সাংবাদিকদের ওপর আরোপ করা বিধিনিষেধ সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বাঁধা বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। আসন্ন রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে শনিবার সুজন আয়োজিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, মনে হচ্ছে এবারের রংপুর সিটি নির্বাচনে উত্তেজনা খানিকটা কম। গতবারের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছিল। এবারও সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য হবে। আশা করি, প্রার্থীদের আয়কর বিবরণী কমিশনের ওয়েবসাইটে না দেয়াটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়। যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়, তাহলে তা জনগণের বিরুদ্ধে যাবে। কমিশনকে আয়কর বিবরণী প্রকাশের আহ্বান জানাই। আরেকটি ব্যাপার হলো সাংবাদিকদের ওপর আরোপ করা বিধিনিষেধ সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বাঁধা।
সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বলেন, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী মেয়র পদে ৯ জন, ৩৩টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৭৯ জন এবং ১১টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৬৭ জন, অর্থাৎ ৩টি পদে সর্বমোট ২৫৫ জন প্রার্থী এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ৭ জন, সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ২১২ জন এবং সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৬৫ জন, মোট ২৮৪ জন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। অর্থাৎ গত নির্বাচনের তুলনায় এবার প্রার্থী সংখ্যা কমেছে ২৯ জন। সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ৬৭ জন প্রার্থী ছাড়াও মেয়র পদে ১ জন এবং সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ২ জন নারী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
২৫৫ জন প্রার্থীর একজনের তথ্য পাওয়া না যাওয়ায় মোট ২৫৪ জনের তথ্যের বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে।
শিক্ষাগত যোগ্যতার বিশ্লেষণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ৯ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ৪ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর, ৩ জনের স্নাতক, ১ জনের এইচএসসি এবং ১ জনের এসএসসির নিচে। মোট ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ডের তথ্য পাওয়া ১৭৮ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৬৪ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসির নিচে, ৩৬ জনের এসএসসি এবং ২৭ জনের এইচএসসি। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী প্রার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে ৩০ ও ১৭ জন। মোট ১১টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ৬৭ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে এসএসসির কম শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীর সংখ্যা ২৮ জন। ১৭ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি এবং ৮ জনের এইচএসসি। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী প্রার্থীর সংখ্যা ৮ জন করে।
পেশার বিশ্লেষণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ৯ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ৪ জনই ব্যবসায়ী। চাকরিজীবী প্রার্থী আছেন ২ জন, যার মধ্যে একজনের পেশা শিক্ষকতা। আইনজীবী আছেন ১ জন। ১৭৮ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ১২৯ জনের পেশাই ব্যবসা। কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন ২০ জন। ১৭ জন আছেন চাকরিজীবী। ৬৭ জন সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীর অধিকাংশই গৃহিণী। ১৩ জনের পেশা ব্যবসা।
মামলার বিশ্লেষণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ৯ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে বর্তমানে মামলা আছে কেবল খেলাফত মজলিসের প্রার্থী তৌহিদুর রহমান ম-লের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনের একটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে বলে তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। অতীতে ৩ জন মেয়র প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা ছিল। প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ৯ জন মেয়র প্রার্থীর কারও বিরুদ্ধেই বর্তমানে বা অতীতে ৩০২ ধারায় কোনো মামলা নেই বা ছিল না। ১৭৮ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৪২ জনের বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা চলমান রয়েছে। অতীতে মামলা ছিল ৩০ জনের বিরুদ্ধে। বর্তমানে মামলা আছে অতীতেও মামলা ছিল এমন প্রার্থী আছেন ১৫ জন। কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৫ জনের বিরুদ্ধে বর্তমানে ৩০২ ধারার মামলা আছে। অতীতে ৩০২ ধারার মামলা ছিল ৩ জনের বিরুদ্ধে। ৬৭ জন সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৩ জনের বিরুদ্ধে বর্তমানে ফৌজদারি মামলা রয়েছে। অতীতে মামলা ছিল ২ জনের বিরুদ্ধে। বর্তমান ও অতীত উভয় সময়ে মামলা ছিল বা আছে এমন প্রার্থী আছেন ১ জন। সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় বর্তমানে কোনো মামলা নেই, অতীতেও ছিল না।
আয়ের বিশ্লেষণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ৯ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে নিজের ও নির্ভরশীলদের আয় মিলিয়ে ৪ জনের আয় বছরে ৫ লাখ টাকার কম, ৪ জনের আয় বছরে ৫ লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকার মধ্যে এবং ১ জনের আয় ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা। বছরে সর্বোচ্চ ৬২ লাখ ৬৫ হাজার ৪২১ টাকা আয় করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের শফিয়ার রহমান। ১৭৮ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে বেশির ভাগ প্রার্থীর বছরে ৫ লাখ টাকার কম আয় করেন। বছরে ৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা আয় করেন ৩০ জন। ২ জনের বাৎসরিক আয় ৫০ লাখ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা। সংরক্ষিত আসনের ৬৭ জন প্রার্থীর মধ্যেও সিংহভাগই কাউন্সিলর প্রার্থীর বার্ষিক আয় ৫ লাখ টাকার কম। ৫ লাখ টাকা থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করেন ৬ জন।
সম্পদের বিশ্লেষণ তুলে ধরে তিনি বলেন, মোট ৯ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ৩ জনের সম্পদ ৫ লাখ টাকার নিচে, ১ জনের ৫ লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকার মধ্যে, ৩ জনের ২৫ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকার মধ্যে, ১ জনের ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকার মধ্যে এবং অবশিষ্ট ১ জনের সম্পদ কোটি টাকার অধিক। মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্পদ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের শফিয়ার রহমানের (২ কোটি ৮ লাখ ৬৮ হাজার ৩০৬ টাকা)। ১৭৮ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে অধিকাংশই (১২৪ জন বা ৬৯.৬৬%) স্বল্প সম্পদর অর্থাৎ ৫ লাখ টাকার কম মূল্যমানের সম্পদের মালিক। ৫ লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকার সম্পদ রয়েছে ৪২ জন এবং ২৫ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকার সম্পদ রয়েছে ৩ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর। ২ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর সম্পদ কোটি টাকার অধিক। ৬৭ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৫৫ জনের সম্পদ ৫ লাখ টাকার কম। ৫ লাখ টাকা থেকে ২৫ লাখ টাকা মূল্যের সম্পদ আছে ৮ জন প্রার্থীর।
দায়-দেনার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৯ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে কারোরই দায়-দেনা নেই। সাধারণ আসনের ১৭৮ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ২৩ জন এবং সংরক্ষিত আসনের ৬৭ জন কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে মাত্র ২ জনের দায়-দেনা রয়েছে।
সুজনের সহসম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে। মেয়র নির্বাচনের দলগুলো সবই আমাদের চেনা দলগুলোই, নতুন কোনো দল স্থানীয় নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে না। জাতীয় নির্বাচনের জোটবদ্ধতার প্রভাব স্থানীয় নির্বাচনেও পড়ছে, এটি কাম্য নয়।
চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খান বলেন, অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা কেন পূরণ হচ্ছে না, সেটি নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।