পরিবার পরিকল্পনার ক্ষেত্রে অপূর্ণ চাহিদা শূন্যতে নিয়ে আসা, শূন্য মাতৃমৃত্যু হার এবং যৌন ও জেন্ডারভিত্তিক নির্যাতন এবং ক্ষতিকারক চর্চা নির্মূলের (তিন শূন্য প্রতিশ্রুতি) লক্ষ্যে পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) কৌশলগত অংশীদারিত্বে থ্রি-জিরোস অ্যাকশন নেটওয়ার্কের যাত্রা শুরু হয়েছে।
রোববার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানী ধানমন্ডির পিপিআরসি কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে সমন্বিত এই কার্যক্রমের যাত্রা শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, জনসংখ্যা লক্ষ্যমাত্রায় বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য উন্নতি রয়েছে, কিন্তু এর সঙ্গে জটিল কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। বিশেষ করে বাল্যবিবাহের উচ্চ হার, কিশোরী গর্ভাবস্থা এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার পাশাপাশি মাতৃমৃত্যু ও প্রজনন স্বাস্থ্য অন্যতম। এমনকি এসব প্রতিশ্রুতি সরাসরি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পরস্পর সম্পর্কিত।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বক্তব্য রাখেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, বাল্যবিয়ের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ছে। এতে স্বাস্থ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, নারী নির্যাতনের ঘটনাও ঘটছে। শুধুমাত্র অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে গেলেই হবে না। দেশকে সুষমভাবে এগিয়ে নিতে মাতৃমৃত্যুর হার রোধ, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশে বাল্যবিবাহ কমাতে হলে নারীদের মধ্যে শিক্ষার হার বাড়াতে হবে। আর মাতৃমৃত্যু কমাতে হলে আমাদের স্বাস্থ্যসেবাকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।
বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে জিল্লুর রহমান বলেন, আমাদের জন্ম নিবন্ধন সিস্টেম নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায় কিন্তু কেন সমস্যাগুলো হচ্ছে বা বিষয়টি দ্রুত সমাধানে কী করণীয়— এসব বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নেই। আমাদের বিবাহের রেজিস্ট্রেশন নিয়েও ঝামেলা আছে। কাজীরা ভুয়া আলাদা রেজিস্ট্রি খাতা ব্যবহার করে। সবমিলিয়ে বলা যায়, সব ক্ষেত্রেই আমাদের বিরাট একটা ফাঁকফোকর রয়ে গেছে। আমাদের কাগজে-কলমে অনেক কিছুই আছে কিন্তু মাঠ পর্যায়ে-বাস্তবে কি আছে সেটা খুঁজতে গেলে অনেক কিছুই পাওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, আমাদের কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো ২টার পরই বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু স্কুল-কলেজগুলো তো ছুটি হয় ৪টায়। যে কারণে মেয়ে শিক্ষার্থীরা এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসতে পারে না। অথচ কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে এসব মেয়েদেরই সবচেয়ে বেশি আসার কথা। এক্ষেত্রে ২টার পরও কীভাবে এসব সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান চালু রাখা যায়, আমাদের ভাবতে হবে।
থ্রি-জিরোস অ্যাকশন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অর্জন নিয়ে আসতে পারব। করোনা-পরবর্তী সামাজিক কাজগুলোতে অনেকটাই পিছিয়ে আছি। সেই জায়গাগুলোতে কাজ করতে হবে। থ্রি-জিরোস অ্যাকশন নেটওয়ার্কের আওতায় আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কিশোর-কিশোরী ক্লাব তৈরি করব। শিক্ষার্থীদের মাধ্যমেই আমরা সচেতনতার ধাক্কাটি দিতে চাই।
এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম বলেন, আমাদের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী আছে কিন্তু তাদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে আমরা ততটা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছি না। কিন্তু এই কর্মক্ষম মানুষগুলোকে কাজে লাগাতে অবশ্যই তাদের সুস্বাস্থ্য সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে। তবে এসব ক্ষেত্রে আমাদের বড় বাধা হলো চাইল্ড ম্যারেজ, আর্লি প্রেগন্যান্সি এবং মাতৃ ও শিশু মৃত্যু। এ সমস্যাগুলো আমাদের সমাধান করতে হবে। বিশেষ করে মাতৃমৃত্যু রোধ ২০৩০ সালের মধ্যে ৭০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে।
তিনি বলেন, মাতৃমৃত্যু, বাল্যবিবাহ নিয়ে আমাদের তথ্য-উপাত্তে ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। এসডিজি গোলের অর্ধেকই জড়িত বাল্যবিবাহের সঙ্গে। বাল্যবিবাহ কমাতে পারলে আমরা এসডিজি গোলেও এগিয়ে যাব।
মঈনুল ইসলাম বলেন, বাল্যবিবাহ রোধে আমাদের জেলা-উপজেলায় কমিটি আছে কিন্তু এসব কমিটির কোনো কার্যক্রম নেই। এমনকি আমাদের এতসব ঘাটতি নিরসনে তেমন কোনো কার্যক্রম নেই।