এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংকের কেনাকাটা ব্যয়, নিয়োগ পদ্ধতি এবং অফিসে ব্যবহারের ক্ষেত্রে গুরুতর অনিয়মের খোঁজ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। খবর দ্য বিজনেস পোস্টের।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি বিশেষ পরিদর্শন প্রতিবেদনে এসব চাঞ্চল্যকর অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
এতে বলা হয়েছে, ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম আউলিয়া এই ধরনের অনিয়মের সাথে সরাসরি জড়িত।
ব্যাংকের কয়েকজন পরিচালক এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি গঠন করেছে। সেখানে কোনো নিয়ম মানা হয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ১৬ জন উদ্যোক্তা পরিচালকের মধ্যে নয়জন এনআরবিসি ব্যাংকের পরিচালকও, যদিও কোম্পানীটি ব্যাংকের কোনো সহযোগী প্রতিষ্ঠান নয়। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধিবিধানের লঙ্ঘন হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কোম্পানির মাধ্যমে ব্যাংকে নিয়োগ বাড়ছে, সার্ভিস চার্জের পরিমাণও বাড়ছে। ব্যাংকের ব্যয়ও বেড়েছে।
২০২১ সালের মার্চ মাসে এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল ব্যাংকটি। তখন এ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম আউলিয়া ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। তাই তিনিও এই ধরনের অনিয়মের সাথে সরাসরি জড়িত বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন দল বলছে, ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল গুলশান ও মতিঝিলে দুটি অফিস ব্যবহার করছেন, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মের লঙ্ঘন। এ অনিয়মের সঙ্গে ব্যাংক ব্যবস্থাপনা কমিটিও জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
বেসরকারি ব্যাংকটিতে কোনো ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা ছাড়াই তিন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাকে স্থায়ী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে এবং এই পদক্ষেপটি ব্যাংকিং নিয়ম লঙ্ঘন করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, ব্যাংকে পদমর্যাদা অনুযায়ী স্থায়ী কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য তিন থেকে বিশ বছরের ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ব্যাংকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম লঙ্ঘন করে সম্মানী ও অন্যান্য খরচের আওতায় পরিচালনা পর্ষদের সভায় বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে।
চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল থেকে ২৪ মে পর্যন্ত ব্যাংকটি পরিদর্শন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি টিম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনআরবিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম আউলিয়া বলেন, “এটা ঠিক কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের ব্যাংকে কিছু ছোটখাটো অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে, তবে সেগুলি অনেক পুরানো।”
ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেও কোনো বক্তব্য পায়নি। প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ক্ষুদে বার্তা দিলেও কোনো উত্তর দেননি তিনি।
২০১৩ সালে পরিচালনার লাইসেন্স পায় ব্যাংকটি। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে এনআরবিসি ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেওয়ান মুজিবুর রহমানকে দুর্নীতির জন্য অপসারণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর সাবেক চেয়ারম্যান ফরাছত আলী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এদিকে ২০১৭ সালে দুর্নীতির অভিযোগে ব্যাংকের সাবেক এই চেয়ারম্যান ফরাছতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।