মরক্কোকে ৪৪ বছর শাসন করেছিল ফ্রান্স। তবে এবার ফুটবল মাঠে ফ্রান্সকে শাসন করতে চায় মরক্কো। আজ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ফরাসিদের হারিয়ে উত্তর আফ্রিকার দেশটি নতুন ইতিহাস গড়ার স্বপ্নে বিভোর। আল বাইত স্টেডিয়ামে ম্যাচ শুরু বাংলাদেশ সময় রাত ১টায়। কোনো ম্যাচ না হেরে শেষ চারে যাওয়া মরক্কোকে নিয়ে আশাবাদী অধিনায়ক রোমান সাইস। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রমাণ করেছি, বিশ্বকাপে আমাদের অগ্রযাত্রা কোনো অঘটন ছিল না। পর্তুগাল দল অভিজ্ঞ ছিল। তাদের হারানো এত সহজ নয়। কিন্তু আমরা ওদের হারিয়েছি। আমাদের স্বপ্নযাত্রা জারি থাকবে।
বিশ্বাস রাখতে হবে, আমরা পারি। আমরা জানি, আমাদের পেছনে মরক্কো এবং পুরো আরবের সমর্থন রয়েছে।’
অন্যদিকে, ফ্রান্সের অধিনায়ক গোলরক্ষক হুগো লরিস বলেন, ‘মরক্কো কঠিন প্রতিপক্ষ। তার উপর স্টেডিয়ামের পরিবেশটাও হবে বৈরী।’ ফরাসি কোচ দিদিয়ের দেশম বলেন, ‘আমি ‘বৈরিতার কথা বলতে চাই না। তবে এটা ঠিক তাদের পেছনে প্রচুর সমর্থন থাকবে। চারপাশে চেঁচামেচি, শোরগোলে পরিপূর্ণ। খেলোয়াড়দের এ নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে।’
দু’পাশে ফ্রান্স-স্পেন। মাঝখানে মরক্কো। দুই শক্তিশালী দেশের মাঝে থাকলে যা হয় আরকি। উত্তর আফ্রিকার দেশ মরক্কো পরিণত হয়েছিল স্পেন ও ফ্রান্সের আশ্রিত রাজ্যে। ভৌগোলিক কারণে পরে ফ্রান্স এককভাবে দখল করে নেয় মরক্কো। চার দশকের সংগ্রামের পর ১৯৫৬ সালে স্বাধীনতা লাভ করে দেশটি। গড়ে ওঠে নিজস্বতা। ফুটবল বিশ্বকাপে প্রথম সুযোগ আসে ১৯৭০ সালে। কাতারে পঞ্চমবারের মাথায় বিশ্বকাপ খেলতে এসে তারা গড়েছে এমন কীর্তি, যা আফ্রিকার অন্য কোনো দেশের নেই। প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে ফিফা বিশ্বকাপের শেষ চারে উঠেছে মরক্কো। শেষ ষোলোতে তারা টাইব্রেকারে হারায় স্পেনকে। যাদের কাছ থেকে হারানো অঞ্চলগুলো পুনরুদ্ধার করতে স্বাধীনতার পরও যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হয়েছিল দেশটিকে। এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে আসরের অন্যতম ফেভারিট পর্তুগালকে ১-০তে হারায় মরক্কো। গ্রুপপর্বে তাদের কাছে উড়িয়ে গিয়েছিল ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের ২ নম্বর দল বেলজিয়াম। আরেক সেমিফাইনালিস্ট ক্রোয়েশিয়াও ভেদ করতে পারেনি মরক্কোর রক্ষণ।
রোমান সাইসসহ দলের রক্ষণভাগের কয়েকজন খেলোয়াড়ের ইনজুরি থাকাটা মরক্কোর জন্য বড় ধাক্কা। তবে চোটকে বাধা মানতে রাজি নন ইয়াহিয়া আতিয়াতুল্লাহ। ফ্রান্সকে ‘কঠিন’ প্রতিপক্ষ মানলেও ‘অজেয়’ মানতে নারাজ তিনি। আতিয়াতুল্লাহ বলেন, ‘মরক্কোর জনগণকে খুশি করতে নিজেদের চেষ্টার কমতি রাখবো না আমরা। নিজেদের সামর্থ্যে বিশ্বাস আছে আমাদের। ঐতিহাসিক ম্যাচে নিজেদের সেরাটা খেলতে চাই আমরা। জানি ফ্রান্স কত শক্ত দল। কিন্তু ম্যাচ শুরু করবে বড় আশা নিয়েই। ক্রোয়েশিয়া, বেলজিয়াম, কানাডার সঙ্গে কঠিন গ্রুপ থেকে আমরা নকআউট রাউন্ডে এসেছিলাম। আমাদের সমর্থকরা কখনো আমাদের ওপর থেকে আস্থা হারায়নি। আমরা সকল আরব ও আফ্রিকান সমর্থকদের ধন্যবাদ জানাতে চাই।’
ফ্রান্সের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ১১ ম্যাচ খেলেছে মরক্কো। জয় একটি। ১৯৬৩ সালে প্রথম দেখাতেই ফ্রান্সকে ২-১ গোলে হারিয়ে দিয়েছিল মরক্কো। এরপর কেবল দু’বার ড্র করতে পেরেছে তারা। সবশেষ ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে দু’দলের শেষ দেখা। ম্যাচটি ড্র হয়েছিল ২-২ গোলে। মরক্কো কোচ ওয়াদি রেগরাগি বলেন, ‘আমরা ক্ষুধার্ত হয়ে আছি এবং ক্লান্ত নই।’
ফ্রান্সের শক্তিশালী আক্রমণভাগ আটকে দেওয়ার মতো ডিফেন্ডার রয়েছে মরক্কোর। প্রধান হুমকি এমবাপ্পেকে সামলানোর দায়িত্ব পড়েছে আশরাফি হাকিমির কাঁধে। ক্লাব পর্যায়ে একসঙ্গে খেলার সুবাদে এমবাপ্পের শক্তি-দুর্বলতা সম্পর্কে ভালোই জানেন হাকিমি। মরক্কো গোলরক্ষরক ইয়াসিন বুনু তাদের অন্যতম শক্তির জায়গা। চার ম্যাচের তিনটিতেই ক্লিনশিট রেখেছেন লা লিগার গতবারের বর্ষসেরা গোলরক্ষক। আক্রমণভাগে হাকিম জিয়াশ ও ইউসুফ আন-নাসেরি নিজেদের গতি কাজে লাগিয়ে বিপদ ঘটাতে পারেন ফ্রান্সের। গ্রুপপর্বে আরেক আফ্রিকান দল তিউনিশিয়ার কাছে হেরে যায় ফ্রান্স। মরক্কোর মুখোমুখি হওয়ার আগে ফরাসি গোলরক্ষক হুগো লরিস বলেন, ‘ওরা যা করেছে, তাতে আমরা কেবল প্রশংসাই করতে পারি। এগুলো কিন্তু দৈবক্রমে হয়নি। একটা দল যখন বেলজিয়াম, স্পেন ও পর্তুগালকে হারিয়ে দেয়, বুঝতে হবে তাদের অনেক কোয়ালিটি আছে।’