গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। যাদের ৬৫ শতাংশই পরবর্তীকালে টাইপ-২ ডাযাবেটিসে আক্রান্ত হয়।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস আক্রান্ত মহিলাদের ও গর্ভস্থ শিশুদের টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তা ছাড়া গর্ভকালীন ডায়াবেটিস যদি নিয়ন্ত্রণ করা না হয় তবে তাদের পরবর্তী সময়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। বছরে এই রোগে প্রায় এক লাখ লোক মারা যাচ্ছে।

আান্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের (আইডিএফ, ২০২১ সালের এটলাসের ১০ম সংস্করণ) হিসাব মতে, বর্তমানে বিশ্বে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৫৪ কোটি। ডায়াবেটিস যেহেতু বহুলাংশেই (৭০ শতাংশ পর্যন্ত) প্রতিরোধযোগ্য, ফলে এখনই যদি এ রোগের প্রতিরোধ না করা হয়, তাহলে এই সংখ্যা ২০৪৫ সাল নাগাদ প্রায় ৭৮ কোটিতে পৌঁছানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখের উপরে বলে ধারণা আইডিএফ ডায়াবেটিস এটলাসের দশম সংস্করণে। যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদেরকে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়ে সচেতন করা এবং যাদের এখনো ডায়াবেটিস হয়নি তাদেরকে ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সচেতন করে তোলাই এখন মূল লক্ষ্য।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশসহ সব উন্নয়নশীল দেশে খুব দ্রুত নগরায়ণ হচ্ছে। মানুষের দৈহিক ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে আনুপাতিক ও কাক্সিক্ষত হারের চেয়ে বেশি, মানুষের দৈহিক শ্রম দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে মানসিক চাপ বেড়েছে অনেকগুণ। উন্নত দেশগুলোতে ডায়াবেটিস রোগীর হার কমলেও তবে তা খুব উল্লেখযোগ্য হারে নয়।

বিশেষজ্ঞরা জানান, ডায়াবেটিস এমন এক রোগ, স্বাস্থ্য শিক্ষাই যার প্রধান চিকিৎসা। যথাযথ স্বাস্থ্য শিক্ষা পেলে একজন ডায়াবেটিক রোগী চিকিৎসকের ওপর নির্ভর না হয়ে এ রোগ ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। সারা বিশ্বেই ডায়াবেটিস এখন মহামারি আকার ধারণ করেছে। তবে, উন্নত বিশ্বের তুলনায় উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশে ডায়াবেটিক রোগীর বৃদ্ধির হার বেশি। ডায়াবেটিস সম্পর্কে অসচেতনতার কারণে ডায়াবেটিসজনিত জটিলতায় প্রতিবছর মৃত্যুবরণ করছে অসংখ্য মানুষ।

এ বিষয়ে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি এবং জাতীয় অধ্যাপক একে আজাদ খান বলেন, দেশে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ৯৫ শতাংশ। তবে নিজেরা সচেতন হলে ৮০ শতাংশ প্রতিরোধ করা সম্ভব। নিয়ন্ত্রণ না রাখলে জটিলতা তৈরি হবে। তিনি বলেন, ডায়াবেটিস সব বয়সেই হতে পারে। তবে বয়স বাড়লে এই সংখ্যাও বেড়ে যায়। তিনি আরও বলেন, তাদের গবেষণা বলছে করোনাকালে ডায়াবেটিস ছিল নিয়ন্ত্রণহীন।

বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির মহাসচিব মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন বলেন, ডায়াবেটিস চিকিৎসার খরচ বিশ্বব্যাপী যেভাবে বাড়ছে তাতে উন্নত বিশ্বের মানুষও হিমশিম খাচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা প্রতিরোধের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। জন্মের সময় যেসব বাচ্চার ওজন আড়াই কেজির কম সেসব শিশুদের টাইপ-১ ডায়াবেটিস হয়। তাই বিয়ের আগে আমরা ডায়াবেটিসসহ বেশ কিছু পরীক্ষা করে নিতে পরামর্শ দেই। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ড্রাফট করা সচেতনতামূলক বার্তা সব মসজিদের ইমামকে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীরা যেন প্রয়োজনীয় সব ওষুধ কম দামে পেতে পারেন সেই উদ্যোগও নিতে হবে। তিনি বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে জীবনযাপন পদ্ধতি ও খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপক পরিবর্তনের কারণে ডায়াবেটিস মহামারি আকার ধারণ করছে। ডায়াবেটিস যে হারে বাড়ছে তাতে আমাদের এখনই এ রোগ প্রতিরোধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। আর যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের সচেতন করে তুলতে হবে, যাতে তারা ডায়াবেটিসকে সুনিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ, স্বাভাবিক ও কর্মঠ জীবন নিশ্চিত করতে পারে। ঘন ঘন ডায়াবেটিস পরীক্ষা করাতে হবে। এক পর্যায়ে পৌঁছলে অনেক জটিল রোগের কারণ হয়ে উঠতে পারে ডায়াবেটিস। তিনি জানান, সারা দুনিয়ার অর্ধেক রোগী জানে না তার ডায়াবেটিস হয়েছে।

বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি (বাডাস) সূত্র জানায়, টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগী বেশি। প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ। শতকরা ৭০ ভাগেরও বেশি প্রতিরোধযোগ্য। প্রাথমিকভাবে ডায়াবেটিস প্রতিরোধের লক্ষ্যে বাডাস কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি বাডাস করপোরেটভিত্তিক ডায়াবেটিস প্রতিরোধ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এই কর্মসূচির অধীনে বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে স্বল্পমূল্যে ডায়াবেটিস নির্ণয় ও প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যশিক্ষা দেয়া হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এন্ডোক্রাইনোলজি (ডায়াবেটিস ও হরমোন) বিভাগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে আশির দশকে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ছিল যেখানে মাত্র ২ শতাংশ এটি এখন শুধু ঢাকা শহরেই প্রায় ১০ শতাংশ ছুঁয়েছে এবং গ্রামাঞ্চলে ৮ শতাংশ। এ প্রসঙ্গে ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ বিএসএমএমইউ’র এন্ডোক্রাইনোলজি (ডায়াবেটিস ও হরমোন) বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে আশির দশকে যেখানে মোট ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ২ শতাংশ, সেখানে এখন গ্রামাঞ্চলেও ডায়াবেটিসের সামগ্রিক প্রবণতা ৮ শতাংশের মতো। এভাবে ক্রমশ ডায়াবেটিস বাড়তে থাকলে শুধু ডায়াবেটিসের কারণেই দেশের অর্থনৈতিক ভারসাম্য হবে মারাত্মক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। তাছাড়া, ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যার কারণে দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেয়ে হার্ট অ্যাটাক, কিডনি ফেইলিউর, অন্ধ হয়ে যাওয়া, পায়ে পচন, এমনকি পা কেটে ফেলা পর্যন্ত লাগতে পারে। এত বড় বৈশ্বিক এই স্বাস্থ্য সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধে দরকার জনসচেতনতা এবং জনসম্পৃক্ততা। সময়মতো ইন্টারভেনশন (খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রার পরিবর্তন), নিয়মিত হাঁটার মাধ্যমে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ সম্ভব বলে জানান তিনি।

ডায়াবেটিসের চিকিৎসার জন্য একজন রোগীর মাসিক গড় প্রায় ২ হাজার টাকা খরচ করতে হয় বলে বাংলাদেশে ডায়াবেটিক এসোসিয়েশনের এক গবেষণায় উঠে এসেছে। বাংলাদেশে যারা ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসা নেন তাদের মধ্যে শতকরা প্রায় ৭২ ভাগ ট্যাবলেট খান এবং প্রায় ১৭ ভাগ ইনসুলিন নেন। বাকি ১১ শতাংশের দুটোই প্রয়োজন।

এদিকে, ডায়াবেটিস প্রতিরোধে জাতীয় নীতিমালার একটি খসড়া তৈরি করে তা সরকারের কাছে হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি (বাডাস)। গত ১২ বছরের বেশি সময়ে ডায়াবেটিস রোগ নিয়ে মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া খসড়া নীতিমালা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। বাডাস’র সভাপতি অধ্যাপক একে আজাদ খান বলেন, বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগী বাড়ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া নীতিমালা কিছুটা বাস্তবায়ন হলেও পুরোপুরি করা হয়নি।

এ পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগে আজ দিবসটি পালন করা হচ্ছে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে- ‘আগামীতে নিজেকে সুরক্ষায় ডায়াবেটিসকে জানুন’।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD