দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করা জাতির বীর সন্তানদের চির স্মরণে রাখার অঙ্গীকার আর বিনম্র শ্রদ্ধা ও যথাযোগ্য মর্যাদায় সারাদেশে নানা আয়োজনে উদযাপিত হয়েছে মহান বিজয় দিবস। সকাল ৬টায় সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কর্মসূচির সূচনা করেন। এরপর শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। পরে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে দলের পক্ষে শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন। এরপর সাভার স্মৃতিসৌধ খুলে দেয়া হয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষের জন্য। মুহূর্তে সাধারণ মানুষের ঢল নামে স্মৃতিসৌধে। বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন।
পরে সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান তিনি। পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে আবারও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা।
বিজয় দিবসে জাতীয় প্যারেড গাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজ। এতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও ছিলেন বিশিষ্টজনরা। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে যাওয়ার পর জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এরপর খোলা জিপে চড়ে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। এ সময় বিভিন্ন পদাতিক বাহিনীর পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতিকে সালাম জানানো হয়। রাষ্ট্রপতি তাদের সালাম গ্রহণ করেন। সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকষ দল মঞ্চের সামনের দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রীকে সালাম জানায়। তিনি মার্চ পাস্ট, দর্শনীয় ফ্লাই-পাস্ট এবং এরোবেটিক ডিসপ্লে উপভোগ করেন।
কন্যা ও নাতনিকে নিয়ে মহান বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ উপভোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ প্রধান অতিথি হিসেবে অভিবাদন গ্রহণ ও কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মেয়ে বাংলাদেশের অটিজম বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি সায়মা ওয়াজেদ ও নাতনি সামা হোসাইন উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সকাল ১০টা ২২ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঞ্চের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় আনুষ্ঠানিক একটি মোটর শোভাযাত্রা সহকারে অশ্বারোহী এবং মিলিটারি পুলিশের দল স্কট করে তাকে মঞ্চে নিয়ে যায়। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল মঞ্চের সামনে দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রীকে সালাম জানায়। তিনি সালাম গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধানরা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব।
দিবসটি উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হয়। এ ছাড়া সব সরকারি-আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় করা হয় আলোকসজ্জার ব্যবস্থা। রাজধানী ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপগুলো জাতীয় পতাকা ও রঙ-বেরঙের পতাকায় সাজানো হয়। জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ সব ধর্মের উপাসনালয়ে মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হয়। হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, শিশু পরিবার ও ভবঘুরে প্রতিষ্ঠানগুলোয় উন্নতমানের খাবার সরবরাহ করা হয়।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীর হাতিরঝিল, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, চন্দ্রিমা উদ্যান, রমনা, সংসদ ভবন এলাকা, ঢাবির টিএসসি, কলাভবন, কার্জন হলসহ গোটা রাজধানীজুড়ে ছিল উপচেপড়া মানুষের ভিড়। মাথায় জাতীয় পতাকা ও লাল-সবুজ টি-শার্ট পরে টিএসসিতে হই-হুল্লোড়েই ব্যস্ত ছিল প্রতিটি প্রাণ। বিজয়ের চেতনা ধারণ করে ছবি তোলার অলিখিত প্রতিযোগিতা চলছিল ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বিভিন্ন সংগঠনের আয়োজনে চলে নৃত্য, অঙ্কন, রক্তদান কর্মসূচি, পথনাটক ও আলোচনা সভা। চলে সঙ্গীত ও গণসঙ্গীত পরিবেশনও।
দিবসটি উপলক্ষে সকল ধরনের সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ পালন করে। এ সব সংগঠনের মধ্যে আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী দল, জাতীয় পার্টি, গণফোরাম, ন্যাশনাল ডেমক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)।
সকালে সাভার স্মৃতিসৌধে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিজয়ের একান্ন বছর পরও এ দেশকে এখনো সুষম করতে পারিনি। এখনো বিজয়কে উপভোগ করা যায়নি। তিনি বলেন, এখনো সাম্প্রদায়িক শক্তি জঙ্গিবাদী বিএনপি বিজয়কে নস্যাৎ করতে তৎপর। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে এদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান।
সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপিসহ দেশবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী সমস্ত অপশক্তি ও ষড়যন্ত্রকে দমন-নির্মূল করে ২০৪১ সাল নাগাদ একটি পরিপূর্ণ উন্নত দেশে পরিণত করা এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা রূপায়িত ডিজিটাল বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করাই আমাদের স্বপ্ন এবং বিজয় দিবসের প্রত্যয়।
এদিকে ৫১তম মহান বিজয় দিবস, উপলক্ষে বীর শহীদদের প্রতি লাখো জনতার শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে ওঠে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। সকাল থেকেই হাতে লাল সবুজের পতাকা আর রঙ-বেরঙের ফুল নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে আসেন লাখো জনতা। সাধারণ মানুষ তাদের ভালোবাসা দিয়ে স্মরণ করেন স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ জাতির সূর্য্য সন্তানদের। দিনের শুরুতেই জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। তখন তিন বাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল তাদের সালাম জানায়। এরপর পুনরায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদিতে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, তিন বাহিনীর প্রধান, ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার, ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসক ও দেশি-বিদেশি কূটনৈতিকরা।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধ ত্যাগ করার পর সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় স্মৃতিসৌধ। বিজয়ের ৫১তম বার্ষিকীতে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানানোর পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের বিজয় এখনো সংহত হয়নি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরাজিত আর সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তিনি আরও বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার যে প্রত্যয় দিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন, অপ্রতিরোধ্য গতিতে যেভাবে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ, সেই ধারা অব্যাহত রাখাই আমাদের প্রত্যয়।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আমরা স্বাধীনতার ৫১ বছর পাড়ি দিয়েছি। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা ছিল, মুক্তিযোদ্ধাদের এবং শহীদ জিয়ার স্বপ্ন ছিল দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে, দেশে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা এবং মানবিক মর্যাদা ও মানবিক অধিকার এবং এ দেশের মানুষের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে, সেই স্বপ্ন নিয়ে এই মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। দুর্ভাগ্য আমাদের, ৫১ বছর পরেও আজ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সম্পূর্ণ ভূলুণ্ঠিত। দেশে গণতন্ত্র নেই। সকাল ১০টার দিকে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। খন্দকার মোশাররফ আরও বলেন, দেশে মানবাধিকার নেই, অর্থনীতি লুটপাট হচ্ছে, চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। আমাদের সম্পদ দেশ থেকে বিদেশে পাচার করে দেয়ায় অর্থনীতি প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। দেশের মানুষ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশাহারা। লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত।
ভোট ডাকাতি করে সরকার ক্ষমতায় এসেছে অভিযোগ করে খন্দকার মোশাররফ আরও বলেন, এই সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য গায়ের জোরে দিনের ভোট রাতে ডাকাতি করে ক্ষমতায় এসেছে। আবারো এ ধরনের একটি নির্বাচন করার জন্য বিএনপি’র নেতাকর্মীদের নির্যাতন-নিপীড়ন করছে। ঢাকায় ১০ই ডিসেম্বরের গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে ৭ই ডিসেম্বরের আগে ও পরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে কারাগারে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এই সরকার যে তাদের পুরনো দমননীতি ফের চালাচ্ছে, এবারই নগ্ন চরিত্র তার বহিঃপ্রকাশ। আজকে সারা দেশের মানুষ বিক্ষুব্ধ। শুধু আমাদের দেশে নয় আন্তর্জাতিকভাবেও বিক্ষুব্ধ। দেশের মানুষের আশা সুষ্ঠু নির্বাচন, উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের মানুষ একটি নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলেও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। এবারের বিজয় দিবসে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা বাস্তবায়নের জন্য জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।
স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের সঙ্গে বিএনপি আর কতদিন থাকবে জানতে চাইলে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা যে ১০ দফা ঘোষণা করেছি। এখানে এমন কোনো দফা নেই যেটা জনগণ চায় না। জনগণের দাবিকে আমরা দফায় রূপান্তর করেছি। আর যুগপৎ আন্দোলনের কথা আমরা ঘোষণা করেছি। এর সঙ্গে কে আসবে, কে আসবে না, এ ব্যাপারে তো আমরা কথা বলতে পারি না। আমাদের কোনো বক্তব্য থাকে না। এ ছাড়া যারা এই সরকারের বিদায় চায়, দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চায়। যারাই হোক, যেকোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী, দল যদি এই ইস্যুতে একমত হয়, তারা নিজ নিজ জায়গা থেকে আন্দোলন করলে তাহলে আমরা তো তাদের নিষেধ করতে পারবো না।
এ সময় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহাজাহান ওমর, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা এডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু ও বিএনপি’র ঢাকা জেলার নেতা সালাউদ্দিন বাবুসহ বিএনপি’র সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, ‘পঞ্চাশ বছরেও স্বাধীনতার চেতনা বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা এখনো মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, উদ্দেশ্য অর্জন করতে পারিনি। শোষণ, বঞ্চনা, দুর্নীতি ও দুঃশাসনসহ সম্পদের সুষম বণ্টন করতে পারিনি। সুশাসন ও গণতন্ত্র কায়েম করতে না পারায় দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি মেলেনি। বিভিন্ন সময়ে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সঙ্গে ঐক্য করেছে। কিন্তু আমরা কখনো স্বাধীনতাবিরোধী কোন শক্তির সঙ্গে ঐক্য করবো না। মহান বিজয় দিবসে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, ‘মানুষ আজও গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত’ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হয়নি। বেকারত্ব দূর করতে দেশে কোনো উদ্যোগ নেই। এতেই প্রমাণ হয়, দেশের মানুষ স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করতে পারছে না। তাই, আগামী প্রজন্ম যেন স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ ভোগ করতে পারে সেজন্য সকল রাজনৈতিক শক্তির ঐক্যমত জরুরি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তফা আল মাহমুদ, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও ঢাকা জেলা সাধারণ সম্পাদক ইসরাফিল খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হেলাল উদ্দিন, দপ্তর সম্পাদক এম এ রাজ্জাক খান, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক বাহারুল ইসলাম ইমতিয়াজসহ স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জাসদ সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, যারা এখনো বিএনপি’র সঙ্গে মিটমাটের কথা বলে তারা কার্যত রাজাকারকে বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিচ্ছে। সুতরাং কোনো মিটমাটের জায়গা নেই। ৭৫ এর পরে যে আপস রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে যুদ্ধাপরাধী ও তাদের দোসর রাজনীতির বিষবৃক্ষ বিএনপি’র সঙ্গে সেই আপসের রাজনীতিটা পরিত্যাগ করা উচিত। আমি মনে করি তাদের সঙ্গে কোনো আপস নয়, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটাই সিদ্ধান্ত যেকোনো মূল্যে রাজাকার সমর্থিত বিএনপিকে ক্ষমতার বাইরে রাখতে হবে এবং রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে বিতাড়িত করতে হবে। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
সকাল ৭টা থেকে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, বিএনপি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাসদ, বাসদ ও ডক্টর এসোসিয়েশন অব ড্যাবসহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন দলে দলে স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের শ্রদ্ধায় ফুলে ফুলে ভরে ওঠে স্মৃতিসৌধের বেদি।