মানুষ ঈমানদার হোক আর কাফের হোক, নেককার হোক আর পাপী হোক, সবার জীবনে বিপদ-আপদ আসে। কিন্তু প্রশ্ন হল যদিও আমরা অপছন্দ করি, তারপরেও কেনো আমাদের জীবনে এইরকম বিপদ-আপদ আসে বা আল্লাহ কেনো আমাদের পরীক্ষায় ফেলেন? কুরআন, হাদীস থেকে এর যে কারণগুলো জানা যায় তার মধ্যে রয়েছে:
১. মানুষকে পরীক্ষা করাঃ প্রকৃতপক্ষে কে ঈমানদার কে মুনাফেক, কে সত্যবাদী আর কে মিথ্যাবাদী তা জেনে নেয়া।
মুনাফেক ও দুর্বল ঈমানদারেরা অনেক সময় সুখ–স্বাচ্ছন্দের সময় আল্লাহকে মনে রাখে, তাঁর প্রতি অনুগত ও সন্তুষ্ট থাকে। কিন্তু, যখন কোনো বিপদ-আপদ আসে তখন আল্লাহকে ভুলে যায়, কুফুরী করে বা তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়। আবার অনেক সময় এর বিপরীতও হয়। যখন কোনো বিপদে পড়ে, তখন অনেক কাফের মুশরেককেও আল্লাহর কাছে মনে প্রাণে দু’আ করতে দেখা যায়। আর যখন আল্লাহ তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেন, তখন আল্লাহকে ভুলে যায়, তাঁর নিয়ামতকে অস্বীকার করে অহংকার প্রদর্শন করে, বলে এতো আমার প্রাপ্য। আবার কখনো আল্লাহর সাথে শরীক করে বসে, আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কাউকে বিপদ-মুক্তির কারণ মনে করে।
এই বিষয়গুলো পরীক্ষা করার জন্য, অর্থাৎ একনিষ্ঠভাবে কে আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে তা পরীক্ষা করার জন্য আল্লাহ তাঁর বান্দাদের পরীক্ষা করেন। আল্লাহ বলেন,“মানুষ কি মনে করে যে “আমরা ঈমান এনেছি” – এ কথা বলেই অব্যহতি পেয়ে যাবে, আর তাদেরকে পরীক্ষা করা হবেনা? আমি অবশ্যই তাদের পূর্বে যারা ছিলো তাদেরকে পরীক্ষা করেছি। আর আল্লাহ অবশ্যই জেনে নিবেন কারা সত্যবাদী আর কারা মিথ্যাবাদী।”
(সুরা আনকাবুত, আয়াত ২-৩)
এছাড়া অন্য জায়গায় আল্লাহ বলেন, “মানুষের মধ্যে কেউ কেউ দ্বিধা-দ্বন্দে জড়িত হয়ে আল্লাহর ইবাদত করে। যদি সে কল্যানপ্রাপ্ত হয়, তাহলে ইবাদতের উপর কায়েম থাকে। আর যদি কোনো পরীক্ষায় পড়ে তাহলে সে পূর্বাবস্থায় (কুফুরীতে) ফিরে যায়। সে ইহকাল ও পরকালে ক্ষতিগ্রস্থ, এটাই সুস্পষ্ট ক্ষতি।
(সুরা হাজ্জ, আয়াত ১১)
২. দুনইয়াতে পাপের সামান্য শাস্তি দেওয়া, যাতে করে সে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে ও নিজেকে পরকালের কঠিন শাস্তি থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে।
অনেক সময় মানুষ আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেও ঈমানের দুর্বলতার কারণে বা পার্থিব জীবনের লোভ-লালসার কারণে আল্লাহর অবাধ্য হয়। আল্লাহ তখন বিপদ-আপদ দিয়ে তাকে অসহায় করে দেন, যাতে করে সে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে আর পরকালের কথা স্মরণ করে। আল্লাহ বলেন,
“কঠিন শাস্তির পূর্বে আমি তাদেরকে হালকা শাস্তি আস্বাদন করাবো, যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করে।”
(সুরা সাজদাহ, আয়াত ২১)
এই আয়াতে “হালকা শাস্তি” দ্বারা পার্থিব জীবনের বিপদ-আপদ, দুঃখ-কষ্ট, ব্যথা-বেদনা, রোগ-শোক ইত্যাদিকে বোঝানো হয়েছে। এ ছাড়া সুনানে নাসায়ীতে রয়েছে, হালকা শাস্তির অর্থ হলো দুর্ভিক্ষ।
(তাফসীর ইবনে কাসীর থেকে নেওয়া)
৩. এছাড়া আল্লাহ তাঁর কিছু প্রিয় বান্দাকে পরীক্ষায় ফেলেন, যাতে করে পরকালে তার মর্যাদা ও জান্নাতের নিয়ামত বৃদ্ধি করেন। অনেক সময় আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে যে মর্যাদা দিতে চান তা ঐ বান্দা তার আমল দ্বারা অর্জন করার মতো হয়না। তখন আল্লাহ তাকে পরীক্ষায় ফেলেন, যদি সে এতে ধৈর্যধারণ করে তাহলে আল্লাহ তাকে ঐ মর্যাদায় উন্নীত করেন।
আমরা নিজেরা যখন বিপদ আপদে পড়ি তখন আমরা পাপী হই আর নেককার হই, কেউই কিন্তু নিশ্চিত করে বলতে পারবো না, কেনো আল্লাহ আমাদের বিপদে ফেলেছেন। এটা অদৃশ্যের জ্ঞান, যা আল্লাহ ছাড়া আর কেউই বলতে পারেনা। তাই আমরা বিপদে পড়লে কখনোই এই প্রশ্ন করবো না, হায় আল্লাহ! আমি কি পাপ করেছিলাম? আর যদিও করি, তা বেকার, কারণ আমরা যতই নেককার হয় আমরা কেউই পাপমুক্ত নয়। আমরা জেনে না জেনে দিন-রাত অসংখ্য পাপ কাজ করছি। তাই আমরা এই প্রশ্ন করবো না, বা হতাশ হবো না। তবে অবশ্যই সতর্ক হবো, অতীতের যে ভুল হয়েছে তা তোওবা করে সংশোধন করার জন্য আর ভবিষ্যতের জীবনকে আরো সুন্দর করার জন্য। আর মহান আল্লাহর উদ্দেশ্য এটাই, আমাদেরকে বিপদে ফেলে আমাদের সংশোধন করা।
বিপদে পড়ে হতাশ হবো না বা মনে করবো না আমার বিপদটাই সবচাইতে বড়। আমরা যদি আমাদের রাসুল (সা.)-এর জীবনের দিকে তাকাই, তাহলে তা হবে আমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। অতীত থেকে ভবিষ্যত পর্যন্ত সমস্ত মানুষের মধ্যে সর্বোত্তম হয়েও, কোরানে আল্লাহ যাকে ‘রাহমাতুল্লিল আলামীন’ বা জগত সমূহের জন্য রহমত বলে আখ্যায়িত করেছেন, তাঁকে একজন মানুষ হিসেবে কি পরিমাণ দুঃখ কষ্ট করতে হয়েছে? তাঁর যে দুঃখ কষ্টের মধ্যে অতিবাহিত করতে হয়েছে তাঁর কিছু বর্ণনা:
১. তাঁর জীবনে তিনি তাঁর তিন মেয়ে ও দু’ ছেলেকে হারিয়েছেন। তাঁর কি পরিমাণ কষ্ট হতো একেকটা সন্তানকে মৃত্যুর মুখে পড়তে দেখে?
২. তায়েফের ময়দানে কাফের-মুশরেকদের নির্মম আচরণ সকলেরই জানা। রক্তের ধারা তাঁর মাথা থেকে পায়ের জুতা পর্যন্ত পৌছে যায়। এছাড়া উহুদের যুদ্ধে তিনি আঘাতপ্রাপ্ত হন। শত্রুদের তরবারির আঘাতে তাঁর মাথার বর্ম ভেঙ্গে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন, তাঁর দাঁত ভেঙ্গে যায়।
৩. রাসুল (সা.) এর প্রিয় স্ত্রী, মা আয়িশা (রা.) এর প্রতি মুনাফেকদের কর্তৃক জঘন্য অপবাদ দেয়ার সময় তাঁকে কতটুকু পেরেশানির মধ্যে দিয়ে পার করতে হয়েছিলো? একেতো তিনি মুনাফেকদের কিছু বলতেও পারছিলেন না, আর নিজের স্ত্রীর পবিত্রতাও প্রমান করতে পারছিলেন না। কোরানের আয়াত নাযিলের মাধ্যমে মা আয়িশাহ (রা.) এর পবিত্রতা ঘোষণার আগে, তাকেও তো একজন স্বামী হিসেবে অমানুষিক পেরেশানির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিলো।
৪. টানা তিন বছর যখন তাঁকে একঘরে করে প্রায় বন্দী করে রাখা হয়। তৃণ ও লতা-পাতা খেয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অমানুষিক কষ্টের মধ্যে তাঁকে দিন কাটাতে হয়।
একবার রাসুল (সা.) কে প্রশ্ন করা হয়েছিলো, মানুষের মধ্যে কারা সবচাইতে বেশি বিপদে পড়ে? উত্তরে তিনি বলেন, নবী-রাসুলরা, আর এর পরে আল্লাহ যাকে যত বেশি ভালোবাসেন তাঁকে তত বেশি পরীক্ষায় ফেলেন।
সুতরাং, বিপদে পড়লে আমাদের এই বিশ্বাস রাখা জরুরী, আমি পাপী হলেও আল্লাহ আমাকে ভালোবাসেন। আর এই জন্য আমাকে বিপদে ফেলে আমাকে সংশোধন করতে চাচ্ছেন, যাতে করে পরকালে যা আমদের আসল ঠিকানা, সেখানে আমাদেরকে অনন্ত সুখের জীবন দান করেন।
আল্লাহ বলেন: ﻭَﻣَﺎ ﺃَﺻَﺎﺑَﻜُﻢ ﻣِّﻦ ﻣُّﺼِﻴﺒَﺔٍ ﻓَﺒِﻤَﺎ ﻛَﺴَﺒَﺖْ ﺃَﻳْﺪِﻳﻜُﻢْ ﻭَﻳَﻌْﻔُﻮ ﻋَﻦ ﻛَﺜِﻴﺮٍ –
‘তোমাদেরকে যেসব বিপদাপদ স্পর্শ করে, সেগুলি তোমাদের কৃতকর্মের ফল। তবে অনেক পাপ আল্লাহ ক্ষমা করে থাকেন’ (শূরা ৪২/৩০) ।
এছাড়াও আরেকটি বিধি রয়েছে, সেটি হ’ল প্রথমে ছোট ছোট আযাব পাঠিয়ে বান্দাকে হুঁশিয়ার করা। অতঃপর বড় শাস্তি নাযিল করা। যেমন আল্লাহ বলেন: ﻭَﻟَﻨُﺬِﻳﻘَﻨَّﻬُﻢْ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻌَﺬَﺍﺏِ ﺍﻟْﺄَﺩْﻧَﻰ ﺩُﻭﻥَ ﺍﻟْﻌَﺬَﺍﺏِ ﺍﻟْﺄَﻛْﺒَﺮِ ﻟَﻌَﻠَّﻬُﻢْ ﻳَﺮْﺟِﻌُﻮﻥَ – ‘গুরু দন্ডের পূর্বে অবশ্যই আমরা তাদেরকে লঘুদন্ডের আস্বাদন ভোগ করাব, যাতে তারা ফিরে আসে’
(সাজদাহ ৩২/২১) ।
যেমন মূসার দাওয়াত কবুল না করায় হঠকারী ফেরাঊনের কওমের উপর বিশ বছরে পরপর ৭-এর অধিক গযব নাযিল হয়। কিন্তু ফেরাঊন ও তার সভাসদ মন্ডলী এগুলিকে স্রেফ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে উড়িয়ে দেয়। অতঃপর বিরাট জনসমাবেশ ডেকে ফেরাঊন বলে, ﻭَﻣَﺎ ﺃَﻫْﺪِﻳﻜُﻢْ ﺇِﻻَّ ﺳَﺒِﻴﻞَ ﺍﻟﺮَّﺷَﺎﺩِ – ‘আমি তোমাদেরকে মঙ্গলের পথ ভিন্ন অন্য পথ দেখাই না’ (মু’মিন: ৪০/২৯)। আর ‘আমিই তোমাদের সর্বোচ্চ পালনকর্তা’ ( ﺃَﻧَﺎ ﺭَﺑُّﻜُﻢُ ﺍﻟْﺄَﻋْﻠَﻰ ) (নাযে‘আত ৭৯/২৪)। ফেরাঊন নিজেকে মানুষের সৃষ্টিকর্তা দাবী করেনি। বরং ‘পালনকর্তা’ বলেছিল। কারণ সে রাজা হিসাবে জনগণের রুটি-রুজির ব্যবস্থা করত ও তাদের লালন-পালন করত। তার উপরেও যে কোন পালনকর্তা আছেন, যিনি আলো দিয়ে, বায়ু দিয়ে, পানি দিয়ে, শস্য ও ফলাদি দিয়ে সৃষ্টিকে লালন করছেন, সে অদৃশ্য জ্ঞান ফেরাঊনের ছিল না। মূসার দেওয়া সে অহি-র জ্ঞান ও বিধান সে গ্রহণ করেনি। কেননা তাতে তার স্বেচ্ছাচারিতা ব্যাহত হয়। ফলে সে অহংকার দেখায় ও তাতেই আল্লাহর গযব ত্বরান্বিত হয়। তার চূড়ান্ত অহংকারের শাস্তি আল্লাহ চূড়ান্তভাবেই দেন এবং তাকে তার সৈন্য-সামন্তসহ সদলবলে সাগরে ডুবিয়ে মারেন। (ইউনুস ১০/৯০) । মযলূম মূসা ও হাযার হাযার নির্যাতিত বনু ইস্রাঈল নিজেরা নাজাত পায় ও যালেম ফেরাঊনের এই করুন মৃত্যুর দৃশ্য স্বচক্ষে অবলোকন করে
(বাক্বারাহ ২/৫০)।
এই মহামুক্তির শুকরিয়া স্বরূপ মূসা ও তার কওম সেদিন ১০ই মুহাররম থেকে প্রতি বছর আশূরার নফল ছিয়াম শুরু করেন, যা আজও চালু আছে। তবে নিঃসন্দেহে জাহান্নামের শাস্তিই হ’ল সবচেয়ে বড় শাস্তি। যার কোন তুলনা নেই। কাফির-মুনাফিকদের চূড়ান্ত আবাসস্থল হ’ল সেটাই (নিসা: ৪/১৪০) ।
উদ্দেশ্য :
উপরে বর্ণিত তিনটি বিধির প্রত্যেকটিরই মহৎ উদ্দেশ্য হ’ল অবাধ্য মানুষকে বাধ্যতায় ফিরিয়ে আনা এবং পৃথিবীতে শান্তি কায়েম করা। গযব নাযিলের পূর্বেই কি আমরা অবাধ্যতা পরিত্যাগ করতে পারি না?
সৎ লোকদের উপর বিপদাপদ :
প্রশ্ন হ’তে পারে যে, পৃথিবীতে নবী-রাসূল ও সৎ লোকদের উপর যেসব বালা-মুছীবত আসে, সেগুলি কি আল্লাহর গযব হিসাবে গণ্য হবে? যেমন রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করা হয়,
ﺃﻯُّ ﺍﻟﻨﺎﺱِ ﺃﺷﺪُّ ﺑﻼﺀً ؟ ﻗﺎﻝ : ﺍﻷﻧﺒﻴﺎﺀُ ﺛﻢَّ ﺍﻷﻣﺜﻞُ ﻓﺎﻷﻣﺜﻞُ، ﻳُﺒﺘﻠَﻰ ﺍﻟﺮَّﺟﻞُ ﻋﻠﻰ ﺣﺴﺐ ﺩﻳﻨﻴﻪ ﻓﺈﻥ ﻛﺎﻥَ ﺻُﻠﺒﺎً ﻓﻲ ﺩﻳﻨﻴﻪ ﺍﺷﺘﺪَّ ﺑﻼﺀُﻩ، ﻭﺇﻥ ﻛﺎﻥَ ﻓﻰ ﺩﻳﻨﻴﻪ ﺭِﻗَّﺔٌ ﻫُﻮِّﻥَ ﻋﻠﻴﻪ، ﻓﻤﺎﺯﺍﻝ ﻛﺬﻟﻚ ﺣﺘﻰ ﻳﻤﺸﻰَ ﻋﻠﻰ ﺍﻷﺭﺽِ ﻣﺎ ﻟَﻪُ ﺫﻧﺐٌ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭﻓﻰ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ : ﻭﻣﺎﻋﻠﻴﻪ ﻣﻦ ﺧﻄﻴﺌﺔ –
