যেকোনও বিদায়ের মুহূর্ত দুঃখের। তবে কিছু কিছু বিদায় নিয়ে আসে নতুন এক আলোক বার্তার ধ্বনি। বৈশ্বিক টালমাটাল অবস্থার মধ্যে দিয়ে বিদায় নিলো ২০২২, সম্ভাবনার আশায় বিশ্ব পা রাখলো ২০২৩-এ। বিগত বছরগুলোতে মহামারি পরিস্থিতির কারণে ঝিমিয়ে পড়া বিশ্ব স্বাভাবিক হতে শুরু করে ২০২২ সালে। করোনা পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের একটি প্রয়াস দেখা যায় গোটা বিশ্বে। সেই ধারা অব্যাহত রাখতেই ২০২৩-কে বলা হচ্ছে আরও সম্ভাবনাময়।
বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ সংকট, উন্নয়ন এবং নানা অস্থিরতায় পার হয়েছে ২০২২ সাল। দেশের অর্জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল স্বপ্নের পদ্মা সেতু এবং মেট্রোরেলের শুভ সূচনা। মহামারির সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ে এই বছরেই। করোনায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রেও মাইলফলক অর্জন হয় বাংলাদেশের। দেশের জনসংখ্যার অধিকাংশ গোষ্ঠীকেই নিয়ে আসা হয়েছে টিকার আওতায়, যা বিশ্বের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। এছাড়া একই সময়ে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম টানেলের একটি টিউবের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
এছাড়া ক্রীড়াক্ষেত্রে নারী দলের সাফ ফুটবল হয় অনেক হতাশার মধ্যেও হাসি ফুটিয়েছে। তাছাড়া রাশিয়া – ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব কিছুটা শঙ্কাও তৈরি করেছিল। মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভে চাপ, ডলার সংকট, অর্থপাচারের মতো ঘটনাও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল। পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার মতো অর্থনৈতিক সংকটে পড়ার আশঙ্কা করা হলেও তেমন কিছুই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ দেখেনি। তাছাড়া রাজনৈতিক নানা সংকটের মধ্যে দিয়ে গেছে এই বছর। ২০২৪ সালে দেশে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা আছে। তাই ২০২৩ সাল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ হিসেব মনে করা হচ্ছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার আশঙ্কাও আশা করা হচ্ছে।
এই বছর আরেক আলোচিত ঘটনার জন্ম দেয় প্রথমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্যে আয়োজিত কাতার বিশ্বকাপ। ৩৬ বছরের হতাশা যেন এক নিমিষেই কেটে গেছে ল্যাটিন দল আর্জেন্টিনার কাপ জয়ের মধ্যে দিয়ে। তাছাড়া এবারের কাতার বিশ্বকাপকে বলা হচ্ছে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে সেরা একটি আয়োজন।
সমাজ গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক ড এ এস এম আমানুল্লাহ বলেন, সামনের দিকে আমাদের এখানে আন্তর্জাতিক যে মূল্যস্ফীতি দেখছে বিশ্ব সেটি আমাদের এখানেও আসবে। তবে আমরা মাইক্রো ইকোনমির সূচকে ভালো করছি। ম্যাক্রো ইকোনমির ক্ষেত্রে আমাদের সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা লাগবে। বিশেষ করে আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন আছে, নতুবা আমরা সাফার করবো।
দ্বিতীয়ত, ভারতের সঙ্গে আমাদের যে সাতটি নিত্যপণ নেওয়ার কোটা আছে এরকম আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে চুক্তি করার প্রয়োজন আছে। ভারত সাড়া বিশ্বে সেসব পণ্য রফতানি বন্ধ করলেও আমরা পাবো। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যদি আমরা আরও দুই তিনটা দেশের সঙ্গে কোটা নিশ্চিত করতে পারি তাহলে খাদ্য সংকট আসবে না।
তিনি আরও বলেন, ২০২৩ সালে রাজনৈতিক কিছু অস্থিরতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা আছে। এটি স্থিতিশীল করার জন্য আমাদের একটি রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছাতে হবে।
সমঝোতার মাধ্যমে আমরা যদি একটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করতে পারি তাহলে সেটি আমাদের একটা অর্জন হবে। তাছাড়া রাজনৈতিক নেতারা একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিপ্লবের কথা বলেছে। এই সরকার যদি সেই বিপ্লবের শুরুটি করতে পারে তাহলে আমাদের ডিভিডেন্ডটা ভালো আসবে।