হাদিসে কুদসি: আবু যর আল গিফারি রা. থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহর নিকট থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন:
“হে আমার বান্দাগণ, আমি যাকে হিদায়াত (সঠিক পথের সন্ধান) দিয়েছি সে ছাড়া তোমরা সকলে পথভ্রষ্ট। সুতরাং তোমরা আমার কাছে হিদায়াত চাও আমি তোমাদেরকে হিদায়াত দান করব।” (সহিহ মুসলিম)
সে কারণে মহান রবের দরবারে আমাদের হিদায়াত বা সঠিক পথের সন্ধান চাওয়া করা খুব বেশি প্রয়োজন। কারণ তিনি সুপথ না দেখালে আমরা নিশ্চিতভাবে পথভ্রষ্ট, ধ্বংস প্রাপ্ত এবং অন্ধকারের অতল তলে হারিয়ে যাব। (আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করুন)।
নিম্নে কুরআন-সহিহ হাদিস থেকে হিদায়াত প্রার্থনা এবং হিদায়াত পাওয়ার পর তার উপর অবিচল থাকা সংক্রান্ত অতি গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত দশটি দু’আ উপস্থাপন করা হল:
>> দোয়া: ১
“হে আল্লাহ, আমাদেরকে সরল পথ দেখাও।”
(সূরা ফাতিহা: ৬)
>> দোয়া: ২
“হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে সুপথ, আল্লাহ ভীতি, চরিত্রের নির্মলতা ও অভাব মুক্তির প্রার্থনা করছি।”
(সুনানে তিরমিযী, হাদিসটি সহিহ)
>> দোয়া: ৩
“হে আল্লাহ, আমাকে হিদায়াত দান করো এবং আমার নফসের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করো।”
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুসাইন ইবনে আলী (রা.)-কে দুটি বাক্য দ্বারা দু’আ করতে শিখিয়েছিলেন।
(সুনানে তিরমিজি। অবশ্য এ হাদিসটিকে শাইখ আলবানি রহ. জঈফ বলেছেন [জঈফুল জামে/৪০৯৮] তবে কোনও দু’আ ভালো অর্থবোধক হলে তা জইফ সনদে বর্ণিত হলেও কোনও সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ- যেখানে নিজের ইচ্ছেমত দু’আ করার সুযোগ আছে)
>> দোয়া: ৪
‘‘হে আমার রব, আমাকে সাহায্য করো এবং আমার বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্য করো না। আমাকে সহযোগিতা করো এবং আমার বিরুদ্ধে কাউকে সহযোগিতা করো না। আমার জন্য কৌশল এঁটো, আমার বিরুদ্ধে কৌশল এঁটো না। আমাকে হিদায়াত দান করো, আমার জন্য হিদায়াতের পথ সহজতর করো এবং যে ব্যক্তি আমার উপর অত্যাচার ও সীমা লঙ্ঘন করে তার বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য করো।”
[সুনানে ইবনে মাজাহ- অধ্যায়: ২৮/ দু’আ, পরিচ্ছেদ: ২৮/২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দু’আ-সহিহ]
>> দোয়া: ৫
“হে আল্লাহ, জিবরিল, মিকাইল ও ইসরাফিলের প্রভু, আসমান-জমিনের মালিক, দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান সবকিছুর ব্যাপারে সম্যক অবগত, আপনার বান্দারা যে সব বিষয়ে মতবিরোধ করছে আপনি তাতে ফয়সালা করেন। হকের যি বিষয়ে মতবিরোধ দেখা যায় সে বিষয়ে আপনার অনুমতিক্রমে আমাকে সঠিক পথ দেখান। নিশ্চয় আপনি যাকে ইচ্ছা তাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেন।”
(সহিহ মুসলিম)
>> দোয়া: ৬
“হে আল্লাহ, আমাকে হিদায়াত দান কর, আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত কর। হে আল্লাহ! তোমার নিকট হিদায়াত ও সঠিক পথ কামনা করছি।”
[সহিহ মুসলিম]
>> দোয়া: ৭
“হে আল্লাহ, আমাকে স্থির রাখুন ও হিদায়াতকারী ও হিদায়াতপ্রাপ্ত বানান ”
[সহিহ মুসলিম]
>> দোয়া: ৮
“হে আল্লাহ! তুমি যাদেরকে হিদায়াত করেছ, আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত কর। তুমি যাদেরকে নিরাপদ রেখেছ আমাদেরকে তাদের দলভুক্ত কর।
তুমি যাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছ, আমাদেরকে তাদের দলভুক্ত করো। তুমি আমাদেরকে যা দিয়েছ তাতে বরকত দাও।
তুমি যে অমঙ্গল নির্দিষ্ট করেছ তা হতে আমাদেরকে রক্ষা করো। নিশ্চয় তুমিই ফয়সালা করো; তোমার ওপরে ফয়সালা করার কেউ নেই। তুমি যার অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছ, সে কোনও দিন অপমানিত হবে না এবং তুমি যার সাথে শত্রুতা করেছ, সে কখনো সম্মানিত হতে পাবে না। হে আমাদের রব, তুমি বরকতময় ও সুমহান। তোমার পাকড়াও থেকে বাঁচার উপায় নাই তোমার আশ্রয় ছাড়া।”
হাসান বিন আলি রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বিতর সলাতে বলার জন্য এ দু’আটি শিখিয়েছেন।”
[তিরমিযী, ইরওয়াউল গালীল গ্রন্থে (হা/ ৪২৯), শাইখ আলবানি এটিকে সহীহ বলেছেন]
>> দোয়া: ৯
হিদায়াত লাভের পর অন্তরের বক্রতা হতে মুক্তি চাওয়ার দু’আ:
“হে আমাদের রব! আপনি হিদায়াত দেয়ার পর আমাদের অন্তরসমূহ বক্র করবেন না এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন।”
>> দোয়া: ১০
হিদায়াত পাওয়ার পর তার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার দোয়া:
“হে হৃদয়সমূহের পরিবর্তনকারী, আমাদের হৃদয়গুলোকে আপনার আনুগত্যের দিকে ঘুরিয়ে দিন।”
(সহিহ মুসলিম)
“হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর সুদৃঢ় করে দাও।”
(তিরমিযি, সহিহুল জামে/৭৯৮৭)
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
IFM desk