‘মানব সমাজে সবচেয়ে বেশী বিপদগ্রস্ত কারা? জবাবে তিনি বলেন, নবীগণ। অতঃপর তাঁদের নিকটবর্তী নেককার ব্যক্তিগণ। অতঃপর তাদের নিকটবর্তীগণ। মানুষ তার দ্বীন অনুযায়ী বিপদগ্রস্ত হয়। যদি সে দ্বীনের ব্যাপারে শক্ত হয়, তাহ’লে তার বিপদাপদ কঠিন হয়। আর যদি সে দ্বীনের ব্যাপারে শিথিল হয়, তাহ’লে তার বিপদাপদ সহজ হয়। এভাবেই চলতে থাকে। এক সময় সে পৃথিবীতে বিচরণ করে এমনভাবে যে, তার কোন গোনাহ থাকে না’।
বাহ্যতঃ হাদীছটিকে কুরআনের বিপরীত মনে হয়। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। কেননা সৎ লোকের বিপদাপদ দেওয়ার কারণ তাদের গোনাহ নয়, বরং উদ্দেশ্য হ’ল তাদের পরীক্ষা করা এবং পরীক্ষার মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতে তাঁদের মর্যাদা বৃদ্ধি করা। যেমন ইবরাহীম (আ.)-কে আল্লাহ কঠিন পরীক্ষা সমূহ নিয়েছেন। অবশেষে সফলভাবে উত্তীর্ণ হওয়ায় তাঁকে আল্লাহ বিশ্বনেতার মর্যাদায় ভূষিত করেন। ইহুদী-নাছারা-মুসলমান সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ‘পিতা’ হিসাবে তিনি সারা পৃথিবীতে বরিত ও নন্দিত। অথচ তাঁকে নির্যাতনকারী রাজা নমরূদ সর্বত্র ধিকৃত ও নিন্দিত। এমনকি নমরূদ বা ফেরাঊন বা আবু জাহলের নামে সন্তানের নাম রাখতেও কোন পিতা-মাতা রাযী হবেন কি-না সন্দেহ। তাই ব্যক্তিগত পর্যায়ে মু’মিনগণের উপরে মুছীবত প্রকৃত প্রস্তাবে তাদের জন্য রহমত স্বরূপ। এর দ্বারা তাদের গোনাহের কাফফারা হয়। যেমন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ﻡﺍَ ﻳُﺼِﻴﺐُ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢَ ﻣِﻦْ ﻧَﺼَﺐٍ ﻭﻻ ﻭَﺻَﺐٍ ﻭﻻ ﻫَﻢٍّ ﻭﻻ ﺣَﺰَﻥٍ ﻭﻻ ﺃﺫًﻯ ﻭﻻ ﻏَﻢٍّ ﺣَﺘَّﻰ ﺍﻟﺸَّﻮْﻛَﺔُ ﻳُﺸَﺎﻛُﻬَﺎ ﺇﻻ ﻛﻔَّﺮَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺑﻬﺎ ﻣﻦ ﺧَﻄَﺎﻳَﺎﻩُ – ‘মুসলিম বান্দার কোন ক্লান্তি, রোগ, দুশ্চিন্তা, উদ্বিগ্নতা, কষ্ট ও অস্থিরতা এমনকি কোন কাঁটা বিধলেও (যদি সে ছবর করে ও আল্লাহর উপরে খুশী থাকে), তাহলে তার কারণে আল্লাহ তার গোনাহ সমূহ মাফ করে দেন’। অন্য হাদীছে তিনি বলেন, ﻣَﻦ ﻳُّﺮِﺩِ ﺍﻟﻠﻪُ ﺑﻪ ﺧَﻴْﺮًﺍ ﻳُﺼِﺐْ ﻣﻨﻪ –
‘আল্লাহ যে ব্যক্তির কল্যাণ চান, তাকে বিপদে ফেলেন’।
(বুখারী, রিয়ায হা/৩৯)
আল্লাহ আমাকে ও আপনাদের সকলকে হক্ক পথে চলার তওফিক দান করুন। আমাদের দুনইয়া ও আখেরাত সহজ ও সুন্দর করুন, আমীন।
IFM desk