একে তো অভিষেক টেস্ট, তার ওপর আবার প্রবল চাপ। অভিজ্ঞ ব্যাটাররা যেখানে আত্মসমর্পণ করছেন, নবাগত জাকির সেখানে আঁকড়ে পড়ে থাকলেন বেশির ভাগ সময়। সব কটি পরীক্ষাতেই পাস মার্ক তুলে নিলেন অভিষেক টেস্ট সেঞ্চুরিতে রাঙিয়ে।
প্রথম ইনিংসে প্রত্যাশা মেটাতে না পারলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ঠিকই দৃঢ়চেতা মেজাজে ব্যাটিংটা করলেন। দ্বিতীয়বার যখন নামলেন মাথার ওপর ৫১৩ রানের বোঝা! এই অবস্থায় ভারতীয় বোলারদের খুব একটা সুযোগও দেননি। লাঞ্চের ঠিক আগের ওভারে ভারতের ফিল্ডারদের কল্যাণে একবার জীবন পেয়েছিলেন যদিও। ওই একবারই; এরপর কেবল এগিয়ে যাওয়া। ৭৮তম ওভারে অক্ষর প্যাটেলকে সুইপ শটে বাউন্ডারি মারতেই ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছেন। ওপেনার হিসেবে বাংলাদেশের প্রথম, চতুর্থ ইনিংসে ওপেনার হিসেবে বিশ্বের দ্বিতীয় এবং অভিষেকে বাংলাদেশের চতুর্থ ব্যাটার হিসেবে সেঞ্চুরি করার কীর্তি এখন জাকিরের।
দারুণ এই শতকের পর অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। রবীচন্দন অশ্বিনের বলটি অফস্ট্যাম্পে পড়ে কিছুটা টার্ন নিয়ে ভেতরে ঢুকেছিল। সিলেট থেকে উঠে আসা এই তরুণ ডিফেন্স করেও বাঁচতে পারেননি। প্রথমে ব্যাট, তারপর প্যাড লেগে প্রথম স্লিপে থাকা কোহলির হাতে জমা পড়েছে। তাতে অভিষেক রাঙানো দুর্দান্ত একটি ইনিংসের সমাপ্তিও ঘটে সঙ্গে সঙ্গে।
অক্ষর প্যাটেলের ওভারে হাফ সেঞ্চুরি পাওয়া জাকির একই স্পিনারের বলে সুইপ করে চার মেরে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছেছেন। ২১৯ বলে ১৩ চার ও ১ ছক্কায় জাকির এই মাইফলকে পৌঁছান।
অভিষেক ম্যাচে জাকিরের আগে সেঞ্চুরি করেছেন বাংলাদেশের তিন ব্যাটার। ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করেছিলেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। চার নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম ১৪৫ রানের ইনিংস খেলেছেন। তার ওই ইনিংসের ওপর ভর করেই বাংলাদেশ প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে পায় ৪০০ রানের পুঁজি। অভিষেকে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি আসে মোহাম্মদ আশরাফুলের ব্যাট থেকে। ২০০১ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেকে সেঞ্চুরি পান সাবেক অধিনায়ক।
অভিষেকে সেঞ্চুরি করা তৃতীয় ক্রিকেটার হলেন আবুল হাসান রাজু। পেস বোলিং এই অলরাউন্ডার দশ নম্বরে নেমে বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে সেঞ্চুরি করার কীর্তি গড়েছিলেন। ২০১২ সালে খুলনাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ১১৩ রানের ইনিংস খেলেছিলে রাজু।
অবশ্য এরা সবাই মিডল অর্ডার ব্যাটার হিসেবে অভিষেকে সেঞ্চুরি পেলেও জাকির ওপেনার হিসেবে প্রথম সেঞ্চুরি পেয়েছেন। যে কোন কন্ডিশনেই চতুর্থ ইনিংসে সেঞ্চুরি করা বেশ কঠিন। ওই হিসেবে জাকিরের জন্য এটা স্পেশাল। তার আগে ১৯৭৫ সালে ক্যারিবীয় ওপেনার লিওনার্ড বাইচান অভিষেকে ওপেনার হিসেবে চতুর্থ ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছেন।