রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৩ পূর্বাহ্ন




জাকির-শান্তর ব‌্যাটে নতুন ইতিহাস

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: শনিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২২ ২:৪২ pm
Bangladesh Cricket board bcb বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বিসিবি টেস্ট ক্রিকেট Test cricket
file pic

বল হাতে তেমন কার্যকারিতা দেখাতে পারছিলেন না মোহাম্মদ সিরাজ। হাতের অস্ত্র দিয়ে যখন কাজ হচ্ছিল না, তখন জাকির হাসান ও নাজমুল হোসেন শান্তর মনোযোগ নড়াতে মুখের অস্ত্র ব‌্যবহার করা শুরু করলেন।

শান্তকে বল করেই এগিয়ে যান। স্লেজিং করে ঘাবড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু শান্ত একেবারেই শান্ত। মুখে হাসি দিয়ে ফিরিয়ে দেন ভারতীয় পেসারকে। বরং প্রতি আক্রমণে জবাব দেন। ডানহাতি পেসারের শর্ট বল পুল করে মিড উইকেট দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠান অতি সহজে। তার ওই চারে ৯৭ থেকে বাংলাদেশের রান একশ পেরিয়ে যায়।

তাতে শান্ত ও জাকির লিখে ফেলেন নতুন এক ইতিহাস। ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে প্রথমবার উদ্বোধনী জুটিতে একশ রান পেলো বাংলাদেশ। এর আগে কেবল একটি ইনিংসেই উদ্বোধনী জুটির রান পঞ্চাশ পেরিয়েছিল। ২০১০ সালে চট্টগ্রামেই ইমরুল ও তামিম ৫৩ রান করেছিলেন।

তৃতীয় দিন ৪২ রানে অপরাজিত থকে শান্ত ও জাকির দিন শেষ করেছিলেন। চতুর্থ দিনের শুরু থেকেই দুজন জমাট ব‌্যাটিং শুরু করেন। ভারতীয় বোলারদের কোনও সুযোগ না দিয়ে নিজেদের শান্ত রেখে এগিয়ে যান। বাজে বল অবশ‌্য শাসন করেছেন ঠিকই। সিরাজকে কভার ড্রাইভ ও পুল করে শান্ত পরপর দুই চার মেরেছেন অনায়াসে। উমেশকে দারুণ স্কয়ার কাটে জাকির পাঠিয়েছেন বাউন্ডারিতে। দুজন ফিফটি পেয়েছেন। বাংলাদেশের রান পেরিয়ে গেছে একশ।

উইকেটের দুই প্রান্ত থেকে ভালো ব‌্যাটিং করায় তাদের ব‌্যাটে রাঙা হয়েছে নতুন ইতিহাস। চতুর্থ ইনিংসে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় উদ্বোধনী জুটিতে শতরানের ঘটনা। ২০০৫ সালে জাভেদ ওমর বেলিম ও নাফিস ইকবাল ১৩৩ রান করেছিলেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। টপ অর্ডার ব‌্যাটিং ছিল মাথা ব‌্যথার কারণ। প্রথম ইনিংসে শান্ত গোল্ডেন ডাক পাওয়ায় বেশ সমালোচিত হয়েছিলেন। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে নিজেকে মেলে ধরেছেন বাঁহাতি ওপেনার। তাতে সাত ইনিংস পর উদ্বোধনী জুটিতে শতরান পেলো বাংলাদেশ। সবশেষ এই চট্টগ্রামেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৬২ রান করেছিলেন মাহমুদুল হাসান জয় ও তামিম ইকবাল।

আরেকটি পরিসংখ‌্যান অবাক করে দিতে পারে। তামিম ইকবালের অভিষেকের পর তাকে ছাড়া এটিই বাংলাদেশের প্রথম উদ্বোধনী জুটিতে একশ রান। ওপেনিংয়ে বাংলাদেশ নয়টি একশ পেরুনো ইনিংস পেয়েছে। তামিমের অভিষেকের আগে ছিল কেবল একটি। সেখানেও ছিলেন তার পরিবারের সদস‌্য বড় ভাই নাফিস ইকবাল।

জিম্বাবুয়ের সঙ্গে জাভেদ ওমরকে নিয়ে করেছিলেন ১৩৩ রান। এছাড়া বাকি সাতটিতেই ছিলেন তামিম। তার সঙ্গী হয়ে শতরানের চারটি জুটিতে ছিলেন ইমরুল কায়েস। একটি করে ছিলেন সৌম‌্য সরকার, জুনায়েদ সিদ্দীক ও মাহমুদুল হাসান জয়।

শান্ত ও জাকিরের শান্ত মেজাজের ব‌্যাটিংয়ে এই টেস্টে এখন পর্যন্ত স্বপ্নের মতো সেশন কাটিয়েছে বাংলাদেশ। কোনও উইকেট না হারিয়ে বাংলাদেশের রান ১১৯। অভিষিক্ত জাকির ৫৫ ও শান্ত ৬৪ রানে অপরাজিত আছেন। ভারত ৫১৩ রানের লক্ষ‌্য দিয়ে বাংলাদেশকে ব‌্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিল। লক্ষ‌্য থেকে এখনও ৩৯৪ রান দূরে বাংলাদেশ। হাতে আছে পাঁচ সেশন।

সেঞ্চুরির পথে জাকির

১৯ রান করে থামলেন লিটন দাস। জাকির হাসানের সঙ্গে ৪২ রানের জুটি গড়ে ফিরে গেছেন তিনি। কুলদীপ যাদবের বলে লং অনে উমেশ যাদবের ক্যাচ হন তিনি। তার ৫৯ বলের ইনিংসে ছিল ২ চার। দলীয় ১৭৩ রানে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। প্রথম হাফ সেঞ্চুরিকে সেঞ্চুরি বানাতে আর ১৮ রান দরকার জাকিরের। সঙ্গে আছেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। চা বিরতিতে বাংলাদেশের স্কোর ৩ উইকেটে ১৭৬ রান।

বড় অবদান রাখতে পারলেন না ইয়াসির

১২৪ রানে উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর তিনে ব্যাট করতে নেমেছিলেন ইয়াসির আলী। কিন্তু সেট ব্যাটসম্যান জাকির হাসানকে বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারলেন না। মাত্র ১২ বল খেলে ৫ রান করে বোল্ড হলেন অক্ষর প্যাটেলের কাছে। ১৩১ রানে ২ উইকেট হারালো বাংলাদেশ। জাকিরের সঙ্গে ক্রিজে যোগ দিয়েছেন লিটন দাস।

১২৪ রানে ভাঙলো উদ্বোধনী জুটি

দ্বিতীয় সেশনে ভেঙে গেলো বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি। নাজমুল হোসেন শান্ত ৬৭ রান করে থামলেন। উমেশ যাদবের বলে আউটসাইড এজ হয়ে বল উঁচু হয়ে বিরাট কোহলির দিকে ছুটে যায়। বল ধরতে গিয়েও ফসকে যায়, সতর্ক ছিলেন রিশাভ পান্ত। দ্রুত এক হাতে দারুণ ক্যাচ ধরেন ভারতীয় উইকেটকিপার।

১২৪ রানে ভেঙেছে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি। ১৫৬ বলের ইনিংসে রয়েছে ৭ চার। ক্রিজে নেমেছেন ইয়াসির আলী রাব্বি, সঙ্গে জাকির হাসান।

শান্ত-জাকিরের ফিফটিতে প্রথম সেশন বাংলাদেশের

ভারতের বিপক্ষে চতুর্থ দিন প্রথম সেশনে বাংলাদেশের ব্যাটিং দাপট চললো। লাঞ্চের আগে এদিন তাদের স্কোরবোর্ডে যোগ হয়েছে ৭৭ রান। আগের দিন ৪২ রানের অপরাজিত জুটি গড়ে দিন শুরু করেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও জাকির হাসান। দুজনেই পেয়েছেন ফিফটি। জাকির ৫৫ ও শান্ত ৬৪ রানে অপরাজিত ছিলেন। প্রথম সেশনের শেষ ওভারে সিঙ্গেল নিতে গিয়ে চেতেশ্বর পুজারার থ্রোতে নন স্ট্রাইক এন্ডে হাঁটুতে আঘাত পান জাকির। প্রাথমিক চিকিৎসার পর আবার ব্যাটিং শুরু করেন তিনি। বাংলাদেশের সংগ্রহ কোনও উইকেট না হারিয়ে ১১৯ রান, জিততে আরও ৩৯৪ রান করতে হবে স্বাগতিকদের।

অভিষেকে জাকিরের হাফ সেঞ্চুরি

প্রথম ইনিংসে দারুণ শুরুর পর ২০ রানে আউট হন জাকির হাসান। তবে পরের ইনিংসে নিজেকে চেনালেন তিনি। ক্যারিয়ারের অভিষেক টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে পেলেন প্রথম হাফ সেঞ্চুরির দেখা। ৪০তম ওভারে অক্ষর প্যাটেলকে চার মারেন। তারপর একটি ডট বল, তৃতীয় বলে মিড অন দিয়ে সিঙ্গেল নিয়ে ১০১ বলে ৭ চারে ফিফটি করেন তিনি। শতরানের জুটি গড়ার পথে নাজমুল হোসেন শান্তও পেয়েছেন হাফ সেঞ্চুরি। ৪০ ওভারে কোনও উইকেট না হারিয়ে ১১৩ রান করেছে বাংলাদেশ।

বিনা উইকেটে বাংলাদেশের ‘সেঞ্চুরি’

প্রথম ইনিংসে ১০০ রানের মধ্যে বাংলাদেশের পড়েছিল ৬ উইকেট। ৫১৩ রানের লক্ষ্যে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসে শক্ত বাংলাদেশ। কোনও উইকেট না হারিয়ে ১০০ পার করেছে স্বাগতিকরা।

এরই মধ্যে নাজমুল হোসেন শান্ত ১০৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। আরেক ওপেনার জাকির হাসানও ফিফটির পথে ছুটছেন। ৩৬তম ওভারে নিজের সপ্তম বাউন্ডারিতে দলীয় স্কোর তিন অঙ্কের ঘরে নেন শান্ত।

শান্তর স্বস্তি জাগানো হাফ সেঞ্চুরি

পাহাড়সম লক্ষ্যের সামনে দাঁড়িয়ে অসহায় আত্মসমর্পণ করছে না বাংলাদেশ। লড়াই করে যাচ্ছে তারা। অফফর্মে সমালোচিত নাজমুল হোসেন শান্ত রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বল ঠেলে দিয়ে এক রান নিয়ে পঞ্চাশ ছোঁন বাংলাদেশি ওপেনার।

১০৮ বলে ৬ চারে ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি করলেন শান্ত। ৫১৩ রানের লক্ষ্যে জাকির হাসানের সঙ্গে উদ্বোধনী জুটিতে ৮৭ রান করেছেন তিনি।

আশার আলো দেখিয়ে চতুর্থ দিনের খেলা শুরু

শেষ দুই দিনে চট্টগ্রাম টেস্ট জিততে বাংলাদেশের দরকার আরও ৪৭১ রান এবং ভারতের চাই ১০ উইকেট। জিততে হলে রেকর্ড গড়তে হবে স্বাগতিকদের। কারণ ৪১৮ রানের বেশি তাড়া করে জয়ের রেকর্ড নেই টেস্ট ইতিহাসে।

তবে শেষ দুই দিন বাংলাদেশ অবিশ্বাস্য প্রতিরোধ গড়ে নজর কাড়তে পারে কি না সেটাই দেখার বিষয়।

৫১৩ রানের বিশাল লক্ষ‌্য তাড়া করতে নেমে তৃতীয় দিন শেষ বিকেলে ১২ ওভার ব‌্যাটিংয়ের সুযোগ মেলে। কোনও উইকেট হারালে পিছিয়ে যেতো স্বাগতিকরা।

দুই ওপেনার স্বাগতিকদের বিপদে পড়তে দেননি। উল্টো প্রতি আক্রমণে লড়াই চালিয়েছেন। তাতে ভালো আত্মবিশ্বাস নিয়ে দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ। কোনও উইকেট না হারিয়ে বাংলাদেশের রান ৪২। জাকির হাসান ১৭ ও নাজমুল হোসেন শান্ত ২৫ রানে অপরাজিত আছেন। বাংলাদেশের সামনে এখনও ৪৭১ রানের চ‌্যালেঞ্জ।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD