বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৫:১৩ পূর্বাহ্ন




বেগম রোকেয়া দিবস আজ

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: শুক্রবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২২ ২:১৩ am
Rokeya Sakhawat Hossain Begum Rokeya writer বেগম রোকেয়া রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন বেগম রোকেয়া সাহিত্যিক
file pic

নারী জাগরণের অগ্রদূত ছিলেন বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। জন্মেছিলেন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দে। বর্তমানে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে রোকেয়ার স্মৃতি ও বসতভিটা। সেইসঙ্গে বন্ধ রয়েছে রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রের কার্যক্রম। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল।

জানা গেছে, রোকেয়ার বাবা জহীরুদ্দিন মুহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের ছিলেন তার বংশের শেষ জমিদার। পায়রাবন্দের এই জমিদার বংশে ১৮৮০ সালে রোকেয়ার জন্ম। ১৯০৯ সালে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। ১৯১৬ সালে আনজুমানে-খাওয়াতীনে ইসলাম নামে নারী সংগঠন গড়েন। এভাবে সমাজ সংস্কারক ও নারী জাগরণের অগ্রদূত হয়ে ওঠেন। ১৯৩২ সালে কলকাতায় মারা যান রোকেয়া। রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যু একই দিন ৯ ডিসেম্বর হওয়ায় দিবসটি রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘বেগম রোকেয়া দিবস’ হিসেবে পালিত হয়।

তবে বছরের পর বছর পায়রাবন্দে রোকেয়ার বসতভিটা ও বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র অবহেলায় জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। তার পৈতৃক ভিটার ফটকের ভেতরে একটি ভাঙা দেয়ালে দুটি জানালার আকৃতি কোনও রকমে টিকে আছে। এগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রের সংগ্রহশালার আলমারিগুলোতে নেই কোনও স্মারক।

স্থানীয়রা বলছেন, প্রতি বছর ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবস পালন করা নিয়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের শুরু হয় দৌড়ঝাঁপ। রোকেয়ার পৈতৃক ভিটায় অস্থায়ী স্মৃতিসৌধ করে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। দিবস এলেই রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রের মাঠে পিতলের তৈরি রোকেয়ার ভাস্কর্য ও ভবনের ধোয়ামোছা এবং রঙ করা হয়। চলে আলোচনা সভা ও সেমিনার। তখন দেওয়া হয় রোকেয়ার স্মৃতি সংরক্ষণের নানা প্রতিশ্রুতি। কিন্তু দিবস চলে গেলে কারও কোনও খবর থাকে না। এ অবস্থায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে বেগম রোকেয়ার বসতভিটা। বন্ধ হয়ে গেছে স্মৃতিকেন্দ্রের কার্যক্রম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেগম রোকেয়ার স্মৃতি ধরে রাখা, সুবিধাবঞ্চিত নারীদের পুনর্বাসন এবং তার জীবন ও রচিত গ্রন্থ নিয়ে গবেষণার জন্য পাঁচ কোটি টাকায় পায়রাবন্দে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে নির্মাণ করা হয় রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র। ২০০১ সালে শেখ হাসিনা এই কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর স্মৃতিকেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দীর্ঘ ১৪ বছর কোনও বেতনভাতা পাননি। অবশেষে ২০২০ সালে আবারও চালু করা হয় স্মৃতিকেন্দ্রটি। তবে সপ্তাহে দু’একদিন গান শেখানো আর লাইব্রেরিতে কিছু সংখ্যক বই ছাড়া কোনও কার্যক্রম নেই স্মৃতিকেন্দ্রের দায়িত্বশীলদের। দুস্থ নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম ও রোকেয়াকে নিয়ে গবেষণার কোনও কাজ হয়নি।

স্মৃতিকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিচালক ফারুখ আহমেদকে বাংলা একাডেমিতে প্রেষণে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার পরিবর্তে একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও তা ছিল কাগজ-কলমে। তিনিও ঢাকায় থেকে কাজ করছেন। বর্তমানে একজন সহকারী ও পিয়ন ছাড়া স্মৃতিকেন্দ্রের দায়িত্বে কেউ নেই।

