বিশ্বকাপ ফুটবল ২০২২-এর সফল আয়োজক কাতার। এ সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২০৩৬ সালে অলিম্পিক ইভেন্ট আয়োজন করতে চায় দেশটি।
চলতি বছর ফুটবল বিশ্বকাপের ২২তম আসর বসেছে কাতারে। ইতোমধ্যে অনেক রেকর্ডের জম্ম দিয়েছে এ আয়োজন। সর্ব সম্প্রতি নকআউট পর্ব নিয়ে নতুন রেকর্ড করেছে এবারের টুর্নামেন্ট। এবারই প্রথম ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে নকআউট পর্বে ছয় মহাদেশের ১৬টি দেশ অংশ নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০৩৬ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমস দোহায় অনুষ্ঠিত হবে বলে দেশটির একটি সূত্র গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে। অলিম্পিক বাইডিংয়ের বরাত দিয়ে খবরটি প্রকাশ করেছে দোহা নিউজ।
বর্তমান ফিফা বিশ্বকাপের আয়োজন কাতারকে আত্মবিশ্বাসী করেছে এবং অলিম্পিকের মতো বড় আয়োজন করতে উৎসাহ দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) এখনও ২০৩৬ সালের আয়োজনের বিডিং নিয়ে সময়সীমা নির্দিষ্ট করেনি।
তবে দোহা আয়োজন করতে পারলে প্রথমবার কোনো মুসলিম রাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হবে অলিম্পিক গেমস। অর্থাৎ এখানেও প্রথম হতে চলেছে বলে আশাবাদী কাতারের সুপ্রিম কমিটি ফর ডেলিভারি অ্যান্ড লিগেসি। এর আগে আবহাওয়ার কারণে ২০১৬ ও ২০২০ সালের অলিম্পিক গেমসের জন্য নির্বাচিত হতে পারেনি দেশটি। গত দুই বারের আয়োজক হয় যথাক্রমে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিও ও জাপানের টোকিও।
সাধারণত ফুটবল বিশ্বকাপ হয় জুন-জুলাইয়ে। কাতারের আবহাওয়ার কারণে এ ধরাবাঁধা ছক ভাঙা হয়। জুন-জুলাইয়ে মাত্রাতিরিক্ত গরম থাকার কারণে নভেম্বর-ডিসেম্বরকে বেছে নেয়া হয়েছে। এ সময় দেশটির গড় তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রির সমান থাকে। তারপরও উপসাগরীয় দেশটি বর্তমান বিশ্বকাপ আয়োজনে সব স্টেডিয়ামে সর্বশেষ প্রযুক্তির এয়ার কন্ডিশনিং সরঞ্জাম ব্যবহার করছে। এ থেকে শিক্ষা নিয়ে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে তাপমাত্রা সহনীয় রাখতে পারবে বলে আশাবাদী কর্তৃপক্ষ। বিশ্বকাপের এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চায় অলিম্পিকে।
এর আগে ২০১৯ ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপস অনুষ্ঠিত হয় দোহায়। এ চ্যাম্পিয়নশিপস খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে সেপ্টেম্বরে শুরু হয়ে অক্টোবরে শেষ হয়। সেই থেকে আইওসি খেলার ধরনে পরিবর্তন আনছে, তারা প্রচলিত বিডিং প্রক্রিয়া থেকে সরে এসেছে এবং আগ্রহীদের মধ্য থেকে একটি নির্ভরযোগ্য ও সক্ষম শহর বেছে নেয়া শুরু করে। এ প্রক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে প্রথম অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হতে চলেছে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে (২০৩২ সালে)।
ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ কয়েকটি দেশ ২০৩৬ সালের অলিম্পিক গেমসের আয়োজক হতে চায়। আবহাওয়াজনিত কারণে জার্মানি তাদের নাম উঠিয়ে নিয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে একটি সূত্র জানিয়েছে, দেশগুলোর মধ্যে কাতার বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে। সূত্রের মতে, ফিফা বিশ্বকাপের সফল আয়োজক হওয়া কাতারে পক্ষে সহায়ক হয়েছে। দেশটি ২০০৬ সালে এশিয়ান গেমসের আয়োজন করে এবং ২০৩০ সালে আবার আয়োজন করবে।
এখানে খেলাধুলার সব ধরনের অবকাঠামো রয়েছে- স্টেডিয়াম, মেট্রো, নতুন বিমানবন্দর প্রভৃতি।
ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের আটটি স্টেডিয়ামের মধ্যে সাতটি সম্পূর্ণরূপে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নির্মাণ করেছে কাতার। তবে এসব স্টেডিয়াম নিয়মিত ব্যবহার করা যাবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাদের উল্লেখযোগ্য এসব অবকাঠামোয় অলিম্পিকের মতো বড় আসরের আয়োজন করা যুক্তিসংগত হবে।
কাতার দীর্ঘদিন ধরে আঞ্চলিক খেলাধুলার কেন্দ্র। দেশটি বৃহৎ খেলাগুলোর আয়োজন করে আসছে, এর সর্বশেষ উদাহরণ কাতার ফিফা
বিশ্বকাপ-২০২২। বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য ২০১০ সালে ফিফার সবুজ সংকেত পায় দেশটি। এ পর্যন্ত কাতারে বিশ্বকাপের আয়োজন নিয়ে সন্তুষ্ট ফিফা।
কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসের আল খাতের বলেন, ২০০৬ সালে আমরা প্রথম বড় আসর ২০০৬ এশিয়ান গেমসের আয়োজন করি। সেই থেকে এখন পর্যন্ত ৬০০টির বেশ আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক খেলাধুলার আয়োজন করেছি। এর মধ্যে ফিফা বিশ্বকাপ সর্ববৃহৎ, এর পর রয়েছে হ্যান্ডবল ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ, আইডব্লিউএফ অ্যাথলেটিকস ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ, ফর্মুলা ওয়ান প্রভৃতি।
খবর: দোহা নিউজ।