ব্যাংকে অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগের দিকে ইঙ্গিত করে হাইকোর্ট বলেছে, সব ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে, আমরা কি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখব! এটা কি হয়?
এসব কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নে তুলে আদালত বলেছে, আমরা যেন নাটক দেখছি। হাততালি ছাড়া আর কী আছে, না হয় বসে থাকতে হবে।
আলোচিত বেসিক ব্যাংকের অর্থপাচারের মামলার আসামি মোহাম্মদ আলীর জামিন প্রশ্নে দেয়া রুলের শুনানির সময় বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ কথা বলে।
পরে আদালত দুদক পক্ষের বক্তব্য শুনতে এবং এ বিষয়ে রায়ের জন্য মঙ্গলবার দিন ঠিক করে দেয়।
আদালতে মোহাম্মদ আলীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. জোবায়দুর রহমান। দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।
শুনানির সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. জোবায়দুর রহমান বলেন, ‘পাঁচ বছর পার হয়ে গেলেও দুদক এ মামলায় চার্জশিট দিচ্ছে না। বিচারও শেষ হচ্ছে না। আমার মক্কেল মাত্র একজন কেরানি হিসেবে কাজ করেছেন। তার অপরাধ কী দুদক সেটিও সুনির্দিষ্ট করতে পারেনি।’
এ সময় বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, ‘আমরা তো মনে হয় নাটক দেখছি। নাটক দেখে হাততালি ছাড়া আর তো কিছু দেয়ার নাই। হয় হাততালি দিতে হবে, না হলে বসে থাকতে হবে।’
বিচারক বলেন, ‘জজ, আইনজীবী আর যে লাখ লাখ চোখ চেয়ে আছে। কেউ কোনো কাজ করতে পারছেন না। কেন সবাই নিরব। সব ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে, আমরা কি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখব!’
পরে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান আদালতের বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য সময় প্রার্থনা করেন। আদালত মঙ্গলবার দুদকের আইনজীবীর বক্তব্য শেষে রায়ের জন্য দিন ঠিক করে দেয়।
বেসিক ব্যাংকের দুই হাজার ৭৭ কোটি আত্মসাতের ঘটনায় আলামত চেয়ে মালয়েশিয়ায় অনুরোধ পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন- এমনটি জানিয়ে সোমবার হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করে দুদক।
এ ঘটনায় করা ৫৬ মামলার মধ্যে ১২ মামলার আসামি, ব্যাংকটির সাবেক কর্মকর্তা মোহম্মদ আলীর জামিন শুনানিতে গত ৮ নভেম্বর হালনাগাদ তথ্য চেয়েছিল হাইকোর্ট। সে অনুসারে এ প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়।
আত্মসাত করা অর্থের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বেসিক ব্যাংক লিমিডেটের বিভিন্ন শাখা থেকে ২ হাজার ৭৭ কোটি ৩৪ লাখ ২ হাজার ৯৯১ টাকা, যা সুদসহ ২ হাজার ৫৯০ কোটি ৪৯ লাখ ৯১ হাজার ৪৫৩ টাকা আত্মসাতের দায়ে দুর্নীতি দমন কমিশন প্রাথমিক অনুসন্ধান করে মোট ৫৬টি মামলা করেছে।
এতে বলা হয়, মামলার তদন্ত দীর্ঘায়িত হওয়ার অন্যতম কারণ হলো আত্মসাৎ করা অর্থ সম্পূর্ণরূপে নগদে উত্তোলনের মাধ্যমে টাকার অবস্থান গোপন করা হয়েছে। মামলায় গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের শনাক্ত করা ও তাদের জবানবন্দি গ্রহণ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। সব সাক্ষীর কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া প্রকৃত আসামিদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়াও বেশ জটিল। মামলার প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহের জন্য মালয়েশিয়ায় এমএলএআর করা হয়েছে। সে সংক্রান্ত প্রতিবেদন ও আলামত এখনও পাওয়া যায়নি।
আত্মসাৎ করা অর্থের মধ্যে ১১৫.৭৮ কোটি টাকা উদ্ধার বা ব্যাংকে জমা করা হয়েছে বলেও জানানো হয় প্রতিবেদনে।