আগামী ১০ই ডিসেম্বর রাজধানীতে বিএনপি’র সমাবেশকে কেন্দ্র করে সতর্ক অবস্থানে পুলিশ। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী চলতি মাসের শুরু থেকে রাজধানীর আবাসিক হোটেলগুলোতে কক্ষ ভাড়া দিতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। রাজধানীর পল্টন, দৈনিক বাংলার মোড়, মতিঝিল, গুলশান, বনানী, গ্রীন রোড, তেজগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত হোটেল ও মেসবাড়িতে পুলিশ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে।
এক্ষেত্রে হোটেলের বোর্ডারদের ব্যাগ তল্লাশি এবং তারা কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত কিনা এসব বিষয় জেনে হোটেল ভাড়া দেয়া হচ্ছে। হোটেলগুলোর এমন কড়াকড়িতে ভোগান্তিতে পড়েছেন বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীতে আসা রোগী এবং সাধারণ মানুষ।
পাশাপাশি কিছু হোটেল আগামী ১১ই ডিসেম্বর পর্যন্ত আগাম বুকিং করা আছে বলে জানা গেছে। সরজমিন রাজধানীর একাধিক আবাসিক হোটেল ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। রংপুর থেকে শারীরিক জটিলতা নিয়ে ঢাকায় এসেছেন ফাহিমা বেগম এবং তার স্বামী মোতালিব।
রাজধানীতে তাদের নিকটাত্মীয় বলতে কেউ নেই। গ্রিনরোডের একটি হোটেলে উঠতে গেলে সেখানে তাদের ব্যাগে থাকা কাপড়-চোপড় তল্লাশির পাশপাশি তারা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত আছেন কিনা সে বিষয়ে তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে চাওয়া হয়।
পরবর্তীতে এই দম্পতি হোটেল কক্ষ ভাড়া না নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে চলে যান।
সিলেট থেকে স্কয়ার হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে এসেছেন ৬৫ বছর বয়সী মো. ওয়াদুদ মিয়া। স্কয়ার হাসপাতালের পাসেই একটি আবাসিক হোটেলে নিয়মিত ওঠেন তিনি। কিন্তু এবার হোটেল কক্ষ ভাড়া নিতে গিয়ে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে। সঙ্গে থাকা ভাতিজা কম বয়সী হওয়ায় তাকে জেরার মুখে পড়তে হয়েছে।
কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা, কোথায় পড়ালেখা করেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র ইত্যাদি জমা দিতে বলা হয়েছে। যেখানে আগে শুধুমাত্র জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দিলেই হতো।
এ বিষয়ে কথা হয় রাজধানীর গ্রিনরোডে গ্রিনলাইফ হাসপাতালের পাশে অবস্থিত হোটেল সিটি ইন্টারন্যাশনাল রেসিডেন্সের ম্যানেজার মো. শহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, এখন আমাদের অনেক বেশি যাচাই-বাছাই করে রুম ভাড়া দিতে হয়। চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে ডিএমপি’র নির্দেশনা অনুযায়ী এটা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে আগত ব্যক্তি কোনো রাজনীতি করেন কিনা, অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কিনা এ ধরনের বিষয়গুলো যাচাই করে থাকতে দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের হোটেলটি যেহেতু হাসপাতাল এলাকায় তাই বিভিন্ন বিভাগীয় শহর থেকে আসা রোগীরাই আমাদের কাস্টমার। হাসপাতালের রোগী, ডাক্তার দেখাতে আসা এ ধরনের রোগীরা বেশি আসেন। এখন বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। আগামী ১৫ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত এভাবে যাচাই-বাছাই করে ভাড়া দেয়া হবে। শহিদুল বলেন, আমাদের এখানে প্রায় অর্ধশত রুম আছে। কিন্তু কাস্টমার কম। যাচাই-বাছাই করে রুম ভাড়া দিচ্ছি।
এক্ষেত্রে তার জাতীয় পরিচয়পত্র, ব্যাগ তল্লাশি করে, ব্যাগে কোনো বিস্ফোরক জাতীয় পদার্থ আছে কিনা, তাদের পরিবারের সদস্য এবং রেফারেন্সকৃত চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে আমরা রুম ভাড়া দিয়ে থাকি। এ ছাড়া হোটেলে প্রতিদিনই পুলিশ আসেন। এসে তারা চেক করে দেখেন কি ধরনের লোক ভাড়া দিয়েছি। হোটেল কক্ষের ভাড়া ৬শ’ থেকে শুরু করে ১৫শ’ টাকা পর্যন্ত।
মতিঝিলে অবস্থিত পূর্বাণী হোটেলের এক কর্মকর্তা বলেন, আগামী ১১ই ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের কোনো কক্ষ খালি নেই। গত ৩রা ডিসেম্বর থেকে হোটেলটির সবগুলো কক্ষ ভাড়া হয়ে গেছে। আগামী ১১ই ডিসেম্বরের আগে হোটেলের কোনো কক্ষ খালি হবে না।
হোটেল ফার্মগেটের রিসিপশনিস্ট উজ্জল বলেন, আমাদের এখানে হোটেল কক্ষ ফাঁকা আছে। তবে জাতীয় পরিচয়পত্র, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে হোটেল কক্ষ ভাড়া দেয়া হয়। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে হোটেলে আগত ব্যক্তির বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে কক্ষ ভাড়া দেয়া হয়। হোটেলের ভাড়া ১৭শ’ টাকা থেকে ৩৬শ’ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
এদিকে জঙ্গিদের উপস্থিতি আছে সন্দেহে রাজধানীর কাকলি এলাকায় একাধিক আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, ওই হোটেলগুলোতে জঙ্গিরা অবস্থান করছে। গত শনিবার রাতে বনানী থানাধীন কাকলি এলাকার আবাসিক হোটেল ইনসাফ ও পূরবীসহ কয়েকটি হোটেলে একযোগে অভিযান শুরু করে পুলিশ। এসব হোটেলের ভেতরে জঙ্গিরা অবস্থান করছে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তথ্য আছে বলে জানায়।
এ ছাড়া মতিঝিলের দৈনিক বাংলা মোড়ে হোটেল রহমানিয়াতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। দৈনিক বাংলার মোড় সংলগ্ন ওই বহুতল ভবনের ওপর তলায় আছে বার এবং আবাসিক হোটেল। সেখানে আইনশৃঙ্খলার ব্যত্যয় ঘটাতে পারেন, এমন কোনো ব্যক্তি বা অপরাধী আছে কিনা, তা নিশ্চিত হতে পুলিশের এ অভিযান।