বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:১৪ অপরাহ্ন




জাতির উদ্দেশে ভাষণে শেখ হাসিনা

জাতির উদ্দেশে ভাষণে শেখ হাসিনা: দেশের মহৎ-বৃহৎ সব অর্জন আওয়ামী লীগের হাত ধরে: প্রধানমন্ত্রী

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: শুক্রবার, ৬ জানুয়ারী, ২০২৩ ৭:৫৪ pm
Prime Minister Sheikh Hasina Wazed প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা Sheikh Hasina Prime Minister Bangladesh প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা Cabinet Secretary মন্ত্রিপরিষদ hasina pmhasina mp pm-hasina hasina
file pic

স্বাধীন-স্বার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাসহ দেশের মহৎ ও বৃহৎ অর্জন আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরেই অর্জিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) বর্তমান সরকারের চার বছরপূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ২৩ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম এবং ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্যদিয়ে আমরা অর্জন করি মহান স্বাধীনতা। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের মাধ্যমে অর্থনীতিকে মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর দ্বারপ্রান্তে, তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি তাকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যা করে। স্তব্ধ হয় বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনার সুযোগ পায়। ১৯৯৬-২০০১ সাল- এ পাঁচ বছরে দেশের প্রতিটি খাতে অভাবনীয় উন্নয়ন সাধিত হয়। বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে ১১ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করে স্বাস্থ্যসেবা সাধারণ মানুষের দোরগোঁড়ায় পৌঁছে দেই।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে আমরা পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি সইয়ের মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তি স্থাপন করি। ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির সই হয়। একুশে ফেব্রুয়ারি ইউনেসকো কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা পায়। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার শুরু করি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০০১ সালের প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে জামায়াত-বিএনপি জোট আবার ক্ষমতায় আসে। বিএনপি-জামায়াত সরকারের পাঁচ বছর ছিল দেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। হত্যা-গুম, ধর্ষণ, লুটপাট, সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ানো হয়। জঙ্গিবাদ লালন-পালনসহ অপশাসন-কুশাসনে জোট সরকার যে মাইলফলক স্থাপন করেছিল, এ দেশের মানুষ আগে কখনো তা দেখেনি। শুধু আওয়ামী লীগেরই হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয় ওই সময়।

‘অর্থনীতির চাকা স্থবির হয়ে পড়ে। মূল্যস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুৎ উৎপাদন হ্রাস, স্বাক্ষরতা হ্রাস জনজীবন দুর্বিষহ করে তোলে। মেয়াদ শেষে নানান কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে স্বাভাবিক ক্ষমতা হস্তান্তরে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ভোটার তালিকায় এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার অন্তর্ভুক্ত করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার ষড়যন্ত্র করে। দলীয় রাষ্ট্রপতিকেই প্রধান উপদেষ্টার পদ দিয়ে সরকার গঠন করে ৬ জানুয়ারি নির্বাচনের নামে প্রহসনের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু জনগণ এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে’ বলেন শেখ হাসিনা।

সরকারপ্রধান বলেন, এমন অরাজক পরিস্থিতির মুখে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। তারাও জনগণের প্রত্যাশা পূরণে শুধু ব্যর্থই হয়নি, নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে কালিমালিপ্ত করে। তবে শেষ পর্যন্ত সেই সরকার ছবিসহ একটি সুষ্ঠু ভোটার তালিকা তৈরি এবং স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সসহ নির্বাচনী সংস্কার সম্পন্ন করে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি আসনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে।

জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া প্রধানমন্ত্রী পুরো বক্তব্য….

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় এমন কোন উদ্ভট ধারনাকে প্রশ্রয় এবং ইন্ধন না দিতে গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলসমূহ এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র করে কেউ যাতে জনগণের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে, সেদিকে সকলের সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। একইসঙ্গে, কেউ যাতে আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করে মানুষের জানমালের এবং জীবিকার ক্ষতিসাধন করতে না পারে, সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

বক্তব্যে এ বছরের শেষে অথবা সামনের বছরের শুরুতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের চার বছরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের বিবরন তুলে ধরা হয়েছে। প্রায় ৩০ মিনিটের বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, এ বছরের শেষে অথবা সামনের বছরের শুরুতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু এখন থেকেই স্বাধীনতা বিরোধী, ক্ষমতালোভী,জনগণের সম্পদ লুণ্ঠনকারী আর পরগাছা গোষ্ঠির সরব তৎপরতা শুরু হয়েছে। এদের লক্ষ্য ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে পিছনের দরজা দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করা।

