পঞ্চগড়ে বিএনপির গণমিছিল ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচটি মামলা করেছে পুলিশ। এসব মামলায় ৮১ জনের নাম উল্লেখসহ সহস্রাধিক জনকে আসামি করা হয়েছে।
রোববার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ জানায়, গণমিছিল কর্মসূচির নামে সরকারি কাজে বাধা, বলপ্রয়োগ, ককটেল বিস্ফোরণ, সড়ক অবরোধ ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগে পঞ্চগড় সদর থানায় দায়ের করা মামলায় এখন পর্যন্ত ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে পঞ্চগড় সদর উপজেলার একজন, তেঁতুলিয়ার দুইজন, বোদা উপজেলার দুইজন, দেবীগঞ্জের একজন ও আটোয়ারীর দুইজন। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে তেঁতুলিয়ার দুইজন জামায়াতের সঙ্গে জড়িত ও বাকিরা বিএনপির নেতাকর্মী বলে পুলিশ জানায়।
পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা বলেন, গতকাল শনিবার বিএনপির কর্মসূচি ছিল। তারা গণমিছিল নিয়ে বের হলে তাদেরকে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করতে বলা হয়। কিন্তু তারা পুলিশের নির্দেশনা অমান্য করে লাঠিসোটা, ইটপাটকেল নিয়ে মিছিল করে ও রাস্তায় ভাঙচুর করার চেষ্টা করে। এমনকি তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ কারণে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে আমাদের কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও তাদের কয়েকজন দলীয় কর্মী আহত হয়েছেন। এ কারণে পুলিশি কাজে বাধা দেওয়া ও সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি করায় আমরা মামলা করেছি। এসব মামলায় সাধারণ কোনো মানুষকে হয়রানি করা হবে না।
এ বিষয়ে বিকেল ৪টার দিকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম কাচ্চু বলেন, আমরা এই মুহূর্তে আমাদের নিহত নেতার জানাজায় রয়েছি। গতকাল আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করেছি। কিন্তু পুলিশ বিনা কারণে বাধা দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর রাবার বুলেট ও লাঠিচার্জ করেছে। এতে আমাদের প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এখনো অনেকে রংপুরে চিকিৎসাধীন রয়েছে। পুলিশ একজনকে মেরে ফেলেছে। আমরা এর তদন্ত চাই।
এদিকে বিএনপির নেতাকে হত্যার বিষয়ে গতকাল পুলিশ সুপার বলেছিলেন, বিএনপির কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে আমাদের ফোর্স নিযুক্ত করা ছিল। তারা মিছিল-মিটিংয়ে লাঠিসোটা নিয়ে এসেছিল। শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করতে আমরা অনুরোধ করেছি। কিন্তু তারা লাঠিসোটা নিয়ে রাস্তায় ভাঙচুর করার চেষ্টা করে এবং পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। তখন আমরা বাধ্য হয়ে রাবার বুলেট ছুঁড়ি। এ ঘটনায় পুলিশ সদস্যসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে যিনি মারা গেছেন তিনি এ ঘটনায় মারা যাননি। তার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। বিশেষ করে তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি তিনি আগে থেকেই বাইপাসের রোগী ছিলেন। উনার তিনটা বাইপাস অপারেশন করা ছিল। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন।
উল্লেখ্য, শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে বেগম খালেদা জিয়াসহ গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীদের মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গণমিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে পঞ্চগড় জেলা বিএনপি। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে শুরু হয় সংঘর্ষ। ঘণ্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের দিকে রাবার বুলেট, টিয়ারশেল এবং কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এসময় বিএনপি নেতাকর্মীরাও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।