১. দ্বীনের উপরে অবিচল থাকার ব্যাপারে আল্লাহর মুখাপেক্ষিতার অনুভূতি থাকাঃ এ ব্যাপারে আল্লাহর তাওফীক্ব থেকে আমরা এক পলকও অমুখাপেক্ষি নই। আল্লাহ্ যদি আমাদেরকে দ্বীনের উপরে অটুট না রাখেন তবে আমাদের ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। আল্লাহ্ সৃষ্টির সেরা নবী মুহাম্মাদ সা. কে উদ্দেশ্য করে বলেন:
{وَلَوْلَا أَنْ ثَبَّتْنَاكَ لَقَدْ كِدْتَ تَرْكَنُ إِلَيْهِمْ شَيْئًا قَلِيلًا}
“আমি আপনাকে দৃঢ়পদ না রাখলে আপনি তাদের প্রতি কিছুটা ঝুঁকেই পড়তেন।”
(বাণী ইসরাঈল: ৭৪)
শপথ বিষয়ে নবী সা. এর ক্ষেত্রে বর্ণিত হয়েছে:
عَنْ سَالِمٍ عَنْ أَبِيهِ قَالَ كَانَتْ أَكْثَرُ أَيْمَانِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : لَا وَمُصَرِّفِ الْقُلُوبِ
সালেম তার বাবা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, রাসূল সা. তাঁর অধিকাংশ কসমের সময় বলতেনঃ “লা, অ-মুর্সারিফাল কুলূব্” না, অন্তর পরবর্তনকারীর শপথ।
(সুনানে ইবনে মাজাহ্: ২০৮৩) এ হাদীসটি দ্বীনের উপর অবিচল থাকার ব্যাপারে আল্লাহর মুখাপেক্ষিতার দাবীকে আরও গুরুত্ববহ করেছে।
২. কল্যাণের উপরে অবিচল থাকার উপায় হল আল্লাহর উপর অগাধ বিশ্বাস থাকা
আল্লাহ্ বলেন:
{يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ وَيُضِلُّ اللَّهُ الظَّالِمِينَ وَيَفْعَلُ اللَّهُ مَا يَشَاءُ}
“মহান আল্লাহ্ পার্থিব জীবন ও পরকালে মু’মিনদেরকে স্থায়ী বাক্য দ্বারা মজবুত করেন। এবং আল্লাহ্ জালেমদেরকে পথভ্রষ্ট করেন। আল্লাহ্ যা ইচ্ছা, তা করেন।”
(ইবরাহীম: ২৭)
যে ঈমান মানুষকে দ্বীনের উপর অবিচল রাখে সে ঈমানই অন্তরে দৃঢ়ভাবে গেঁথে যায়, মুখে তা উচ্চারণ করে এবং অঙ্গ প্রতঙ্গের মাধ্যমে ঈমানের দাবীকে নিজ জীবনে বাস্তবায়ন করে। কোন বিশেষ গুণ অর্জন বা কোন আশা আকাংখার নাম ঈমান নয়। ঈমান হলঃ যা অন্তরে দৃঢ়ভাবে স্থাপিত হয়ে কাজে তার বাস্তবায়ন হয়। অতএব, সত্যিকারার্থে প্রকাশ্য ও বাহ্যিকভাবে, সুখে-দূখে ঈমান ও ইসলামকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরা নেক কাজের উপরে কায়েম থাকার অন্যতম উপায়। মহান আল্লাহ্ বলেন:
{وَلَوْ أَنَّهُمْ فَعَلُوا مَا يُوعَظُونَ بِهِ لَكَانَ خَيْرًا لَهُمْ وَأَشَدَّ تَثْبِيتًا} [النساء: ৬৬]
“যদি তারা তাই করে যা তাদের উপদেশ দেয়া হয়, তবে তা অবশ্যই তাদের জন্য উত্তম এং তাদেরকে নিজের ধর্মের উপর সুদৃঢ় রাখার জন্য তা অধিক শক্তিশালী হবে।”
(সূরাহ্ নিসা: ৬৬)
অতএব, আল্লাহর সন্তুষ্টিকল্পে অব্যাহতভাবে আনুগত্যের অধ্যবসায় করার উপরই কল্যাণের ওয়াদা দেওয়া হয়েছে। আর এর উপর অবিচল থাকার বিষয়টি অন্তরসমূহের পরিবর্তক আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়ে থাকে।
৩. কল্যাণ ও আনুগত্যের উপর অবিচল থাকার অন্যতম উপায় হল ছোট বড়, প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সকল গুণাহ্ ও পাপ কাজ পরিত্যাগ করাঃ কারণ, গুনাহের দরুন অন্তর বক্র হয়ে যায়। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে:
৮৬ –
عَنْ أَبي هُرَيْرَةَ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَا يَزْنِي الزَّانِي حِينَ يَزْنِي وَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلَا يَسْرِقُ السَّارِقُ حِينَ يَسْرِقُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلَا يَشْرَبُ الْخَمْرَ حِينَ يَشْرَبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ
“আবূ হুরাইরাহ্ রাঃ থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় রাসূল সাঃ বলেছেনঃ যেনাকারী যখন যেনা করে তখন সে মু’মিন থাকে না, চোর চুরি করার সময় মুমিন থাকে না, নেশাখোর মদপানের সময় মুমিন থাকে না। (সহীহ্ মুসলিম #৮৬, সহীহুল বুখারী #৫১৫০)। অপর দিকে ছোট গুনাহের ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে:
২১৭৪২ –
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ৎ إِيَّاكُمْ وَمُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ كَقَوْمٍ نَزَلُوا فِي بَطْنِ وَادٍ فَجَاءَ ذَا بِعُودٍ وَجَاءَ ذَا بِعُودٍ حَتَّى أَنْضَجُوا خُبْزَتَهُمْ وَإِنَّ مُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ مَتَى يُؤْخَذْ بِهَا صَاحِبُهَا تُهْلِكْهُ
সাহল বিন সা’দ রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলে, রাসূল সাঃ বলেছেনঃ তোমরা গুনাহ্কে তুচ্ছ জ্ঞান করা থেকে বেঁচে থাকবে। যেমনঃ কোন সম্প্রদায় কোন উপত্যকায় বিশ্রামের জন্য থামে। অতঃপর প্রত্যেকে ১টি করে কাষ্ঠ নিয়ে আসার কারণে তারা তাদের রুটি তৈরী করতে সক্ষম হয়। (অনুরুপ ছোট ছোট ও একেকটি পাপ মিলিয়ে পাপের পাহাড় জমা হয়)। আর পাপকে তুচ্ছ জ্ঞানকারী যখনই পাকড়াও হবে উহা তাকে ধ্বংস করে ছাড়বে। (মুসনাদে আহমাদ: ২১৭৪২)
ইবনে মু’তায বলেন:
خَلِّ الذُّنَوبَ صغيرَهَا وكبيرَهَا ذاك التُّقى واعْمَلْ كماشٍ فوقَ أر ضِ الشَّوكِ يَحْذَرُ ما يَرَى لا تَحْقِرَنَّ صغيرةً إنَّ الجبالَ مِنَ الحَصَى.
“ছোট বড় সকল গুনাহ্ পরিত্যাগ কর এটাই হল তাক্বওয়া। কাঁটাদার রাস্তায় চলমান পথিকের মত দুনিয়ায় জীবন যাপন কর। ছোট পাপকে তুচ্ছ জ্ঞান কর না, পাহাড় তো পাথর খন্ড থেকেই হয়।
(কুতুব অ-রাসায়েল শায়খ উসাইমিন: ১৬৫/৬৩)।
৪. ইসলামের উপর কায়েম থাকার উপায় হল নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত, শিক্ষা, গবেষনা ও সে অনুযায়ী আমল করা; কারণ, মহান আল্লাহ্ এ সংবাদ দিয়েছেন যে, এ উত্তম কিতাবটি তিনি মু’মিনদের দ্বীনের উপর কায়েম থাকা, হেদায়াত ও সুসংবাদ স্বরুপ নাযিল করেছেন। আল্লাহ্ বলেন:
{قُلْ نَزَّلَهُ رُوحُ الْقُدُسِ مِنْ رَبِّكَ بِالْحَقِّ لِيُثَبِّتَ الَّذِينَ آمَنُوا وَهُدًى وَبُشْرَى لِلْمُسْلِمِينَ} [النحل: ১০২]
“বলুন, একে পবিত্র ফেরেশতা পালনকর্তার পক্ষ থেকে নিশ্চিত সত্যসহ নাযিল করেছেন, যাতে মুমিনদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং এটা মুসলমানদের জন্যে পথ নির্দেশ ও সু-সংবাদ স্বরুপ।”
(নাহল: ১০২)
অতএব, পবিত্র কুরআনকে মজবুতভাবে ধারণ করে সে অনুযায়ী আমলকারীর জন্য তা এক মজবুত রজ্জু, সিরাতে মুস্তাক্বীম ও স্পষ্ট আলো।
৫. হক্ব পন্থি পরহেযগার আলেম ও দাঈদের দিকে প্রত্যাবর্তন করাঃ তাঁরা হলেন হক্বের মজবুত খুঁটি, কল্যাণের চাবি ও মন্দকে বন্ধকারী। অতএব, ধারাবাহিক সংশয় ও আত্মপ্রবৃত্তির অনুসরণ আপনার হৃদয়ে তার বিষাক্ত নখ বিস্তার করে আপনাকে ধ্বংস করার পূর্বেই উলামায়ে রাব্বানীর দারস্থ হোন।
ইবনুল কাইয়িম রাহিমাহুল্লাহ্ তাঁর ও সাথীদের সম্পর্কে বলেনঃ “ঈমানের ব্যাপারে যখন আমাদের অধিক ভয় ও কু-ধারণা তৈরী হয়ে দুনইয়া আমাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে যেত তখন আমরা ওস্তাদ শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ্ এর কাছে আসতাম। আমরা তাঁকে দেখে তাঁর দারসে বসে তাঁর কথা শুনলে আমাদের ঐ সকল দূর্বলতা দূর হয়ে যেত। আর আমাদের অন্তর প্রসন্ন হয়ে তা শক্তি, দৃঢ় বিশ্বাস ও প্রশান্তিতে ভরে যেত।”
৬. আল্লাহর দ্বীনের উপরে অবিচল থাকার উপায় হল, আনুগত্যের কাজ করা এবং পাপ থেকে বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে ধৈর্য্য ধারণ করাঃ কারণ, বান্দা ইহা ব্যতীত কল্যাণ অর্জনে সক্ষম নয়। আল্লাহ্ তাঁর নবীকে ধৈর্য্য ধারণের নির্দেশ প্রদান করে বলেন:
{وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ تُرِيدُ زِينَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَنْ ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطًا} [الكهف: ২৮]
“আপনি নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আহবান করে এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তাদের থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না। যার মনকে আমার স¥রণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি, যে, নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্য কলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা, আপনি তার অনুগত্য করবেন না।”
(কাহ্ফ: ২৮)
নবী সা. বলেন: وما أعطي أحدٌ عطاء خيراً وأوسع من الصبر
অর্থঃ কোন ব্যক্তিকে ধৈর্য্যরে চেয়ে উত্তম ও প্রশস্ত কোন বিষয় দান করা হয়নি। কবি বলেনঃ
فالصبر مثل اسمه مر مذاقته
لكن عواقبه أحلى من العسل
অর্থঃ ধৈর্য্যরে স্বাদ তিতা হলেও তার পরিণাম মধুর থেকেও মিষ্ট।
৭. আল্লাহর দ্বীনের উপর অবিচল থাকার উপায় হল আল্লাহর কৌশল ও শাস্তি থেকে নিজেকে নিরাপদ মনে না করা
আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদেরকে নিজ শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে বলেন:
{أَفَأَمِنُوا مَكْرَ اللَّهِ فَلَا يَأْمَنُ مَكْرَ اللَّهِ إِلَّا الْقَوْمُ الْخَاسِرُونَ} [الأعراف: ৯৯]
“আর আল্লাহর শাস্তি থেকে নির্ভয় হয়ে গেছে? বস্তুতঃ ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায় ব্যতীত কেউ আল্লাহর শাস্তি থেকে নিজেকে মুক্ত মনে করে না।”
(সূরাহ্ আ’রাফ: ৯৯)
আল্লাহর শাস্তির ভয়ে নেককার ও পরহেযগারদের পিঠ ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হত। অথচ যালেম ও বদকার লোকেরা তা থেকে অন্যমনস্ক। যেন মনে হচ্ছে এ ব্যাপারে তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে নিরাপত্তার সার্টিফিকেট গ্রহণ করেছে!? অথচ আল্লাহ্ বলেন:
{أَمْ لَكُمْ أَيْمَانٌ عَلَيْنَا بَالِغَةٌ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ إِنَّ لَكُمْ لَمَا تَحْكُمُونَ (৩৯) سَلْهُمْ أَيُّهُمْ بِذَلِكَ زَعِيمٌ} [القلم:]
“না তোমরা আমার কাছ থেকেকেয়ামত পর্যন্ত বলবৎ কোন শপথ নিয়েছ যে, তোমরা তাই পাবে যা তোমরা সিদ্ধান্ত করবে? আপনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করুন তাদের কে এ বিষয়ে দায়িত্বশীল?”
(সূরাহ্ আল্ ক্বলাম: ৩৯-৪০)
অপর দিকে সর্বোচ্চ মর্যাদা, গভীর ইল্ম ও ঈমান এবং পর্যাপ্ত নেক আমল থাকা সত্বেও সর্বযুগের সৎ ব্যক্তিগণ নিজেদের ঈমান চলে যাওয়া ও কুরআনকে মনে প্রাণে গ্রহণ করা থেকে মুক্ত হওয়াকে অত্যন্ত ভয় করতেন।
অতএব, আল্লাহর শাস্তি থেকে নিজেকে নিরাপদ মনে করা ও নিজের উপর নির্ভরশীল হওয়া থেকে বিরত থাকুন। ঈমান বিষয়ে আপনার অন্তর যত দিন সংশয়ে থাকবে তত দিন আপনি ভয়াবহ ক্ষতির উপরে রয়েছেন। আল্লাহ্ তাঁর মুমিন বান্দাদের প্রশংসা করে বলেন, তারা বলে:
{رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ}
“হে আমাদের রব্ব! তুমি আমাদেরকে হেদায়াত করার পর আমাদের অন্তরসূহকে বিপথগামী করিও না, তোমার পক্ষ থেকেও আমাদেরকে রহমত দান কর, নিশ্চয় তুমি মহান দাতা।”
(আল-ই ইমরাণ: ৮)
৮. আল্লাহর নিকটে সত্যের উপর অটল থাকা প্রার্থণা করাঃ কারণ, মহান আল্লাহই আমাদেরকে হেদায়াত দিয়ে সত্যের উপর কায়েম রাখেন। তাই আল্লাহর নিকটে সর্বদা এ দুয়া করুন যে, তিনি যেন আপনার হৃদয়কে তাঁর দ্বীনের উপরে কায়েম রাখেন। কেননা, অন্তরসূহ দূর্বল, সংশয় যে কোন মূহুর্তে আপনাকে গ্রাস করতে পারে এবং শয়তান আপনাকে বিপথগামী করার জন্য সদা ওঁত পেতে আছে। এ ক্ষেত্রে আপনার জন্য উত্তম আদর্শ হলেন পূর্ববর্তী মুমিনগণ! কারণ, তাঁদের অন্যতম দুয়া ছিল:
{رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ} [البقرة: ২৫০]
“হে আমাদের রব্ব! তুমি আমাদের উপর সবর ঢেলে দাও, (দ্বীনের উপর) আমাদের পাকে দৃঢ় রাখ, আর কাফের সম্প্রদায়ের উপর আমাদেরকে সহযোগীতা কর।”
(সূরাহ্ বাকারাহ্:২৫০)
রাসূল অধিকহারে এ দুয়া ক
“ইয়া মুকাল্লিবাল কুলূব সাব্বিত কলবী আলা দ্বীনিকা” হে হৃদয়সমূহের পরিবর্তনকারী তুমি আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপরে কায়েম রাখ।”
(সুনানে তিরমিযী: ২০৬৬)
৯. দ্বীনের উপরে অবিচল থাকার উপায় হল জুলম ও অত্যাচার পরিহার করা
জুলমের পরিণাম অতি ভয়াবহ। মহান আল্লাহ্ মু’মিনদেরকে দিয়েছেন দ্বীনের উপর অবিচল থাকার সুযোগ। আর যালেমদের ভাগ্যে জুটেছে গুমরাহী। আল্লাহ্ বলেন:
{يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ وَيُضِلُّ اللَّهُ الظَّالِمِينَ وَيَفْعَلُ اللَّهُ مَا يَشَاءُ}
“আল্লাহ্ মু’মিনদেরকে দুনইয়া ও আখেরাতে সত্য বাক্যের উপর কায়েম রাখবেন। আর যালেমদেরকে গুমরাহ্ করবেন। আল্লাহর যা ইচ্ছা তাই করেন।”
(সূরাহ্ ইবরাহীম: ২৭)
হে মু’মিনগণ! পাপ ও গুনাহ্ করে নিজেদের উপরে এবং অধিনস্থ চাকর ও কর্মচারীদের উপর জুলুম করা থেকে বিরত থাকুন। অধিনস্থদের অধিকার আদায়ে ঘাটতির জুলুম থেকে নিজেকে রক্ষা করুন। কারণ, দুনিয়াবী জুলুম অত্যাচার কিয়ামতের দিন অন্ধকারে রুপান্তরিত হবে।
হাদীসে বর্ণিত হয়েছেঃ “হুযাইফাহ্ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সা. কে বলতে শুনেছি: চাটাইয়ের প্রতিটি কাঠির ন্যায় অন্তরের উপর একেকটি ফেতনা পেশ করা হবে। যে অন্তর উহাকে গ্রহণ করবে সেখানে ১টি কাল দাগ পড়বে। যে অন্তর ঐ ফেতনা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানাবে সেখানে ১টি সাদা দাগ দেওয়া হবে। এমনকি অন্তরসমূহ ২ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে। এক প্রকার অন্তর হবে সাদা ও স্বচ্ছ পাথরের মত যেখানে কিয়ামত পর্যন্ত ফেতনা কোন ক্ষতি করতে পারবে না। অপর অন্তরটি হবে কালো ধূসর রঙ্গের মত যেন তা ঢালু জগ। যা কোন ভাল কাজ চিনে না এবং মন্দ কাজকে উপেক্ষা করে না। এমন হৃদয় মনে যা ইচ্ছা তাই করে”। (মুসলিম: ২০৭)। আর এটা হল জাহান্নামীদের গুনাবলী ও পরিচয়।
১০. ঈমানের উপরে অবিচল থাকার একটি উপায় হল: আল্লাহর দ্বীন ও তাঁর পরহেযগার ওলীদেরকে সাহায্য করা; আল্লাহ্ বলেন:
{يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنْ تَنْصُرُوا اللَّهَ يَنْصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ} [محمد: ৭]
“হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর তবে তিনি তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং (ইসলামের উপরে) তোমাদের পাকে অবিচল রাখবেন।”
(সূরাহ্ মুহাম্মাদ: ৭)
আল্লাহ্ ও তদ্বীয় ওলীগণকে বিভিন্নভাবে সহযোগীতা করতে পারেন। ইহার নির্দিষ্ট কোন সীমা-রেখা নেই। সকল উপায়ে আল্লাহর পথে মানুষকে আহ্বান করা আল্লাহর দ্বীনকে সাহায্য করার অন্তর্ভূক্ত। ইল্ম অর্জন করা আল্লাহর দ্বীনকে সাহায্য করার শামিল। কাফের, মুনাফেক্ব ও পাপিষ্টদের সাথে জিহাদ করলে আল্লাহর দ্বীনকে সহযোগীতা করা হয়। ইসলামের শত্রুদের প্রতিবাদ করা, তাদের সংশয়সমূহের উত্তর দেওয়া, তাদের চক্রান্তসমূহ মানুষকে জানিয়ে দেওয়াতেও আল্লাহর দ্বীনকে সহযোগীতা করা হয়। আল্লাহর রাস্তায় ও বিভিন্ন কল্যাণমূখী কাজে অর্থ খরচ করা আল্লাহর দ্বীনকে সাহায্য করার শামিল। আলেম, দাঈ, ভাল কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি ও ইসলামী নেতাদের পক্ষে প্রতিবাদ জানানো ইসলামকে সাহায্য করার অন্তর্ভূক্ত। এছাড়াও বিভিন্ন পদ্ধতিতে ইসলাম ও আল্লাহর ওলীদেরকে সাহায্য সহযোগীতা করা যায়। আল্লাহ্ আমাদেরকে তাঁর ওলী ও দ্বীনের সাহায্যকারী হিসেবে কবুল করে নিন। আমীন। ইবনুল কাইয়িম রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন:
“দ্বীন ইসলামকে সহযোগীতা করা সকলের জন্য ফরজে আইন। প্রথমতঃ হাত দিয়ে, অতঃপর কথা দিয়ে, তা না পারলে অন্তর থেকে ইসলামের কল্যাণের জন্য দুয়া করবে।”
১১. অধিকহারে আল্লাহর যিকির করা
কেননা আল্লাহ্ বলেন:
{أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ} [الرعد: ২৮]
“জেনে নাও যে, আল্লাহর যিকিরে অন্তরসমূহ প্রশান্তি লাভ করে।” (সূরাহ্ র’দ: ২৮)। হাদীসেও বর্ণিত হয়েছে:
৫৯২৮ –
عَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم : مَثَلُ الَّذِي يَذْكُرُ رَبَّهُ وَالَّذِي لَا يَذْكُرُ رَبَّهُ مَثَلُ الْحَيِّ وَالْمَيِّتِ
“আবূ মূসা আশ্আ’রী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সা. বলেছেন: যে ব্যক্তি তার রব্বকে স্মরণ করে আর যে করে না উভয়ের উদাহরণ হলঃ জীবিত ও মৃত ব্যক্তির মত।
(বুখারী: ৫৯২৮)
আল্লাহ্ তায়া’লা আমাদেরকে অধিকহারে তাঁর যিকির করার নির্দেশ দিয়ে বলেন:
{يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اذْكُرُوا اللَّهَ ذِكْرًا كَثِيرًا (৪১) وَسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلًا (৪২) هُوَ الَّذِي يُصَلِّي عَلَيْكُمْ وَمَلَائِكَتُهُ لِيُخْرِجَكُمْ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ وَكَانَ بِالْمُؤْمِنِينَ رَحِيمًا}
“মু’মিনগণ তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্বরনণ কর। এবং সকাল বিকাল আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা কর। তিনিই তোমাদের প্রতি রহমত করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণও রহমতের দোয়া করেন-অন্ধকার থেকে তোমাদেরকে আলোকে বের করার জন্য। তিনি মু’মিনদের প্রতি পরম দয়ালু।”
(সূরাহ্ আহ্যাব ৪১-৪৩)
অধিকহারে আল্লাহর যিকির ও পবিত্রতা ঘোষণা করা বান্দার জন্য আল্লাহর রহমত ও ফেরেশতাদের পক্ষ থেকে রহমতের দু’আ লাভের কারণ। যার মাধ্যমে সে অন্ধকার থেকে আলোর পথে বেরিয়ে আসতে পারবে। হায় আফসোস! ঐ সকল লোকদের জন্য যারা তাদের রব্বের যিকির থেকে গাফেল। আল্লাহর যিকির পরিত্যাগের দরুন তারা তাঁর অসংখ্য কল্যাণ, মর্যাদা ও দয়া থেকে নিজেদেরকে বঞ্চিত করছ। হে আল্লাহ্! তুমি আমাদেরকে দুনইয়া ও আখেরাতে স্থায়ী সত্য বাক্যের উপর কায়েম রাখ। হে আল্লাহ্! তুমি আমাদেরকে তোমার আনুগত্যে অবিচল রাখ। আল্লাহুম্মা আমীন।
– শায়খ মুখলিসুর রহমান মাদানী
IFM desk