বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ১১:০৪ পূর্বাহ্ন




আদায় অযোগ্য খেলাপি ঋণের বোঝা আরও বাড়লো

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২২ ৫:৪৭ am
money laundering illegal process money generated criminal drug trafficking terrorist funding illegally concealing illicit drug trafficking corruption embezzlement gambling converting legitimate source crime jurisdictions আমদানি ওভার ইনভয়েসিং রপ্তানি আন্ডার-ইনভয়েসিং আমদানি-রপ্তানি অবৈধ জাল অর্থ পাচার জিএফআই মানি লন্ডারিং আর্থিক খাত গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বিএফআইইউ হুন্ডি অর্থ পাচার Per capita income মাথাপিছু আয় Reserves Reserve রিজার্ভ remittance রেমিট্যান্স প্রবাসী আয় ডলার dollar Pagla Mosque পাগলা মসজিদ কোটি টাকা
file pic

ব্যাংক খাতের জন্য দীর্ঘদিন থেকে বাড়তি চাপ হয়ে দাঁড়ানো বিপুল খেলাপি ঋণের মধ্যে বেশি ঝুঁকি তৈরি করছে মন্দ মানে শ্রেণিকরণ করা ঋণ; এরমধ্যেই আদায় অযোগ্য এসব ঋণের পরিমাণ আরও ফুলে ওঠার তথ্য দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ পরিসংখ্যান।

গত জুন শেষে ব্যাংকগুলোতে মন্দ ঋণের পরিমাণ গিয়ে ঠেকেছে ১ লাখ ১২ হাজার ২১৯ কোটি টাকা, যা ১ লাখ ২৫ হাজার ২৭৫ কোটি টাকার মোট খেলাপি ঋণের মধ্যে ৮৯ দশমিক ৬ শতাংশ।

আর এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি হওয়া ঋণের মধ্যে আদায় অযোগ্য এমন ঋণ বেড়েছে ২৪ হাজার কোটি টাকা বা ২৭ দশমিক ২৫ শতাংশ।

ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের শ্রেণিকর‌ণের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ শ্রেণির এমন ঋণ বাড়তে থাকায় তা ব্যাংকের মুনাফা ও তারল্য ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে বলে অনেক দিন থেকে বলে আসছেন ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট এর সবশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। পরের তিন মাসে আরও ৯ হাজার কোটি টাকা বেড়ে গত সেপ্টেম্বর শেষে তা এসে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকায়। এসময়ে মোট ঋণের মধ্যে খেলাপির অংশ বেড়ে হয়েছে ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশের মত।

চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতের তথ্য নিয়ে প্রকাশিত ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্টে বলা হয়েছে, তিন মাস আগে মার্চ শেষে মোট খেলাপি ঋণের মধ্যে মন্দ মানের ঋণ ছিল ৮৮ দশমিক ৫ শতাংশ। আর ২০২১ সালের জুন শেষে যা ছিল ৮৮ হাজার ১৯৩ কোটি বা খেলাপি ঋণের ৮৮ দশমিক ৯ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ শ্রেণিকরণের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ঋণ খেলাপি হওয়ার পর আদায় অযোগ্য হওয়ার ‘পুরো লক্ষণ’ দেখা দিলে তাকে মন্দ মানের ঋণ হিসেবে ধরা হয়।

এছাড়া খেলাপি ঋণের মধ্যে সন্দেহজনক ও নিম্ন মানের শ্রেণিকরণ করা হয়। ঋণ পরিশোধ নিয়মিত হলে তাকে স্টান্ডার্ড মান হিসেবে চিহ্নিত করে ব্যাংকগুলো।

২০২১ সালের জুন শেষে খেলাপি ঋণের মধ্যে সন্দেহজনক মানের ঋণ ছিল ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। চলতি বছরের গত জুনে তা হয়েছে মোটের ৪ দশমিক ২ শতাংশ।

নিম্ন মানের বা সাব স্টান্ডার্ড মানের ঋণ ২০২১ সালের জুন শেষে ছিল মোট খেলাপির ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। চলতি বছরের জুনে তা হয়েছে ৬ দশমিক ২ শতাংশ।

স্বল্প মেয়াদী, কৃষি ও ক্ষুদ্র ঋণ ছাড়া অন্যান্য তলবি, চলতি, স্থায়ী মেয়াদী ঋণ তিন থেকে ১২ মাসের বেশি সময় পর্যন্ত আদায় না হলে সন্দেহজনক খাতে শ্রেণিকরণ করা হয়।

১২ মাসের বেশি কোনো বকেয়া ঋণ কিস্তি বা মেয়াদোত্তীর্ণ আদায় না হলে তাকে মন্দ মানের খেলাপিতে শ্রেণিকরণ করা হয়। এটিই মন্দ বা ক্ষতিজনিত ঋণ; ব্যাংকাররা ধরে নেন এ ঋণ আর গ্রাহকের কাছ থেকে নগদ অর্থে আদায় করা সম্ভব নয়। এরপর মামলা দায়েরসহ আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ প্রক্রিয়া শেষ করতে ৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায় ব্যাংকের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সময় শেষ হলেই পুরনো খেলাপি ঋণগুলো মন্দ মানে পরিণত হচ্ছে। এসময়ের মধ্যে নতুন খেলাপি যুক্ত হচ্ছে। ফলে দেখা যায় খেলাপি ঋণের সবটাই এক পর্যায়ে আদায় করা যাচ্ছে না। ঋণগুলো দেওয়ার সময়েই যথাযথ নিয়ম মেনে দেওয়া হয়নি। যে খাত দেখিয়ে ঋণ নিয়েছে সেখানে যায়নি বেশির ভাগই। সতর্ক না হওয়ায় এমন পরিণতি হচ্ছে। অন্তত বড় ঋণগুলোর সুবিধাভোগী কারা তা দেখা উচিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।

মন্দ মানের ঋণ কমিয়ে আনার বিষয়ে তার পরামর্শ, ঋণের ব্যবহার দেখতে হবে প্রতিনিয়ত। যেসব ঋণ অনিচ্ছাকৃত কারণে খেলাপি হয়েছে তাদের সম্পদ বিক্রি করে আদায় করতে হবে। আর ইচ্ছাকৃতদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে হোক। একটি দৃষ্টান্ত হওয়া প্রয়োজন। নইলে এগুলো তো থামানো যাবে না।

আদায় অযোগ্য হলেও ঋণের একটি অংশ বিভিন্ন কারণে পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন করার সুবিধা নিয়েছেন উদ্যোক্তারা। এর বাইরেও উচ্চ আদালতে রিটের দেশের ব্যাংকিং খাতের আদায় অযোগ্য এসব ঋণের প্রকৃত পরিমাণ আরও বেশি বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ঋণগুলো বিতরণের সময়ই বোঝা যায় কত অংশ আদায় হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংককে দেওয়া আইনি ক্ষমতার ব্যবহার করতে হবে পুরোটুকুই।’’

ব্যাংক খাতে আদায় অযোগ্য এসব ঋণের প্রভাব সম্পর্কে ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, এতে ব্যাংকের মুনাফার পাশাপাশি তারল্য ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা কমে যায়। খেলাপি ঋণ ব্যবস্থাপনায়ও ব্যাংকের খরচ হয়। ফলে পরিচালন ব্যয় বেড়ে যায়। এজন্য স্বাভাবজাত খেলাপিদের সংশ্লিষ্ট ভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও নতুন ঋণ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। তাদের সুবিধা দিয়ে কোনো লাভ হয় না। [bdnews]




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD