দেশের অন্যতম গুণী নির্মাতা হিসেবে নুরুল আলম আতিকের সুনাম রয়েছে। তবে কাজের বাইরে তিনি কারও সাতে-পাঁচে থাকেন না। বরাবরই নিজেকে আড়ালে রাখতে কিংবা নীরবে নিজের জগতে থাকতে ভালোবাসেন। সেই আতিকের সুরে হঠাৎ বিস্ফোরণ! এক নির্মাতাকে উদ্দেশ্য করে তার লম্বা স্ট্যাটাস।
সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) দেওয়া সেই স্ট্যাটাসে আতিক বলেছেন, ‘আমার সময়ের এক সেলিব্রিটি ফিল্ম-মেকার অনেক আক্ষেপ নিয়ে তার সময়ের সিনেমা-করিয়েদের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বেশ রাজনীতি করলেন ফেসবুক স্ট্যাটাসে! শিল্পীর ভূমিকা, রাষ্ট্রের দায়িত্ব ইত্যাদি ইত্যাদি! আহা, তিনি কী কী দায়িত্ব পালন করেছেন, একবার নিজে মনে করে দেখুন! নিজের আখের গোছানো ছাড়া আর কিছু কোনও দিন করেছেন? হ্যাঁ, করেছেন। দল পাকিয়েছেন! কেন? দল বেঁধে টাকা কামানোর জন্যে।’
ওই নির্মাতাকে উদ্দেশ্য করে আতিকের শব্দ বিস্ফোরণ, ‘করে খেয়েছেন এক বড় কাগজ আর একটা টিভি চ্যানেলের সতীর্থ ভাইবেরাদরদের নিয়ে। নাকে সর্ষের তেল দিয়ে, বিজ্ঞাপনে ঘুম পাড়িয়ে যে ৩০০ পরিবারের সর্বনাশ করেছেন, কোনও দিন তাদের খোঁজ নিয়েছেন? নেন নাই! আর আমার সময়ের সিনেমার অন্যতম সম্ভাবনাগুলাকে আপনাদের চরদখলি লাইঠাল বাহিনীর মাস্তানিতে নস্যাৎ হতেও দেখলাম। কী জবর-দখলের রাজনীতি-দর্শন! করে খাইছেন শুধু!’
সবশেষে নুরুল আলম আতিকের ভাষ্যে হুমকির সুর, ‘নানান সামপ্রতিক বিযয়কে, ব্যক্তিকে নিয়া নাড়াচাড়ার ব্যবসায়িক সুখেই থাকছেন। আর এখন এক বিশাল, বিপ্লবী আওয়াজ তুলছেন! এতকাল দেশে-বিদেশে কী বেচলেন তা অল্পকিছুদিন বাদে সবাই জানবে। কারণ পরের মানু্ষ আরও স্পষ্ট করে কিছু হাজির করতে শুরু করেছেন! আর তাবেদারদেরও ব্যবসার ইতি ঘটবে শিগগিরই!’
প্রশ্ন হলো, কার দিকে এই তীর ছুঁড়েছেন নুরুল আলম আতিক? যদিও তিনি কারও নাম উল্লেখ করেননি, তবে ধারণা করা হচ্ছে, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তার নিশানা। কেননা বেশ কিছুদিন ধরে সিনেমার স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলছেন ফারুকী। তার নির্মিত ‘শনিবার বিকেল’ ছবিটি সেন্সর বোর্ডে বছরের পর বছর ধরে আটকে থাকার কারণেই তিনি প্রতিবাদের আওয়াজ তুলছেন বলে মনে করেন অনেকে।
নুরুল আলম আতিক তার অভিযোগের ফিরিস্তিতে ফারুকীর নাম না বললেও ইতোমধ্যে মিডিয়ায় বিরাজ করছে চাপা উত্তেজনা। কেউ মুখ ফুটে কিছু বলছেন না বটে, কিন্তু ভেতরে ভেতরে বিষয়টি নিয়ে ঠিকই কানাঘুষা চলছে।
সবশেষ ফারুকী রবিবার রবিবার (১৮ ডিসেম্বর) দেশের নির্মাতাদের উদ্দেশে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘আমরা এমন এক সময় নির্মাণ করেছি সবাই মিলে, যখন দেশে কারও সিনেমা সেন্সর সার্টিফিকেট পাইলে অন্যরা অভিনন্দন জানায়। যেন সিনেমার সেন্সর পাওয়াও এক বিরাট সাফল্য। ভাবেন অবস্থা। আমরা এমন এক সময় নির্মাণ করেছি, অন্যায়ভাবে আমাদের সিনেমা আটকে দিলেও আমরা এতো মৃদু কন্ঠে কথা বলতে চাই, যেন মান্যবরেরা মাইন্ড না করেন। যেনো সিনেমা আটকানোটা অন্যায় না, মান্যবরকে বিরক্ত করাটা অন্যায়।’
নির্মাতাদের একতাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ফারুকীর বক্তব্য, “আমাদের ফিল্মমেকার এবং শিল্পীদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আমরা মহাকালের কাছে নিজেদের কোন পরিচয় রেখে যেতে চাই। আমরা কি চাই ভবিষ্যত আমাদের চিহ্নিত করুক এই পরিচয়ে যে, ‘ইহারা ছিলেন একদল ফিল্মমেকার যাহারা নিরাপদ বিপ্লব চাহিয়াছিলো?’ যদি তা না চাই, তাহলে আমাদেরকে যার যার জায়গা থেকে বলতে হবে, গল্প বলার স্বাধীনতা চাই। কথা বলার স্বাধীনতা চাই। কোনও কিছুর বিনিময়েই এটা নেগোশিয়েট করা যাবে না! আমাদের মত ভিন্ন হতে পারে, ভোটের বাজারে আমরা যার যাকে পছন্দ তার পক্ষে কাজ করতে পারি, কিন্তু গল্প বলবার স্বাধীনতায় যদি কেউ হাত দেয়, আমাদের এক হয়ে চিৎকার করতে হবে।”
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনার ছায়া অবলম্বনে ‘শনিবার বিকেল’ নির্মাণ করেছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় ধরে এটি সেন্সর বোর্ডে আটকে আছে। মুক্তির অনুমতি পাচ্ছে না। ছবিটিতে অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান, নুসরাত ইমরোজ তিশা, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, ইয়াদ হুরানি প্রমুখ।