গণতন্ত্রেও অগ্রযাত্রা ব্যাহত করা। এরা লুণ্ঠন করা অর্থ দিয়ে দেশে-বিদেশে ভাড়াটে বুদ্ধিজীবী এবং বিবৃতিজীবী নিয়োগ করেছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এরা মিথ্যে এবং ভুয়া তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এদের মিথ্যাচারে বিভ্রান্ত হবেন না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা করছি। নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য বাংলাদেশে এই প্রথম একটি আইন পাশ করা হয়েছে। সেই আইনের আওতায় সার্চ কমিটি করে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে আর্থিক স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে।

সরকার সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের দল, জনগণের শান্তিতে বিশ্বাসী, জনগণের শক্তিতে বিশ্বসী। জনগণ ভোট দিয়ে বিজয়ী করলে আওয়ামী লীগ দেশ গড়ার জাতীয় দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবে। যদি বিজয়ী না করে, তাহলে আমরা জনগণের কাতারে চলে যাব। তবে, যেখানেই থাকি, আমরা জনগণের সেবা করে যাব। আমাদের দেশ এগিয়েছে অনেক। তবে আরও এগিয়ে নিতে হবে। একটি উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ অর্জন আমাদের লক্ষ্য।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পর আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হলো স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের নানা অনুসঙ্গ ধারণ করে আমরা তরুণদের প্রশিক্ষিত করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। বক্তব্যর শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট গভর্মেন্ট, স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট শিল্প কলকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাণিজ্যি, কৃষিসহ সকল ক্ষেত্রে রোবোটিকস, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ন্যানো টেকনোলজি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, জৈব প্রযুক্তি অর্থাৎ ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। সকল ক্ষেত্রে গবেষণার উপর জোর দেয়া হয়েছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শোষণ-বঞ্চনামুক্ত একটি সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। আসুন, স্মার্ট দেশ গড়ার মাধ্যমে একটি সুখী-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলে আমরা তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করি। এদেশের সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সাল থেকে একটানা ১৪ বছর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে।

এই ১৪ বছরে আমরা দেশ এবং দেশের জনগণকে কী দিতে পেরেছি- তার বিচার-বিশ্লেষণ আপনারা করবেন। বর্ষপূর্তিতে আমি শুধু কয়েকটি বিষয়ে আলোকপাত করে আপনাদের স্মৃতিকে নাড়া দিতে চাই। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে আমরা যখন সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করি, তখনও বিশ^ব্যাপী মন্দাবস্থা চলছিল। চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ছিল আকাশচুম্বী। অন্যদিকে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ছিল নিম্নমুখী।

বিদ্যুতের অভাবে দিনের পর দিন লোডসেডিং চলতো। গ্যাসের অভাবে শিল্পকারখানার মালিকেরা যেমন হাহাকার করতো, তেমনি চূলা জ¦লতো না মানুষের বাড়িতে। সারসহ কৃষি উপকরণের উচ্চমূল্য এবং জ¦ালানি তেলের অভাবে কৃষকের নাভিশ্বাস উঠেছিল। এমনি এক অর্থনৈতিক দূরবস্থার মধ্যে আমরা সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেই। নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে আমরা রূপকল্প-২০২১ প্রণয়ন করি এবং জনগণের সামনে তুলে ধরি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে সরকার গঠনের পর সেই ইশতেহারের আলোকে আমরা আশু করণীয়, স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে এগিয়ে নেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করি।

স্থবির অর্থনীতিকে সচল করতে শুরুতেই কৃষি, জ্বালানি, বিদ্যুৎসহ কয়েকটি খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা কাজ শুরু করি। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বেশ কয়েকটি ছোট বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করি। তিনি বলেন, খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আমরা মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই রাসায়নিক সারের দাম কমিয়ে দেই। এরপর আরও দু-দফায় সারের দাম হ্রাস করে কৃষকের ক্রয় ক্ষমতার আওতায় আনা হয়। এমনিভাবে প্রতিটি খাতে আমরা পরিকল্পিত উন্নয়ন নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেই। রূপকল্প ২০২১-এর পর আমরা রূপকল্প ২০৪১ এবং বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ প্রণয়ন করেছি। রূপকল্প ২০২১-এ আমরা অন্যান্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলাম।

আজকে সন্তুষ্টচিত্তে বলতে পারি, আমরা সে প্রতিশ্রুতি পূরণে সক্ষম হয়েছি। রূপকল্প-২০৪১ লক্ষ্য হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত করা। বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০-এর লক্ষ্য হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা করে বাংলাদেশকে একটি টেকসই উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে হিসেবে টিকিয়ে রাখা। প্রদানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার সুফল জনগণ আজ পেতে শুরু করেছে। আজ দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুতের আওতায়। নিজস্ব গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি বর্ধিত চাহিদা মেটানোর জন্য আমরা এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করে এলএনজি আমদানির ব্যবস্থা নিয়েছি।

