বিদেশি সহায়তা ছাড়ে গতি কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ২৫ শতাংশ অর্থ ছাড় কমে গেছে। এই সময়ে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ (এডিবি) বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীরা সব মিলিয়ে ২৪৬ কোটি ডলার দিয়েছে। বর্তমান বাজারদরে টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ২৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। গত বছর একই সময়ে ৩০৯ কোটি ডলার এসেছিল। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ডলার–সংকটে দেশের অর্থনীতিতে চাপ তৈরি হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ কমেছে। ডলারের সরবরাহ বাড়াতে সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছে প্রায় সাড়ে ছয় শ কোটি ডলার বাজেটে সহায়তা পেতে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে বিদেশি সহায়তা ছাড় কমতে শুরু করেছে। উন্নয়ন সহযোগীরা মূলত প্রকল্পে এসব অর্থ দিয়ে থাকে।
অন্যদিকেও চাপে পড়েছে সরকার। সরকারকে আগের চেয়ে বেশি বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হচ্ছে। সরকার বাজেটে এ জন্য আলাদা বরাদ্দ রাখে। গত জুলাই-নভেম্বর সময়ে বিদেশি ঋণের সুদাসল পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে। ওই সময়ে ৮৮ কোটি ডলারের সমপরিমাণ ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ করা হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে ৮৬ কোটি ডলার পরিশোধ হয়েছিল। ডলারে পরিশোধের পরিমাণ মাত্র ২ কোটি ডলার বাড়লেও দেশীয় মুদ্রায় পরিমাণটি তুলনামূলক বেশি। কারণ, ডলারের দাম বেড়েছে। এ কারণে ১ হাজার ২৮ কোটি টাকা খরচ বেড়েছে। গত জুলাই-নভেম্বরে ৮ হাজার ৪৩০ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। গত বছর একই সময়ে যা ছিল ৭ হাজার ৪০২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ডলারে বা বিদেশি মুদ্রায় ঋণের সুদাসল পরিশোধ করে।
ইআরডি জানায়, বিদেশি সহায়তা ছাড় কমেছে। বিদেশি সহায়তার প্রতিশ্রুতিও বেশ কমেছে। প্রথম পাঁচ মাসে মাত্র ৪৬ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি মিলেছে। গত বছর একই সময়ে পরিমাণটি ছিল ৩৯৩ কোটি ডলার। মূলত বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে উন্নয়ন সহযোগীরা অর্থ ছাড়ের গতি কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে। এদিকে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের গতিও বেশ কম।
ডলারের সরবরাহ বাড়াতে বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছে বাজেট সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। ইতিমধ্যে আইএমএফের কাছে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণের জন্য আলোচনা শুরু হয়েছে। আগামী জানুয়ারি কিংবা ফেব্রুয়ারি মাসে ঋণ অনুমোদন হতে পারে। তখন প্রথম কিস্তিতে ৪৫ কোটি ডলার পাবে বাংলাদেশ। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক ও এডিবির কাছ থেকে চলতি অর্থবছরেই বাজেট সহায়তার কিস্তি মিলতে পারে। ইতিমধ্যে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইআইবি) বাজেট সহায়তার অর্থ পাওয়া গেছে।