প্রতারক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-ভ্যালি, আলাদিনের প্রদীপ ও সিরাজগঞ্জ শপের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত গ্রাহকের সংখ্যাও জানতে চাওয়া হয়।
সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ই-কমার্স সেল থেকে আলাদা তিনটি চিঠি দেওয়া হয় ওই তিন প্রতিষ্ঠানকে। ব্যাংক হিসাব ও গ্রাহকের তথ্য দাখিলের জন্য ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।
প্রতারিত গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। খুব শিগগিরই পর্যায়ক্রমে অন্য প্রতারক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের হিসাব তলব করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ই-কমার্স সেলের প্রধান মুহাম্মদ সাঈদ আলী বলেন, তথ্য চাওয়া হলেও এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিষ্ঠান জবাব দেয়নি। তবে ই-ভ্যালি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আশা করছি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সব তথ্য পাওয়া যাবে।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকের হিসাবের তথ্য চাওয়ার মূল কারণ গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়া। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর টাকা ব্যাংকে থাকলে ওই টাকা গ্রাহকদের ফেরত দেওয়া হবে।
জানা গেছে, গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পণ্য দেওয়া হয়নি এমন প্রায় ৫৬১ কোটি টাকা আটকে পড়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট গেটওয়েতে। পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিয়ে ওই টাকার কিছু অংশ গ্রাহকদের ফেরত দেয়।
কেন্দ্রীয় ই-কমার্স সেলের ২৮ নভেম্বরের তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত ১৩টি প্রতিষ্ঠানের ৩৪ হাজার ৬৩৭ জন গ্রাহক ৩০২ কোটি ২১ লাখ টাকা ফেরত পেয়েছেন। কিউকম, আলিশা মার্ট, দালাল প্লাস, বুমবুম, আনন্দবাজার, থলেডটকম. ধামাকাসহ মোট ১৩টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক এই অর্থ ফেরত দেওয়া হয়। এ প্রক্রিয়া এখনো অব্যাহত আছে।
সূত্র জানায়, এরপর এখন নতুন করে প্রতারক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংকে জমানো টাকার সন্ধান পেলে সেটিও গ্রাহকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। এমন পদক্ষেপ নিয়েছে মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, সিরাজগঞ্জ শপের বিরুদ্ধে ৪৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া দেশব্যাপী প্রতারণার জাল বিছানো কোম্পানির নাম ‘আলাদিনের প্রদীপ’। কোম্পানির মালিক মেহেদী হাসান মুন আলাদিনের প্রদীপ হাতে পেলেও আর্তনাদ করছেন টাকা দিয়ে পণ্যের অপেক্ষায় থাকা ক্রেতারা। আর বিচারাধীন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের কাছ থেকে ই-ভ্যালি ১ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
সূত্র জানায়, বর্তমান ই-ভ্যালির ব্যাংক হিসাব স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ)। পুলিশের সিইডি বিভাগের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে বিএফআইইউ ই-ভ্যালির ব্যাংক হিসাব জব্ধ করেছে। ফলে ব্যাংক হিসাবের তথ্য চাওয়ার পর ই-ভ্যালি থেকে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ই-ভ্যালির পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে তাদের ব্যাংক হিসাব জব্ধ আছে। এটি খুলে দেওয়া হলে ব্যাংক হিসাবের তথ্য সরবরাহ করতে পারবে। আর এ প্রক্রিয়ার জন্য বিএফআইইউকে অনুরোধ করতে বলা হয়েছে।
এদিকে ইভ্যালি থেকে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকেরা এক টাকাও ফেরত পাননি। এমন কি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন জামিনে বেরিয়ে এসে নতুন করে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করলেও পুরোনো গ্রাহকদের অর্থ ফেরতের নিশ্চয়তা দিতে পারেননি।
ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকের টাকা ফেরতের ব্যাপারে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে শামীমা বলেন, অবশ্যই আমাদের টাকা রিফান্ডের পরিকল্পনা রয়েছে। এর জন্য আমাদের সার্ভার ওপেন করে দিতে হবে। সার্ভার ওপেন না করলে এটা সম্ভব হবে না। এ জন্য অ্যামাজনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে হবে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের এমডি মোহাম্মদ রাসেল কারাগারে থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, মন্ত্রণালয়ের কাছে ইভ্যালির ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের কোনো পূর্ণাঙ্গ তালিকা নেই, যার ভিত্তিতে অর্থ ফেরত দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া কত টাকা আটকে আছে তাও জানা দরকার। তবে ইভ্যালিসহ আরও তিন প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়া কবে থেকে শুরু হবে তা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। গ্রাহকদের তালিকার পাওয়া এবং গেটওয়েতে আটকে থাকা অর্থের পরিমাণের ওপর এটি নির্ভর করবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কিউকমের গ্রাহকেরা সবচেয়ে বেশি অর্থ ফেরত পেয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী জামিনে বেরিয়ে আসার পর টাকা ফেরতের কার্যক্রম থেমে গেছে। একাধিকবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকের তালিকা দেয়নি তারা।
তালিকা না পাওয়ায় এসক্রো সার্ভিসে আটকে থাকা টাকাও গ্রাহকদের ফেরত দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের শত শত কোটি টাকা ফেরত দিচ্ছে না। অভিযোগ করেছে অভিযুক্ত কর্মকর্তারা জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছেন।