২০২২-কে বিদায় জানিয়ে শুরু হলো ২০২৩। পুরনো সব ভুলে ভালো কিছুর প্রত্যাশায় নতুন বছরকে স্বাগত জানালো প্রত্যেকে, পিছিয়ে নেই ক্রিকেটাররাও। সাকিবরা ২০২২ সালটা যেভাবে কাটিয়েছেন, তার চেয়ে আরও ভালোভাবে কাটানোর পরিকল্পনা করছেন। গত বছরটিতে ভালো-খারাপের মিশেলে কাটলেও নতুন বছরে বাংলাদেশ দলের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। অক্টোবর-নভেম্বরে ভারতে অনুষ্ঠিত হবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে দাপট দেখানো বাংলাদেশের জন্য এই বিশ্বকাপের মঞ্চ দারুণ কিছু করার। বিশ্বকাপের এই চ্যালেঞ্জ নিয়েই শুরু হবে সাকিব-তামিম-মুশফিকদের নতুন বছর।
ওয়ানডে ফরম্যাটে গত কয়েক বছর ধরেই প্রত্যাশা মিটিয়ে আসছে বাংলাদেশ। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে সেই প্রত্যাশা অবশ্য খুব বেশি মেলাতে পারেনি সাকিব আল হাসানের দল। তবে ভারতের বিপক্ষে ঢাকা টেস্ট শেষে সাকিব নতুন আশার কথা বলেছিলেন। তার বিশ্বাস, ২০২৩ সালে অন্যান্য বড় দলগুলোর মতো বাংলাদেশও তিন ফরম্যাটে নিজেদের মেলে ধরতে পারবে।
শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েও সাকিব পুরনো সেই কথাই আবার মনে করিয়ে দিলেন তিনি, ‘আমি শেষ সংবাদ সম্মেলনে (ভারতের বিপক্ষে সিরিজ শেষে) যেটা বলেছি, আমি মনে করি- ২০২৩ সালটা আমাদের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা বছর হবে। এটা আমি বিশ্বাস করি, মনেপ্রাণেই বিশ্বাস করি এমনটা হবে। আর এটা শুধু একটা ফরম্যাটে না, তিনটা ফরম্যাটেই।’
গত বছরে কিছু বাজে পারফরম্যান্স থাকলেও বছরের শুরুটা হয়েছিল দারুণ এক জয়ে। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট জিতে ইতিহাস গড়েছিল বাংলাদেশ। তবে পুরো বছর জুড়ে জয়ের ধারাবাহিকতা ছিল না। শুধু টেস্টে নয় টি-টোয়েন্টিতেও একই অবস্থা। কেবল ওয়ানডেতেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পেরেছে তামিম ইকবালের দল। প্রথমবারের মতো প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জেতার পর বছরের শেষে এসে শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষেও ওয়ানডে সিরিজ জেতে বাংলাদেশ।
আগামী বছর বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ম্যাচ শুরু হবে ইংল্যান্ডকে আতিথেয়তা দিয়ে। তিনটি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলতে ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় আসবে ইংলিশরা। এরপর ধাপে ধাপে বাড়বে আন্তর্জাতিক ব্যস্ততা। চলতি বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপ ছাড়াও আছে এশিয়া কাপ। মার্চের ১ তারিখে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই ওয়ানডে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যাবে। ভারতের অনুষ্ঠিতব্য এই বিশ্বকাপ ঘিরে প্রত্যাশা অনেক। এমনিতেই আইসিসি ইভেন্ট বাংলাদেশের জন্য দীর্ঘশ্বাসের এক নাম হয়ে আছে। সেটা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হোক আর ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ২০২৩ বিশ্বকাপ হতে পারে সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, তামিমদের শেষ বিশ্বকাপ। এমন উপলক্ষের এক বিশ্বকাপে নিজেদের উজার করে নিশ্চিতভাবেই সাফল্য তুলে নিতে চাইবেন তারা।
সাকিব অবশ্য ২০২৩ সালে ভারতে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপে ভালো করার দারুণ সুযোগ দেখছেন, ‘বিশ্বকাপের বছর, অবশ্যই আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ এই একটা জায়গায় আমরা যে ধরনের প্রত্যাশা নিয়ে যাই, সেভাবে পারফর্ম করতে পারি না। তবে আমরা যদি, দল হয়ে খেলতে পারি, অবদান সব জায়গা থেকে আসে, তাহলে আমার ধারণা এই বিশ্বকাপ আমাদের খুব ভালো যাবে।’
সাকিবের এই বিশ্বাসের মূল কারণ ওয়ানডেতে ধারাবাহিক সাফল্য, ‘ওয়ানডেতে আমরা সেটেলড দল, যেখানে আমাদের ভালো না করার কোনও কারণই নেই। ২০১৪ সালের পর থেকে ঘরের মাঠে মনে হয় একটা সিরিজ হেরেছি কেবল। ওয়ানডেতে খারাপ করার কোনও কারণ আছে বলে মনে করি না।’
তবে ওয়ানডেতে ভালো করলেও টেস্ট ক্রিকেট বাংলাদেশ দল ব্যর্থতার বৃত্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে। নতুন বছরে আরও বেশি চ্যালেঞ্জ নিতে হবে সাকিবদের। এই বছর পাঁচটি টেস্ট খেলবে। মার্চ-এপ্রিলে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে একটি টেস্ট খেলবে। জুন-জুলাইয়ে আফগানিস্তান বিপক্ষে খেলবে দুটি টেস্ট। বছরের শেষ দিকে নিউ জিল্যান্ড বাংলাদেশ সফরে এসে দুটি টেস্ট খেলবে। ঘরের মাঠে ধারাবাহিকভাবে টেস্ট জিততে না পারলেও সাকিব নতুন বছরে এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না, ‘২০২৩ সালে আমাদের তিনটা বা পাঁচটা টেস্ট ম্যাচ আছে এফটিপিতে, যেটা আমি জানি। আমি মনে করি তিনটি সিরিজই আমাদের জেতা উচিত, যে ধরনের দলের সঙ্গে আমরা খেলবো। অবশ্যই জেতা উচিত।’
লাল বলের ক্রিকেটে বাংলাদেশ দল ব্যর্থ হলেও সাদা বলে ওয়ানডে ফরম্যাটের ক্রিকেট বাংলাদেশের সাফল্য অনেক। তবুও একই বলে ক্রিকেটের সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে খেলতে নামলেই সমর্থকদের বারবার হতাশা উপহার দিচ্ছেন সাকিব-লিটনরা। টেস্টের মতোই এই সংস্করণেও বাংলাদেশের পারফরম্যান্স বড্ড ধূসর। গত বছরে কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে উন্নতির জন্য অনেক কিছুর অদল-বদল আনা হয়েছে। বেশ কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটারদের ছাঁটাই করেও খুব একটা সাফল্য ধরা দেয়নি। তবে আশার কথা গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মূল পর্বে জয়ের যে খড়া ছিল, সেটি কাটিয়েছে বাংলাদেশ দল। ওই সাফল্যেই আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব।
সাকিবের বিশ্বাস নতুন বছরের ৬ মাসের মধ্যেই টি-টোয়েন্টি দলটি দাঁড়িয়ে যাবে। আগামী ২০২৪ সালে ওয়েষ্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপে বাংলাদেশ এই ফরম্যাটেও ভালো করবে বলে মনে করেন সাকিব, ‘টি-টোয়েন্টিতেও আমরা বেশ ভালো একটা অবস্থায় চলে আসছি। আমার ধারণা, ৬ মাসের মধ্যে আমরা একটা দল দাঁড় করাতে পারবো। যেটা ২০২৪ বিশ্বকাপে খুব ভালো করবে। যতটা আমরা হয়তো প্রত্যাশাও করি না, ততটা ভালো করার সম্ভাবনাও আছে বলে মনে করি, যেহেতু বিশ্বকাপটা ওয়েস্ট ইন্ডিজে।’