চলে গেলো আরও একটি বছর। শুরু হলো নতুন বছর ২০২৩ সালের যাত্রা। কিন্তু রাত ১২টা বাজার সঙ্গে আতশবাজি ও ফানুস উড়িয়ে ২০২৩ সালকে স্বাগত জানায় ঢাকাবাসী। আতশবাজির ঝলকে রঙ্গিন হয়ে উঠেছিল ঢাকার আকাশ। আর সেই সঙ্গে তো ছিল পটকার শব্দ।
আকাশে ছিল ফানুসও। অথচ নিষেধাজ্ঞা ছিল এসব আয়োজনে। ডিএমপির নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনে ঢাকার আকাশ ফানুসে ছেয়ে গেছে, বাসা-বাড়ির ছাদে ছাদে ফোটানো হয়েছে আতশবাজি। সব নিষেধাজ্ঞা ভেঙে বরাবরের মতো এবারও নববর্ষ উদযাপনে সবকিছুই ছিল।
শনিবার সন্ধ্যা থেকেই রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় ফানুস উড়তে দেখা যায়। রাত ১২টা বাজার সঙ্গে আতশবাজি ও ফানুস উড়িয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানায় ঢাকাবাসী।
আতশবাজির ঝলকে রঙ্গিন হয়ে উঠেছিল ঢাকার আকাশ। পটকার শব্দে প্রকম্পিত হয়েছে বিভিন্ন এলাকা। প্রায় প্রতিটি বাসার ছাদেই ভবনের বাসিন্দারা ভিড় করেন ফানুস-আতশবাজি উড়িয়ে ইংরেজি নতুন বছরকে বরণ করতে।
যদিও ঢাকায় থার্টি ফার্স্ট নাইটে উন্মুক্ত স্থানে কোনো ধরনের আয়োজন করার সুযোগ ছিল না। কঠোর নিষেধাজ্ঞা ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছিল মানুষের বাসা-বাড়ির ছাদকেও। কিন্তু তাতে থামিয়ে রাখা যায়নি উদযাপনকে। আতশবাজি আর ফানুসে ভরপুর ছিল ঢাকার আকাশ।
পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোড থেকে আসা জয়নুল আবেদীন জয় বলেন, নতুন বছরের শুরুতেই কয়েকজন মিলে খাবারের আয়োজন করেছি। সবাই মিলে উৎসব করেছি। নতুন বছরকে স্বাগত জানাই। নতুন বছরটি সবার আনন্দময় কাটুক।
ধানমন্ডিতে চারপাশ থেকে আগুনের ফুলের মতো আতশবাজি ফুটেছে। তীব্র শব্দে কেঁপে কেঁপে উঠেছে চারদিক। আকাশে ড্রোন উড়তে দেখা গেছে। অসংখ্য ফানুস উড়েছে। এখনও ফুটে চলেছে আতশবাজি। ভয়ে অনেক পাখি ওড়াওড়ি করেছে। কয়েকটা কবুতর বাসার ছাদে আশ্রয় নিয়েছে।
মোহাম্মদপুরের আদাবর এলাকায় রাত ১০ টার আগেই ফানুস ওড়াতে দেখা গেছে, দেখা গেছে আতশবাজি ফুটতেও। রাত ১১টার পর আদাবর এলাকার আকাশে অসংখ্য ফানুস উড়তে দেখা যায়। ১২টার দিকে শুরু হয় আতশবাজির বিকট শব্দ।
বায়েজিদ ইসলাম হিমু বলেন, নতুন বছরের শুরুতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরেছি। সব মিলিয়ে দারুণ মজা হয়েছে আমাদের।
পুরান ঢাকায় বাস করা নূর মোহাম্মদ বলেন, গত ১৫ বছর ধরে আতশবাজি ও ফানুস, পটকা ফুটিয়ে নতুন বছর উদযাপন করতে দেখে আসছি। যদি আমাদের ছোটবেলায় এসব দেখিনি।
চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাইয়ুম বলেন, আতশবাজি, পটকা, ফানুস ওড়ানোতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। আমরা মোবাইল কোর্টও চালিয়েছি।
রামপুরা একরামুন্নেসা হাইস্কুল এলাকার বাসিন্দা আবাদুল ইসলাম বলেন, ‘ছাদে উঠে আমরা উদযাপন করেছি। এলাকার সবাই আকাশে শত শত ফানুস, আতশবাজি ও পটকা ফুটিয়ে সবাই ভীষণ আনন্দ করেছে।’
এদিকে আতশবাজির বিকট শব্দ ও ফানুসের আগুনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাখিদের আতঙ্কিত হয়ে ডাকাডাকি করতে গেছে। শহরের অলিগলিতে অনেক কুকুর-বিড়ালদেরও আতঙ্কিত হয়ে ছুটোছুটি করতে দেখা গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার এরশাদ হোসেন বলেন, ‘রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ৪টি আগুনের খবর পেয়েছি। এর মধ্যে ২টি এলাকায় ফানুস থেকে আগুন ধরেছিল। তবে এখন পর্যন্ত তেমন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।’
এর আগে থার্টি ফার্স্ট নাইটে কোনো ধরনের আতশবাজি, পটকা কিংবা ফানুস ওড়ানোতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছিলেন, থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে কোনো ধরনের আতশবাজি, পটকা কিংবা ফানুস ওড়ানো যাবে না। এসব নিয়ন্ত্রণে রাজধানীজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ। সোয়াত, বোম ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড প্রস্তুত থাকবে।