বাংলাদেশসহ অন্য রাষ্ট্রগুলো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্তদের মানবাধিকার রক্ষায় তেমন উদ্যোগী নয়। অথচ দুর্যোগকালীন ক্ষতি এবং পরবর্তী সময়ে ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীর জীবনে নেমে আসে চরম দুর্গতি। তাই দেশে জলবায়ু-ক্ষতিগ্রস্তদের মানবাধিকার সুরক্ষায় পৃথক নীতিমালা প্রণয়ন সময়ের দাবি।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। উন্নয়ন সংস্থা ডিয়াকোনিয়া এবং ব্রেড ফর দ্য ওয়ার্ল্ডের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ডিয়াকোনিয়ার কান্ট্রি ডিরেক্টর খোদেজা সুলতানা লোপা, হেলভেটাস বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার আশিস বড়ুয়া, প্রাকটিক্যাল অ্যাকশনের রিজিওনাল ক্লাইমেট এবং রেসিলিয়েন্ট অ্যাডভোকেসি ম্যানেজার শাহনেওয়াজ ওয়ারা। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞ, নীতিনির্ধারকরা মতামত ব্যক্ত করেন। জলবায়ু পরিবর্তন ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীর খাদ্য, পানি, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষার অধিকার প্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
সভাপতির বক্তব্যে সিপিআরডির নির্বাহী প্রধান শামসুদ্দোহা বলেন, সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে বিপর্যস্ত বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যক্তি, সম্প্রদায় ও বহুমুখী ঝুঁকি অনুসন্ধানে গবেষণা পরিচালনা করা হয়। দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তন ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীর খাদ্য, পানি, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষার অধিকার প্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
মো. শামসুদ্দোহা জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে বিপর্যস্ত নানা অঞ্চলে ব্যক্তি এবং সম্প্রদায় পর্যায়ে ভিন্ন ও বহুমুখী বিপদাপন্নতার চিত্র অনুসন্ধানে সিপিআরডি এরই মধ্যে কয়েকটি গবেষণা ও অনুসন্ধানী কার্যক্রম পরিচালনা করে এ তথ্য জেনেছে।
মো. শামসুদ্দোহা বলেন, অনুসন্ধানে দেখা গেছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাত্রা ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠী বা ব্যক্তির সামাজিক, ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক এবং লৈঙ্গিক পরিচয়ের ওপর নির্ভর করে। আর্থিকভাবে দুর্বল বা শারীরিক প্রতিবন্ধী নারীদের মানবাধিকার সব থেকে বেশি লঙ্ঘিত হয়। জলবায়ু পরিবর্তন ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীর মানবাধিকারকে কয়েকটি ধাপে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
দুর্যোগকালীন ক্ষয়ক্ষতি এবং দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে সেই অভিঘাত ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীর জীবনে নিয়ে আসে চরম দুর্গতি। রাষ্ট্রগুলোও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের মানবাধিকার লঙ্ঘন সুরক্ষায় তেমন উদ্যোগী নয়। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের ঐতিহাসিক দায়ভার উন্নয়নশীল ও অনুন্নত রাষ্ট্রগুলোর নয়।
এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদাপন্নতাকে অনুধাবন করে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতির বিষয়টি বিবচনায় নিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মানবাধিকার সুরক্ষার জন্য একটি নতুন আইনি কাঠামো তৈরির কোনো বিকল্প নেই।’ তিনি বিষয়টিকে বিশ^ সম্প্রদায়ের সামনে তুলে ধরে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায় করার দাবি করেন।
মূল প্রবন্ধে আকিব জাবেদ সাম্প্রতিক সময়ে শরীয়তপুর জেলায় সিপিআরডি পরিচালিত একটি গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত উপস্থাপনা করেন। গবেষণায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শরীয়তপুর জেলায় বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি উঠে আসে। গবেষণা কার্যক্রমটি মূলত জেলার নদীভাঙনপ্রবণ অঞ্চল নড়িয়া ও জাজিরা অঞ্চলে পরিচালনা করা হয়। এতে দেখা যায়, দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির ফলে কেবল সম্পদ, বসতভিটা, ঘরবাড়ি এবং ফসলহানিই হয় না, একই সঙ্গে তা মানুষের জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও ব্যাপক প্রভাব ফেলে। চূড়ান্ত অর্থে যা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের অধিকারকে ক্ষুণ্ন করে।