প্রকৌশলী ইনামুল হক গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার নিয়ে কথা বলায় শারিরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন। এ হামলায় একটি স্বাধীন-স্বার্বভৌম রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমরা গভীর বেদনাদাহত, বিক্ষুব্ধ ও স্তম্ভিত। এটা নিছক ব্যক্তির ওপর হামলা নয়, এর সঙ্গে অধিকার ও নাগরিক মর্যাদার প্রশ্নটি জড়িত। আমরা ৩২ জন নাগরিক এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিকে/ ব্যক্তিবর্গকে শাস্তির আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।
নদী ও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় প্রবীণ প্রকৌশলী ম. ইনামুল হকের অবদান সর্বজনবিদিত। আমরা গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সূত্রে জানতে পেরেছি যে, গত ২৪ ডিসেম্বর শনিবার জনাব ইনামুল হক রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় তার কয়েকজন সহযোগীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় নির্বাচন ও গণতন্ত্রের সংকট নিয়ে আলাপ করছিলেন ও গণসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণ করছিলেন, যা তার সংবিধান প্রদত্ত নাগরিক অধিকার। যে কোনো নাগরিকেরই দেশের রাজনীতি নিয়ে কথা বলা, সমালোচনা করা ও সভা-সমাবেশ করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু এ সময় জনাব ইনামুল হককে যেরকম ন্যাক্কারজনক শারীরিক লাঞ্ছনার শিকার ও হেনস্থা করা হয়েছে তা সুস্পষ্টভাবে একজন নাগরিকের মত প্রকাশের অধিকার ও সভা-সমাবেশের অধিকারের ওপর মারাত্মক আঘাত। একই সঙ্গে এমন আক্রমণাত্মক আচরণের মধ্য দিয়ে প্রতীয়মান হয় যে, পরমতসহিষ্ণুতার মতো মৌলিক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলো আমাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিসর থেকে ক্রমেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, যা ভীষণ উদ্বেগের।
এ প্রসঙ্গে আমাদের বক্তব্য হচ্ছে যে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণাপত্রের অন্যতম মূলনীতি হচ্ছে মানবিক মর্যাদা। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনায় আইনের শাসন ও মৌলিক মানবাধিকার কে রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হিসেবে নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি যে জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র ও বাংলাদেশের সংবিধানে সংরক্ষিত স্বাধীন মতপ্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অঙ্গীকার সুরক্ষা সহ টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা ১৬ বাস্তবায়নে রাষ্ট্র ও সরকারের অঙীকার বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।
আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করছি, অবিলম্বে প্রকৌশলী জনাব ইনামুল হককে হেনস্থাকারী ব্যক্তিকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। অন্যথায় এটি বিচারহীনতার আরেকটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
বিবৃতিতে সাক্ষর করেন:
১. অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্যাহ; ২. রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী; ৩. আইন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আসিফ নজরুল; ৪. সাকিব আলি, সাবেক কূটনীতিক ও সমন্বয়ক – পিপলস একটিভিস্ট কোয়ালিশন; ৫. রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম; ৬.
অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ৭. অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; ৮. অধ্যাপক নাসির উদ্দিন আহমেদ, শিক্ষক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়; ৯. ড. মাহবুব হোসেন, অধ্যাপক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়; ১০. নুর খান লিটন, মানবাধিকার কর্মী; ১১. অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদ, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; ১২. সৈয়দ আবদাল আহমদ, লেখক ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় প্রেসক্লাব; ১৩. ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী; ১৪. শামীমা সুলতানা, বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; ১৫. কবি আবদুল হাই শিকদার; ১৬. অধ্যাপক কামরুন্নেসা খন্দকার; প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; ১৭. এম জাকির হোসেন খান, পরিবেশ ও জলবায়ু নীতি বিশ্লেষক; ১৮. মাহবুব মোর্শেদ, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক; ১৯. ড. মুনির উদ্দিন আহমেদ, এডিটর, সায়েন্টিফিক বাংলাদেশ; ২০. ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, প্রকৌশলী ও টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক লেখক; ২১. ড. মারুফ মল্লিক, গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক; ২২. সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান বিষয়ক বিশেষজ্ঞ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউএসএ; ২৩. মো. সাইমুম রেজা তালুকদার, জ্যেষ্ঠ প্রভাষক, স্কুল অব ল, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়; ২৪. ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান, আইনজীবী ও আহ্বায়ক, নাগরিক বিকাশ ও কল্যাণ (নাবিক); ২৫. ব্যারিস্টার জিশান মহসিন, আইনজীবী ও সমন্বয়ক – আইনজীবী অধিকার পরিষদ; ২৬. সালাহ উদ্দিন শুভ্র, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক; ২৭. মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, আহ্বায়ক, নাগরিক পরিষদ; ২৮. শেখ রোকন, মহাসচিব, রিভারাইন পিপল; ২৯. এহসান মাহমুদ, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক; ৩০. জাকারিয়া পলাশ, লেখক ও গবেষক; ৩১. ডেন্টিস্ট জাফর মাহমুদ, আহবায়ক, পেশাজীবী অধিকার পরিষদ; এবং ৩২. সোহেল রানা, লেখক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক।