বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৪৯ অপরাহ্ন




ব্যাংক খাতে আলোচিত যত ঘটনা

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২ ৮:৫০ pm
Central Bank কেন্দ্রীয় ব্যাংক Bangladesh Bank bb বাংলাদেশ ব্যাংক বিবি
file pic

ডলার সংকটে বছরজুড়ে ধারাবাহিকভাবে কমেছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত (রিজার্ভ)। প্রভাবশালী কিছু গ্রুপের একের পর এক ঋণ অনিয়ম আর লুটপাটে পুরো বছরই অস্থির ছিল ব্যাংকপাড়া। নানা সুবিধার পরও লাগামহীন ছিল খেলাপি ঋণ। রেমিট্যান্স প্রবাহে ভাটা, আমানতকারীদের আস্থাহীনতাসহ ২০২২ সালে নানা চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে ব্যাংক খাতে।

খেলাপি ঋণ

খেলাপি ঋণ কমাতে অনেক ক্ষেত্রে ঢালাও সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণের কিস্তি পরিশোধে দেওয়া হয়েছে বিশেষ ছাড়। গ্রাহকের যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করার কথা, ডিসেম্বরের মধ্যে তার ৭৫ শতাংশ পরিশোধ করলেও তাকে আর খেলাপি করা যাবে না বলা হয়েছে। এ সুবিধার পরও বাড়ছে খেলাপি ঋণ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ তিন হাজার ২৭৪ কোটি টাকা যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। বছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ ২০২২ সালের মার্চ মাস শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে এক লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকায় পৌঁছায়। দ্বিতীয় প্রান্তিকে অর্থাৎ জুনে এ অঙ্ক বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৮ কোটি টাকায়, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে এক লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকে। যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। খেলাপি ঋণের এ অঙ্ক এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ।

ভয়াবহ ঋণ কেলেঙ্কারি

বছরের শুরুতে ব্যাংকপাড়ায় আলোচনায় উঠে আসে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংকের নাম। ব্যাংকের মালিকানায় থাকা জয়নুল হক সিকদার পরিবারের সদস্যদের আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের লেনদেনের মাধ্যমে অনিয়মে জড়িত থাকার খবর আসে। তথ্য গোপন ও অর্থপাচারের দায়ে ব্যাংকটিকে ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া নানা জালিয়াতির দায়ে ব্যাংকটির কার্ড বিভাগের কার্যক্রম বন্ধ, দুটি শাখার এডি লাইসেন্স বাতিলসহ ব্যাংকটির পরিচালক রন হক সিকদার ও রিক হক সিকদারের বৈদেশিক মুদ্রার হিসাব বন্ধ করতেও বলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এছাড়া অনিয়মে বড় কয়েকটি গ্রুপকে দেওয়া ঋণ আদায় না হওয়ায় বেড়েছে খেলাপি ঋণও। এখন ব্যাংকটির মন্দ ঋণের পরিমাণ ২৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ।

বছরজুড়ে বেশ কয়েকটি ব্যাংকে বিভিন্ন অনিয়মের ঘটনা ঘটলেও শেষদিকে এসে আলোচনায় স্থান পায় চারটি ইসলামী ব্যাংকের বৃহৎ কেলেঙ্কারি। শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো থেকে নামে-বেনামে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছে চট্টগ্রামের একটি প্রভাবশালী গ্রুপ। ঋণের অর্থ পাচারও হয়েছে। অনেক নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া ঋণের বিপরীতে নেওয়া হয়নি জামানত, মানা হয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মনীতিও। এসব অনিয়ম ফাঁস হওয়ার পর আতঙ্ক সৃষ্টি হয় আমানতকারীদের মধ্যে। অনেকে আমানত তুলে নেন। আবার কেউ কেউ টাকা তুলে রাখেন অন্য ব্যাংকে। এতে শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো থেকে আশঙ্কাজনক হারে আমানত কমে যায়। এক মাসের ব্যবধানে একটি ব্যাংকের আমানত কমে যায় প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হলেও দেওয়া হয়েছে নানা ধরনের নীতি-সহায়তা।

সর্বশেষ ঋণ অনিয়ম তদারকি করতে বেসরকারি শরীয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংক নিয়ে আতঙ্ক

‘লুটপাট করে খাচ্ছে ব্যাংকের টাকা। পাচার হচ্ছে অর্থ। শ্রীলঙ্কা হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সামনে আসছে দুর্ভিক্ষ। ব্যাংকে জমানো অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে না’— এমন সব তথ্য ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে। এতে আমানতকারীরা আতঙ্কিত হয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে থাকেন।

সরকারের দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নেতিবাচক প্রচারে ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি আমানত তুলে নেন সাধারণ গ্রাহকরা। এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ষড়যন্ত্রমূলক খবর প্রচারিত হচ্ছে। বলা হচ্ছে ব্যাংকগুলোতে নগদ অর্থ নেই বা তারল্য সংকট আছে। কিন্তু এটি সত্য নয়। বাংলাদেশের ব্যাংক-ব্যবস্থা অত্যন্ত সুদৃঢ় অবস্থায় রয়েছে। দেশের ব্যাংক-ব্যবস্থায় তারল্যের কোনো সংকট নেই। গত ১৪ নভেম্বর দেশে এক লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকার অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে বলেও জানানো হয়। পরে আমানত ফিরে আসতে থাকে।

কবিরের বিদায়, তালুকদারের আগমন : মেয়াদ পূর্ণ করে গত ৩ জুলাই বিদায় নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ১১তম গভর্নর ফজলে কবির। টানা ছয় বছর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। দেশের ইতিহাসে আইন পরিবর্তন করে দ্বিতীয় মেয়াদে নিযুক্ত করা হয় তাকে। পুরোটা সময় ‘সহাবস্থানের’ বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন ফজলে কবির। ব্যবসায়ী, রাজনীতিক ও প্রভাবশালীদের কাছে ছিলেন ‘আজ্ঞাবহ’ গভর্নর। ফজলে কবিরের মেয়াদ শেষে টানা আট দিন গভর্নর শূন্য ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি বছরের ১২ জুলাই দেশের ১২তম গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেন আব্দুর রউফ তালুকদার।

১০ দুর্বল ব্যাংক চিহ্নিত

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার যোগ দিয়েই দুর্বল ব্যাংকগুলোকে পৃথকভাবে তদারকির উদ্যোগ নেন। গত ৩ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ১০টি দুর্বল ব্যাংককে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোর সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক করা হবে। খেলাপি ঋণের মাত্রা, মূলধন পর্যাপ্ততা, ঋণ-আমানত অনুপাত ও প্রভিশন তথা সঞ্চিতির পরিমাণ— এই চার সূচকের ভিত্তিতে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে এসব ব্যাংকের নাম জানাননি গভর্নর।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুর্বল ব্যাংকগুলো মধ্যে রয়েছে- রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংক। এছাড়া বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড (এনবিএল), পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক), আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের নাম শোনা যায়।

ইতোমধ্যে পাঁচটি ব্যাংকে সমন্বয়ক বসিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এগুলো হলো- এবি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক। সমন্বয়করা ব্যাংকের সব নথিপত্র দেখতে ও তদারক করতে পারবেন। পর্যবেক্ষক দেওয়া হয় সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও খেলাপির ‘ক্ষত’

বিভিন্ন অব্যবস্থাপনায় ধুঁকছে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা এনবিএফআই। অনিয়ম-জালিয়াতির মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে ঋণ। সেগুলো আদায় হচ্ছে না সময়মতো। যে কারণে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের শেষে ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় ৭০ হাজার ৪১৭ কোটি টাকায়। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৭ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা, যা মোট স্থিতির ২৪ দশমিক ৬১ শতাংশ।

পিপলস লিজিং ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংসহ বেশকিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানত ফেরত দিতে পারেনি। অনেক আমানতকারী অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও কোনো সুফল পাননি। নানা অনিয়ম ও জমানো অর্থ সময়মতো ফেরত দিতে না পারায় এনবিএফআইগুলোর ওপর আস্থা কমছে সাধারণ গ্রাহকদের। টাকা তুলে নিয়েছেন অনেকে। ফলে কমছে আমানতের পরিমাণ।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে এনবিএফআইয়ের আমানত দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ৪২ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে আমানত কমেছে এক হাজার ২০৪ কোটি টাকা।

ডলার সংকট

আমদানি চাপ ও রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় দেশে মার্কিন ডলারের তীব্র সংকট দেখা দেয়। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়তে থাকে দাম। কমতে থাকে টাকার মান। বছরজুড়ে ডলার সংকটে এলসির দায় পরিশোধে ব্যর্থ হয় অনেক ব্যাংক। চাপে পড়ে অর্থনীতি। কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে এলসি খোলায় কড়াকড়ি আরোপ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু এরপরও সংকট কাটেনি।

