আর দশটা দিনের চেয়ে বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকার চিত্র একদমই ভিন্ন। আগের দিন সেখানে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। পরে রাতে বিএনপি কার্যালয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। এ ঘটনায় ওই এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যে সরাসরি প্রভাব পড়েছে।
সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে নয়াপল্টন হয়ে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে পুলিশ। পলওয়েল মার্কেট, গাজী ভবন শপিং সেন্টার, সিটি হার্ট, পাইকারি মার্কেট পল্টন চায়না টাউনসহ এ সড়কের দুই পাশের সব বিপণিবিতান, বিক্রয়কেন্দ্র, দোকানপাট ও রেস্তোরাঁ বন্ধ। এ ছাড়া বিশেষ প্রয়োজনে বের হয়েছেন, এমন লোকজন ছাড়া সড়কটিতে কাউকে যেতে দিচ্ছে না পুলিশ।
ওই সড়কে ১০-১২টি ব্যাংকের শাখা আছে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ির বিক্রয়কেন্দ্র, পোশাকের পাইকারি বাজার, প্রবাসী শ্রমিক পাঠানোর কোম্পানি, রেস্তোরাঁসহ বেশ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। রাস্তা বন্ধ থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রভাব পড়েছে।
আলাপকালে ওই এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান, নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে পুলিশ তাঁদের আজ প্রতিষ্ঠান খুলতে নিষেধ করেছেন। সাধারণত মাসের শুরুর দিকে বেচাকেনা ভালো হয়। কিন্তু বিএনপির সমাবেশ নিয়ে উত্তেজনা ও পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে গত কয়েক দিনে তাঁদের ব্যবসা-বাণিজ্যে বেশ প্রভাব পড়েছে। বেচাকেনা প্রায় অর্ধেক কমে গেছে।
নয়াপল্টনে ব্যক্তিগত গাড়ির বিক্রয়কেন্দ্র চেরি অটোসের স্বত্বাধিকারী মাসুদ হাসান বলেন, ‘৫ তারিখের পর থেকে গ্রাহকের উপস্থিতি কমে গেছে। ব্যবসায়ী, ক্রেতা-সবাই আতঙ্কে আছেন। ভোরে বিক্রয়কেন্দ্র খুলতে এলে পুলিশ বলেছে, ‘এ এলাকায় নিরাপত্তার অভাব আছে। আপনারা দোকান খুইলেন না।’
ওই এলাকার একটি মিষ্টির দোকানের মালিক বলেন, ‘গতকাল সংঘর্ষ শুরু হলে তাড়াতাড়ি দোকান বন্ধ করে চলে যাই। সকালে আমি দোকানে আসতে চাইলেও পুলিশ দেয়নি। দোকানে আমার প্রায় ৪৫ হাজার টাকার মিষ্টি আছে। এগুলো সরিয়ে নিতে না পারলে পুরোটাই নষ্ট হয়ে যাবে।’
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গতকাল পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফাঁকা এই সড়কে পুলিশ সদস্যদের আনোগোনা বেশি। পরে বিকালে খুলে দেয়া হয়েছে।
নয়াপল্টনে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের অদূরেই সড়কের বিপরীত পাশে আনন্দ ভবন কমিউনিটি সেন্টারের অবস্থান। আজ রাতে সেখানে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল।
কমিউনিটি সেন্টারটির কর্মীরা জানান, সকালে অনুষ্ঠানের আয়োজকেরা রান্নার বাজার নিয়ে এসেছিলেন। তবে পরিস্থিতি দেখে অনুষ্ঠান বাতিল করে ফিরে গেছেন। শুক্র ও শনিবারেও দুটি অনুষ্ঠান আছে। সেগুলোও হয়তো হবে না।
ওই এলাকার ব্যাংকের শাখাগুলোতে গ্রাহকের উপস্থিতি কম দেখা গেছে। ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারা বলেন, আতঙ্কের কারণে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া গ্রাহকেরা আসছেন না।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক (অপারেশন) বলেন, আজ ব্যাংকের লেনদেন একদমই কম। দূর থেকে লোকজন আসছেন না বললেই চলে। আতঙ্ক থেকেই আজ গ্রাহকেরা কম আসছেন বলে মনে করছেন ওই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘ওই এলাকার ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সবাই একধরনের আতঙ্কের মধ্যে আছেন। তবে পরিস্থিতি ভালো থাকলে আগামীকাল দোকানপাট খুলতে পারে।’
রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকার বিভিন্ন ব্যাংকের শাখাগুলো বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ছিল প্রায় গ্রাহকশূন্য। বুধবার বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর আতঙ্কে আজ জরুরি প্রয়োজন না হলে কোনো গ্রাহক ওই এলাকার ব্যাংকে যাননি। নয়াপল্টন এলাকার বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অন্যান্য দিনের তুলনায় সকাল থেকে গ্রাহক উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম। তাই এদিন লেনদেন হয়েছে খুবই কম।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিন ওই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত রাস্তা পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সড়কের ভেতরে কাউকে যেতে দেওয়া হয়নি। ওই সড়কে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০-১২টি শাখা রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে ব্যক্তিগত গাড়ির বিক্রয়কেন্দ্র, পোশাকের পাইকারি বাজার, প্রবাসী শ্রমিক পাঠানোর কোম্পানি, রেস্তোরাঁসহ বেশ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। সকাল থেকে সড়কটি বন্ধ থাকায় এ এলাকায় সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। অনাহূত পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যাংকগুলো শাটার নামিয়ে ভেতরে কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।
নয়াপল্টন এলাকার বিভিন্ন শাখায় কর্মরত একাধিক ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, মূল সড়ক ও গলি রাস্তা বন্ধ থাকায় সকালে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকেই সময়মতো ব্যাংকে আসতে পারেননি। তাঁরা নিজেরাও আতঙ্কের মধ্যে আছেন।
দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা ব্যাংকের কাকরাইল শাখায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে মাত্র দুজন গ্রাহক সেবা নিতে এসেছেন। সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মাত্র পাঁচ-ছয়জন গ্রাহক ওই ব্যাংকে গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ব্যাংকটির এক কর্মকর্তা।
ঢাকা ব্যাংকে আসা গ্রাহক প্রকাশ পাল একটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘চীনের সাংহাই বন্দরে আমাদের পণ্য আছে। এখান থেকে এনওসি পাঠাতে না পারলে দু-তিন দিনের জন্য পণ্য বন্দরে আটকে থাকবে। এ জন্য ঝুঁকি আছে জেনেও নথিপত্র সংগ্রহ করতে আজকে ব্যাংকে এসেছি। আসার সময় পথে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা পথ আটকেছিলেন। পরে ব্যাংকে জরুরি কাজ আছে বলার পর আসতে দিয়েছেন।’
দুপুরে নয়াপল্টনে আল-আরাফাহ্ ব্যাংকের ভিআইপি রোড শাখা থেকে টাকা তুলতে আসেন ব্যাংকটির গ্রাহক সালেহ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমি পোশাকের ব্যবসা করি। তাই নিয়মিতই এ শাখায় আসতে হয়। অন্যান্য দিন লাইনে দাঁড়িয়ে ব্যাংকের কাজ করতে হতো। আজ মাত্র দু-তিনজন গ্রাহক ছিলেন ব্যাংকে।’