স্থানীয় ও রপ্তানি বাজারে চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লালচাঁদপুরে আরএফএল বাইসাইকেল কারখানা উদ্বোধন হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এর উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এ সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
সম্মানিত অতিথি ছিলেন রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি মোহাম্মাদ আবদুল আলীম মাহমুদ, এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, রংপুর জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন ও পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরী।
সভাপতিত্ব করেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরএন পাল।
এতদিন হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে ছিল আরএফএল-এর একমাত্র বাইসাইকেল কারখানা। এর বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা বছরে আট লাখ পিস। এই কারখানায় উৎপাদিত সাইকেল দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। তবে দেশ-বিদেশে আরএফএল বাইসাইকেলের চাহিদা বাড়ায় আমদানিনির্ভরতা কমাতে বিশেষ পরিকল্পনা নেয় আরএফএল। এরই অংশ হিসেবে হবিগঞ্জের পাশাপাশি দেশের উত্তরাঞ্চলে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় নতুন কারখানাটি চালু করা হলো। এ কারখানাটি শুধু দেশের চাহিদা মেটাবে।
গঙ্গাচড়ায় আরএফএল বাইসাইকেলের চালু হওয়া নতুন এ কারখানার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৩ লাখ পিস। বর্তমানে ৪০০ জন কাজ করছেন। পূর্ণাঙ্গ উৎপাদনে গেলে কারখানার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা হবে ৬ লাখ পিস ও কর্মসংস্থান হবে প্রায় ১ হাজার মানুষের। এ কারখানায় বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৬০ কোটি টাকা। স্থানীয় ও রপ্তানি বাজারে চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে রংপুরের গংগাচড়ায় বাইসাইকেলের আরো একটি কারখানা চালু করেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ আরএফএল।
প্রায় ৭০ হাজার বর্গফুটের এ কারখানাটিতে বাইসাইকেল ছাড়াও ফ্রেম, ফর্ক, টায়ার, টিউবসহ সাইকেলের কিছু কম্পোনেট উৎপাদন করা হবে। এ কারখানায় বিনিয়োগ করা হয়েছে প্রায় ৬০ কোটি টাকা। এতে প্রায় ১০০০ মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
আরএফএল গ্রুপ ২০১৪ সাল থেকে বাইসাইকেল উৎপাদন ও বাজারজাত করে আসছে। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে আরএফএলের বাইসাইকেলের প্রথম কারখানাটি অবস্থিত। বর্তমানে কারখানাটির উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে বছরে আট লাখ পিস।
আরএফএলের উৎপাদিত বাইসাইকেল বর্তমানে ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, ডেনমার্ক, জার্মানী, অস্ট্রিয়া ও বেলজিয়ামসহ ১৫টি দেশে রপ্তানি করা হয়। তাছাড়া ‘দুরন্ত’ নামে বাজারজাত হওয়া আরএফএল গ্রুপের উৎপাদিত বাইসাইকেল দেশের বাজারে ব্যাপক জনপ্রিয়।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, “আমরা যুদ্ধের সময় লড়াই করে দেশকে মুক্ত করেছি। এখন দেশের অথনৈতিক মুক্তির লড়াইয়ে রয়েছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। প্রাণ-আরএফএল এখন কৃষকদের নিয়ে কাজ করছে, গ্রামের মানুষকে নিয়ে কাজ করছে। ভারতের সব জায়গায় বিশেষ করে আসামে প্রাণ এর পণ্য ছেয়ে গেছে। এগুলো সবই আমাদের বিজয়গাঁথা”। তিনি আরও বলেন, পৃথিবীজুড়ে বিশেষকরে ইউরোপে বাংলাদেশের সাইকেল রপ্তানি হচ্ছে। ইউরোপে যখন মেড ইন বাংলাদেশ পণ্য দেখি তখন বুকটা ভরে যায়।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী আহসান খান চৌধুরী বলেন, স্থানীয় ও রপ্তানি বাজারে চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে রংপুরের গংগাচড়ায় আরএফএল গ্রুপ বাইসাইকেলের দ্বিতীয় কারখানা চালু করলো। স্থানীয় বাজারের সকল সাইকেল এখানে তৈরি করা হবে। পূর্ণাঙ্গ উৎপাদনে গেলে কারখানার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা হবে ছয় লাখ পিস। তাছাড়া, এ খাতে দক্ষ জনবল তৈরি এবং দেশের উত্তরাঞ্চলে কর্মসংস্থান তৈরি করার উদ্দেশ্য এ কারখানা স্থাপন করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে দেশের হালকা প্রকৌশল খাত বিকাশ লাভ করেছে। বাইসাইকেলসহ এ খাতের বিভিন্ন ধরনের পণ্যের আমদানি নির্ভরতা কমেছে। শুধু তাই নয়, এ খাতের রপ্তানি আয়ও ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা আশা করি, খুব শীঘ্রই হালকা প্রকৌশল খাত দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হবে এবং এ খাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে চায় আরএফএল গ্রুপ।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশ পুলিশের রংপুর রেঞ্জের উপ মহাপুলিশ পরিদর্শক মোহাঃ আবদুল আলীম মাহমুদ, এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, রংপুরের জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন, পুলিশ সুপার মোঃ ফেরদৌস আলী চৌধুরী ও আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরএন পাল বক্তব্য রাখেন।