২০২২ সালের শুরুতে দেশে প্রতি মার্কিন ডলারের দাম ছিল ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা। ৯ জানুয়ারি এটি বেড়ে ৮৬ টাকায় পৌঁছে। ২২ মার্চ পর্যন্ত এ দরেই স্থির ছিল। গত ২৩ মার্চ আন্তঃব্যাংকে আরও ২০ পয়সা বেড়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সায় দাঁড়ায়। ২৭ এপ্রিল আরও ২৫ পয়সা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা। মে মাসে কয়েক দফা বেড়ে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সায় উঠে। জুনে পৌঁছে যায় ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সায়। সেপ্টেম্বরে ডলার দর ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়ে ঠেকে ১০৭ টাকা ৫০ পয়সায়। কিন্তু খোলা বাজারে নগদ ডলার একপর্যায়ে ১২০ টাকায় ওঠে। পরে অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এতে নগদ ডলারের দাম কিছুটা কমে।

এখনও ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে নগদ ডলার। বছরের শুরুতে যা মিলেছে ৮৫ টাকায়।

সংকট নিরসন ও প্রবাসী আয় বাড়াতে গত ১১ সেপ্টেম্বর ডলারের সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। ব্যাংক-নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) যৌথ সভায় এ দাম নির্ধারণ করা হয়।

বৈদেশিক মুদ্রার মজুতে টান

ডলার সংকটের কারণে ধারাবাহিকভাবে কমেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত-রিজার্ভ। এটি কমে যাওয়া এবং এর ব্যবহার নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজনৈতিক অঙ্গন। সংকট নিরসনে প্রতিনিয়ত রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এমন পরিস্থিতিতে রিজার্ভের প্রকৃত পরিমাণ দেখাতে চাপ দেয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল- আইএমএফ।

বছরের শুরুতে ৪৪ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ সর্বশেষ নভেম্বরে ৩৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। তবে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে যদি রিজার্ভ হিসাব করা হয় তাহলে এটি আরও আট বিলিয়নের মতো কমে যাবে। সেই হিসাবে এখন প্রকৃত রিজার্ভ আছে ২৫ বিলিয়ন ডলার। যা গত সাত বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ডলারের বিক্রির পরিমাণ ছিল ৬০৫ কোটি। ২০২১-২২ অর্থবছরে রেকর্ড ৭৬২ কোটি ১৭ লাখ ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগের অর্থবছরে (২০২০-২১) কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৭৯৩ কোটি ডলার কেনে।

কমেছে রেমিট্যান্সের পরিমাণ

প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স নিয়ে বছরজুড়ে দুশ্চিন্তায় ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রেমিট্যান্স বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু হুন্ডি ও ডলারের বাজারের অস্থিরতার কারণে সরকারের কোনো উদ্যোগই কাজে আসেনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দুই হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ (২১ দশমিক ৩ বিলিয়ন) মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে নিয়ে আসেন, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ কম। ২০২০-২১ অর্থবছরে এসেছিল দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ (২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন) ডলার।

চলতি অর্থবছরেও প্রবাসী আয়ে গতি ফেরেনি। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছে ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ মার্কিন ডলার, আগস্টে এসেছে ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে এসেছে ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলার, অক্টোবরে ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ মার্কিন ডলার এবং নভেম্বর এসেছে ১৫৯ কোটি ৪৭ লাখ মার্কিন ডলার।

রেমিট্যান্স বাড়াতে উদ্যোগ

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে আড়াই শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের সিআইপি সম্মাননা, রেমিট্যান্স বিতরণ প্রক্রিয়া সম্প্রসারণ ও সহজ করা, অনাবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিনিয়োগ ও গৃহায়নে অর্থায়ন সুবিধা, ফিনটেক পদ্ধতির আওতায় আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার অপারেটরকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ড্রয়িং ব্যবস্থা স্থাপনে উদ্বুদ্ধ করা এবং রেমিট্যান্স পাঠাতে ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর চার্জ ফি মওকুফ করার মতো উদ্যোগ নেওয়া হয়।

‘বিনিময়’ সেবা চালু

লেনদেন সহজ করতে চালু করা হয় ‘বিনিময়’ সেবা। ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংকিং বা এমএফএস ও পিএসপির মধ্যে আন্তঃলেনদেন করতে গত ১৩ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক চালু করে ‘বিনিময়’। এ সেবার মাধ্যমে বিকাশ থেকে রকেটে অথবা উপায় থেকে এমক্যাশে বা বিকাশ কিংবা ব্যাংকে তাৎক্ষণিক লেনদেন করা যাবে একটি অ্যাকাউন্ট দিয়ে। ‘ক্যাশলেস সমাজ’ প্রতিষ্ঠায় নতুন এ প্ল্যাটফর্ম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠবে— মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD