নিষ্ঠুর পেনাল্টি শুট আউট খেলার ভাগ্য নির্ধারণ করলো। কাঁদলো জাপান। হাসলো ক্রোয়েশিয়া। জাপানিরা পেনাল্টিতে যে একদম অনভিজ্ঞ তা আবারও প্রমাণিত হলো। তাদের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল। এর আগে একাধিকবার কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে যেন তারা গুটিয়ে যায়। চলতি বিশ্বকাপে জার্মানি ও স্পেনকে হারিয়ে রীতিমত চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল।
ওদিকে ক্রোয়েশিয়া ২০১৮ সনে ডেনমার্ক এবং রাশিয়াকে পেনাল্টি শুট আউটে হারিয়েছিল। জাপান ২০১০ সনে প্যারাগুয়ের কাছেও হেরে যায়। ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক ডমিনিক লিভাকোভিচ দুর্দান্ত খেলেছেন।
যেভাবে গোল পাহারা দিয়েছেন, গোলের গতিরোধ করেছেন, টাইব্রেকারে তিনটি শট নাকচ করেছেন তা স্মরণীয় বলা যায়। যদিও শটগুলো ছিল খুবই দুর্বল, অগোছালো। এতে মুন্সিয়ানার কোনো ছাপ ছিল না। বিশ্বকাপে শুট আউটে চারটির মধ্যে তিনটি শট রুখে দেয়ার ঘটনা আর কবে ঘটেছিল চটজলদি মনে করতে পারছি না।
একজন মাত্র জাপানি প্লেয়ার গোল করতে সমর্থ হন। যদিও খেলাটির ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যেত ডাইজেন মায়েদার গোলে। ছবিটা এঁকেছিলেন মায়া ইয়োশিদা। রঙ মাখিয়ে দেন সেল্টিক ফরোয়ার্ড মায়েদা। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই জাপানিদের স্বপ্নে পেরেক মেরে দেন ইভান পেরেসিচ। হেডের সাহায্যে দুর্দান্ত গোল করে সমতা নিয়ে আসেন। ১২০ মিনিট পরেও খেলার ভাগ্য অনির্ধারিতই থেকে যায়। এরপর পেনাল্টি শুট আউটে যায়।
এতে ৩-১ ব্যবধানে জয় পায় ক্রোয়েশিয়া। নিজেদের প্রথম চার শটের তিনটিই মিস করে জাপান। টাইব্রেকারে প্রথম শট নেন জাপানের তাকুমি মিনামিনো। লিভাকোভিচ যেন আগেই বুঝে গিয়েছিলেন কোন দিকে যাবে শট। মিনামিনোকে আটকাতে খুব একটা কষ্ট করতে হয়নি ক্রোয়েশিয়ার এই গোলরক্ষককে। পক্ষান্তরে প্রথম স্পটকিক থেকে ক্রোয়েশিয়াকে এগিয়ে নেন নিকোলা ভ্লাসিচ। জাপানের কাউরো মিতোমাকেও হতাশ করেন লিভাকোভিচ। এরপর সফল স্পট কিক থেকে ব্যবধান ২-০ বানান মার্সেলো ব্রজোভিচ। তৃতীয় শটে গোল করে জাপানের আশা জিইয়ে রাখেন তাকুমা আসানো।
পরে ক্রোয়েশিয়ার মার্কো লিভায়া মিস করলে ম্যাচে ফেরার সম্ভাবনা বাড়ে জাপানের। কিন্তু দলীয় অধিনায়ক মায়া ইয়োশিদার চতুর্থ শটও ঠেকিয়ে দেন লিভাকোভিচ। আর নিজেদের চতুর্থ শটে মারিও পাসালিচ ঠান্ডা মাথায় জালে বল পাঠিয়ে ক্রোয়েশিয়াকে পৌঁছে দেন কোয়ার্টার ফাইনালে।
এটা বলতেই হয়, খেলা দেখে মনে হয়েছে জাপানিরা ক্লান্ত, শেষ বাঁশি বাজার অপেক্ষায়। অভিজ্ঞতার কাছেই তারা আত্মসমর্পণ করেছে। এবার জাপানের সামনে ঐতিহাসিক সুযোগ এসেছিল। সে সুযোগটা হাতছাড়া হলো স্নায়ুচাপে বিধ্বস্ত প্লেয়ারদের কারণে। খেলার পরে মাঠের পরিস্থিতি কী সেটাও একটু বলে রাখি। মাঠে শুয়ে আছেন জাপানিরা। গ্যালারী ভর্তি জাপানিদের কান্না দেখে কে! রীতিমত আহাজারি।
আর আহাজারির সাক্ষী হলো কাতারের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর আল ওয়াকরাহ। আল জানুব স্টেডিয়ামটি বারবারই কেঁপেছে ফুটবল আনন্দে। স্থপতি জাহা হাদিদের চমৎকার স্থাপত্যশৈলীতে এই স্টেডিয়াম তৈরি করা হয়েছে। আগে ২০ হাজার ধারণক্ষমতা ছিল। এখন এটা বাড়িয়ে ৪৪ হাজার করা হয়েছে।
আগেই বলা হয়েছে, অল্পদিনের মধ্যেই স্টেডিয়ামটির আসন কমানো হবে। এই স্টেডিয়ামে সর্বাধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে। বিশ্বকাপের ৭টি খেলা হয়েছে এখানে। চলতি বিশ্বকাপের প্রথম শুট আউটে ইতিহাসও গড়লো স্টেডিয়ামটি।