অপরদিকে, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় স্মৃতিকেন্দ্রের ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান জিনিসপত্র। একই অবস্থা রোকেয়ার বসতভিটার। সেখানে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ হয়নি। অযত্ন-অবহেলায় অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে বেগম রোকেয়ার সব স্মৃতি ও সংগ্রহ।

ছেলেমেয়েকে নিয়ে ঢাকা থেকে বেগম রোকেয়ার বাস্তুভিটা এবং স্মৃতিকেন্দ্র দেখতে এসেছেন মমতাজ বেগম। তিনি বলেন, ‘অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র, ভাস্কর্য ও পৈতৃক ভিটা। দায়িত্বশীলদের এসবের যত্ন নেওয়া উচিত। এখনও তার স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ হয়নি জেনে অবাক হলাম। স্মৃতিকেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ দেখে বেশি হতাশ হলাম।’

ঝিনাইদহ থেকে আসা কবি ও সাহিত্যিক অফতাব হোসেন বলেন, ‘বেগম রোকেয়ার পৈতৃক ভিটা ও স্মৃতিকেন্দ্রের রক্ষণাবেক্ষণ করে এতদিনে একটা পর্যটন স্পট বানানো যেতো। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও উদ্যোগ নেননি দায়িত্বশীলরা। এটি আমাদের জন্য হতাশার।’

একই হতাশা ব্যক্ত করলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী সামসি আরা এবং মাহমুদুর রহমান। তারা জানান, ‘বেগম রোকেয়ার স্মৃতিকেন্দ্র, ভাস্কর্য ও পৈতৃক ভিটা সংরক্ষণের উদ্যোগ না নেওয়া সবার জন্য হতাশার। এটি মেনে নেওয়া যায় না।’

বেগম রোকেয়া ছিলেন সমাজসংস্কারক ও নারী জাগরণের অগ্রদূত উল্লেখ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান এবং রোকেয়া গবেষক অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘বেগম রোকেয়া নারীবাদী চিন্তার প্রকাশ ঘটিয়েছেন মতিচূর প্রবন্ধে। এছাড়া সুলতানার স্বপ্ন, পদ্মরাগ ও অবরোধবাসিনী তার সৃজনশীল রচনা। তার স্বপ্নকে বিশ্বের নারীবাদী সাহিত্যে একটি মাইলফলক ধরা হয়। এজন্য রোকেয়াকে নিয়ে আমাদের প্রচুর গবেষণা করা প্রয়োজন। বিশেষ করে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ওপর আলাদা একটা বিষয় সন্নিবেশিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।’

নারী জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন বেগম রোকেয়া উল্লেখ করে শিক্ষাবিদ শাশ্বত ভট্টাচার্য বলেন, ‘বেগম রোকেয়ার কারণেই নারীরা এখন শিক্ষাদীক্ষা, রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় অনেক দূর এগিয়ে গেছেন। পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিযোগিতা করে নিজেদের যোগ্য প্রমাণিত করেছেন। তাকে অনুকরণ করে নারীদের আরও অনেক দূর যেতে হবে।’

রোকেয়ার পৈতৃক ভিটা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে জানিয়ে বেগম রোকেয়া স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম দুলাল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রটি স্থাপন করা হলেও বাস্তবে কোনও কার্যক্রম শুরু হয়নি। নষ্ট হতে চলছে স্থাপনা, ভাস্কর্য ও স্মৃতিকেন্দ্রের জিনিসপত্র। প্রধানমন্ত্রী যদি আবারও উদ্যোগ নেন তাহলে হয়তো কার্যক্রম শুরু হতে পারে। না হয় এভাবেই পড়ে থাকবে।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র ও পৈতৃক ভিটা দেখভালের দায়িত্বে থাকা উপপরিচালক ফারুখ আহমেদ বলেন, ‘আমার দায়িত্ব হলো স্মৃতিকেন্দ্রের দেখভাল করা। কিন্তু বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ জরুরি প্রয়োজনে ঢাকায় আমাকে প্রেষণে নিয়ে এসেছে। তবে এখানে থেকেও অনেক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি। আশা করছি, স্মৃতিকেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হবে।’




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD