বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) থেকে প্রতিষ্ঠা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর এই নাম বদলের এক যুগ পার হচ্ছে মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর)। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যদের মাধ্যমে পিলখানা হত্যাযজ্ঞের পর ২০১০ সালের এ দিনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) নাম নিয়ে এ বাহিনী নতুনভাবে পথ চলা শুরু করে। এদিনটি উপলক্ষে বাহিনীর পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
১৭৯৫ সালের ২৯ জুন রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন হিসেবে যাত্রা শুরু হয়েছিল এ বাহিনীর। বিজিবি হিসেবে নাম করণের আগে দীর্ঘ ৪০ বছর এ বাহিনীর নাম ছিল বাংলাদেশ রাইফেলস্ (বিডিআর)। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের পর সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী নাম পরিবর্তনসহ বাহিনীকে বিভিন্ন পর্যায়ে পুনর্গঠন করা হয়। নানা দিক থেকেই বাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানো হয়। ন্যাক্কারজনক এই ঘটনার পর বাহিনীর নাম ও পোশাক পরিবর্তনসহ ব্যাপক সংস্কার আনা হয়। ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন-২০১০’ জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার পর ২০১০ সালের ২০ ডিসেম্বর নতুন নামে এ বাহিনী যাত্রা শুরু করে। তবে ২০১৪ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ দিবস পালন শুরু করে বিজিবি।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিদ্রোহীরা ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করে বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যরা। অনেকেই নির্যাতিত হন বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যদের হাতে।
আজ ২০ ডিসেম্বর (২০২২) বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দিবসের কর্মসূচি অনুযায়ী ফজরের নামাজের পর পিলখানার সব মসজিদে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ ডিজির সচিবালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজিবি’র রেজিমেন্টাল পতাকা উত্তোলন এবং সীমান্ত গৌরবে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
সকাল ১০টায় বিজিবি সদর দফতরের বীরউত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে বিজিবি দিবসের আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ, বিজিবিতে বীরত্বপূর্ণ ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিজিবি সদস্যদের পদক প্রদান এবং পরে বিজিবি সদস্যদের বিশেষ দরবার নেবেন।
এছাড়া বিজিবি দিবস-২০২২ উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বিরাজমান পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ও আস্থা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার বিকালে যশোরের বেনাপোল, পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থলবন্দর সংলগ্ন আইসিপিতে বিজিবি-বিএসএফ কর্তৃক জমকালো ‘জয়েন্ট রিট্রিট সিরিমনি’ অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া বিজিবি দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে ২১ ডিসেম্বর সকালে পিলখানায় সীমান্ত সম্মেলন কেন্দ্রে বিজিবি মহাপরিচালকের বিশেষ দরবার অনুষ্ঠিত হবে। দরবার শেষে মহাপরিচালক কর্তৃক বিজিবিতে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিজিবি’র কর্মকর্তা ও সদস্যদেরকে পদক ও ইনসিগনিয়া প্রদান করা হবে। এছাড়া অপারেশনাল কার্যক্রম, চোরাচালান নিরোধ এবং মাদকদ্রব্য আটকের ক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ কাজের জন্য পুরস্কার প্রদান এবং অনারারি সুবেদার মেজর হতে অনারারি সহকারী পরিচালক ও অনারারি সহকারী পরিচালক হতে অনারারি উপপরিচালক পদে পদোন্নতি প্রাপ্তদের র্যাংক ব্যাজ পরিধান করানো হবে। এ অনুষ্ঠানে বাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা, উত্তরাধিকারীদেরকে সংবর্ধনা, অনুদান ও উপহার প্রদান করা হবে। এদিন দুপুরে প্রীতিভোজ এবং সন্ধ্যায় পিলখানায় ঢাকা সেক্টর মাঠে বিজিবি’র নিজস্ব অর্কেস্ট্রা ও শিল্পীসহ দেশের বরেণ্য শিল্পীদের পরিবেশনায় একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
বিজিবি দিবস উদযাপন উপলক্ষে পিলখানা ছাড়াও ঢাকার বাহিরে বিজিবি’র সব রিজিয়ন, প্রতিষ্ঠান, সেক্টর ও ইউনিট পর্যায়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রেজিমেন্টাল পতাকা উত্তোলন, মিলাদ ও বিশেষ দোয়া, প্রীতিভোজ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন বাহিনীর জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম।