বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতি কেউ থামাতে পারবে না মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘সেজন্য ঐক্যবদ্ধভাবে বিশ্বমন্দার প্রভাব মোকাবেলা করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।মঙ্গলবার ফায়ার সার্ভিস সপ্তাহ-২০২২ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।শেখ হাসিনা গণভবন থেকে মিরপুরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত মূল আয়োজনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
এসময় ‘উন্নয়নের গতি কিছুটা হলেও শ্লথ হয়ে গেছে’ বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘একদিকে করোনাভাইরাসের অভিঘাত, অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে নিষেধাজ্ঞা। যার ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। এই মন্দা মোকাবেলার জন্য আমাদেরও প্রস্তুতি নিতে হবে।’
বক্তৃতাকালে কৃষি উৎপাদনে গুরুত্বারোপের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি ফায়ার সার্ভিসকে অনেক জমি দেওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘যার যেখানে কর্মস্থল এবং যার যেখানে খালি জমি আছে, সেখানে আপনারা বৃক্ষ রোপণ করবেন। নিজেদের চাহিদা নিজেরা পূরণ করার চেষ্টা করবেন, যাতে বিশ্বের এই মন্দাটা আমাদের দেশে না পড়ে।’
প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নকে একটি ধারাবাহিক ও চলমান প্রক্রিয়া বলে মন্তব্য করেন। বর্তমান সরকার একটানা ক্ষমতায় আছে বলে উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়েছে- এমন মন্তব্যও করেন তিনি।বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা এই মর্যাদাটাকে বাস্তবায়ন করা, ধরে রাখার ওপর জোর দেন। বলেন, ‘এ মর্যাদা নিয়ে আমরা ২০৪১ সালের বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব। এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা, এটাই আমাদের প্রত্যয় এবং লক্ষ্য।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশিক্ষিত ও দক্ষ ফায়ার ফাইটার গড়ে তোলাই সরকারের লক্ষ্য- উল্লেখ করে বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসে প্রশিক্ষণ ও আধুনিক যন্ত্রপাতি যোগ হয়েছে।’এসময় অগ্নিনির্বাপণকারীদের ‘দুঃসময়ের বন্ধু’ বলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা।সরকার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে পূর্ণ সক্ষমতার সর্বোচ্চ সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্সকে সম্পূর্ণ সক্ষমতার সাথে সর্বোচ্চ সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানের (ফায়ার সার্ভিস) সক্ষমতা, সেবার ক্ষেত্র এবং কর্তব্যরতদের মর্যাদাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। কারণ আগুন লাগলে বা কোনো দুর্ঘটনা বা ভূমিকম্প বা কোনো কিছু ঘটলে অথবা কোনো ভবন ধসে গেলে ফায়ার সার্ভিসই সকলের আগে ছুটে যায়। এমনকি কোনো জাহাজ বা লঞ্চ যখন দুর্ঘটনায় পড়ে তখনও এই ফায়ার সার্ভিসকেই আমরা পাই। তাই তাদেরকে আরও যুগোপযোগী করা একান্ত প্রয়োজন।’
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জানান, এর সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সেবার ক্ষেত্র আরো সম্প্রসারণে বিভিন্ন পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়েছে।তিনি বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস সম্পূর্ণ সক্ষমতার উচ্চ ক্ষমতার সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে যাতে রূপান্তরিত হয় সেই ব্যবস্থাই আমরা গ্রহণ করেছি। প্রতিটি উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠার যে ঘোষণা আমরা দিয়েছিলাম তা এখন শেষ পর্যায়ে। যারা এই কাজে সম্পৃক্ত তারা যেন উন্নত মানের প্রশিক্ষণ ও যন্ত্রপাতি পান সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বঙ্গবন্ধু ফায়ার একাডেমী প্রতিষ্ঠারও উদ্যোগ নিয়েছি।’প্রধানমন্ত্রী সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে সাম্প্রতিক বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে কর্তব্যপালনকালে নিহত ৩০ জন অগ্নিনির্বাপণ কর্মীকে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সেবার সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিপুল পরিমাণ উন্নত, আধুনিক, প্রযুক্তি সুবিধা সম্বলিত বিশ্বমানের অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার সরঞ্জাম সংগ্রহ করেছি। সর্বশেষ আমরা বিশ্বের সর্বাধিক উচ্চতার ৬৮ মিটারের লেডার সম্বলিত টিটিএল গাড়ি ফায়ার সার্ভিসের বহরে যোগ করেছি। ৬৮ মিটারের ৫টি গাড়ি ক্রয় করা হয়েছে। এছাড়া এ অর্থবছরেই ১১টি টার্নটেবল লেডার (টিটিএল) ক্রয়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ২টি রিমোট কন্ট্রোল ফায়ার ফাইটিং ভেহিক্যাল দেয়া হয়েছে। নদীপথে সক্ষমতা বাড়াতে ২৪টি রেসকিউ বোট ও ১০টি ফায়ার ফ্লোট কেনা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও নিরাপত্তা সেবা বিভাগের সচিব আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য দেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন।প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ১৩ জন অগ্নিবীরের পরিবারসহ ৪৫ জন দমকল কর্মীর হাতে ৪টি কাটাগরিতে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স পদক-২০২২ তুলে দেন। প্রধানমন্ত্রী বাহিনীর কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন এবং রাষ্ট্রীয় সালাম গ্রহণ করেন।মঙ্গলবার ‘দুর্ঘটনা-দুর্যোগ হ্রাস করি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ি’ প্রতিপাদ্য নিয়ে সারা দেশে শুরু হয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ-২০২২।