প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত আজ মধ্যবিত্ত-নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে গ্যাসের চূলায় রান্না হয়। আমরা নানা প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ সম্পন্ন করেছি। এই সেতু দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলাকে সড়ক পথে ঢাকা এবং অন্যান্য জেলার সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত করেছে। গত ২৮-এ ডিসেম্বর মেট্রোরেল উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আমরা যোগাযোগের ক্ষেত্রে আরেকটি মাইলফলক স্পর্শ করেছি। কিছুদিনের মধ্যেই শুধু বাংলাদেশেই নয়, চট্টগ্রামে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম পাতাল সড়কপথ- বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের মাধ্যমে আরেকটি মাইলফলক স্থাপিত হবে।

তিনি বলেন, পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। আমরা ২০১৮ সালের মে মাসে মহাকাশে নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপন করেছি। তিনি বলেন,স্বাধীন-স্বার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাসহ এ দেশের মহৎ এবং বৃহৎ অর্জনসমূহ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরেই অর্জিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ২৩ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম এবং ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে আমরা অর্জন করি মহান স্বাধীনতা।

স্বাধীনতার পর জাতির পিতা যখন যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের মাধ্যমে অর্থনীতিকে মজবুত ভিত্তির উপর দ্বার করানোর দ্বারপ্রান্তে, তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি তাঁকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যা করে। স্তব্ধ হয় বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনার সুযোগ পায়। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ – এই ৫ বছরে দেশের প্রতিটি খাতে অভাবনীয় উন্নয়ন সাধিত হয়। বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে ১১ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করে স্বাস্থ্যসেবা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেই। দীর্ঘদিনের সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে আমরা পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তি স্থাপন করি। ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তির স্বাক্ষরিত হয়।

২১-এ ফেব্রুয়ারি ইউনেসকো কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা পায়। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চারনেতা হত্যার বিচার শুরু করি। তিনি বলেন,২০০১ সালের প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে জামায়াত-বিএনপি জোট আবার ক্ষমতায় আসে। বিএনপি-জামাতে সরকারের ঐ ৫ বছর ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। হত্যা-গুম, ধর্ষণ, লুটপাট, সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ানো এবং জঙ্গিবাদের লালন-পালনসহ অপশাসন-কুশাসনে জোট সরকার যে মাইলফলক স্থাপন করেছিল, এদেশের মানুষ আগে কখনও তা দেখেনি। শুধু আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয় ওই সময়। অর্থনীতির চাকা স্থবির হয়ে পড়ে।

মূল্যস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, বিদ্যুৎ উৎপাদন হ্রাস, সাক্ষরতা হ্রাস জনজীবন দূর্বিসহ করে তোলে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেয়াদ শেষে নানা কুটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে স্বাভাবিক ক্ষমতা হস্তান্তরে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ভোটার তালিকায় ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার অন্তর্ভুক্ত করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার ষড়যন্ত্র করে। দলীয় রাষ্ট্রপতিকেই প্রধান উপদেষ্টার পদ দিয়ে সরকার গঠন করে ৬ই জানুয়ারি নির্বাচনের নামে প্রহসনের উদ্যোগ নেয়। জনগণ তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এমনি এক অরাজক পরিস্থিতির মুখে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। তারাও জনগণের প্রত্যাশা পূরণে শুধু ব্যর্থই হয়নি, নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে কালিমালিপ্ত করে। তবে, শেষ পর্যন্ত সেই সরকার ছবিসহ একটি সুষ্ঠু ভোটার তালিকা তৈরি এবং স্বছ ব্যালট বাক্সসহ নির্বাচনী সংস্কার সম্পন্ন করে। ২০০৮ সালের ২৯-এ ডিসেম্বর একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন হয়। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি আসনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে।

শেখ হাসিনা বলেন,২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর আমরা একটানা ১৪ বছর সরকার পরিচালনার দায়িত্ব রয়েছি। ১৬ বছর আগে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের শেষ অর্থবছরে আমরা কোথায় ছিলাম আর এখন আমাদের অবস্থান কোথায় কয়েকটি আর্থ-সামাজিক সূচকের মাধ্যমে আপনাদের সামনে তা তুলে ধরতে চাই। তিনি বলেন,জোট সরকারের শেষ অর্থবছর ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে। ২০০৫-০৬ সময়ে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ। বর্তমানে দারিদ্রের হার ২০ শতাংশ। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৪-শূন্য শতাংশ। করোনা মহামারির আগে ২০১৯-২০২০ অর্থবছর তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছিল ৮ দশমিক এক-পাঁচ শতাংশে। ২০০৫-০৬-এ জিডিপির আকার ছিল মাত্র ৬০ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপি’র আকার ৪৬০ দশমিক সাত-পাঁচ বিলিয়ন ডলার। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে জাতীয় বাজেটের আকার ছিল ৬১ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।

বিএনপি-জামাতের শেষ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি খাতে আয় হয়েছিল ১০ দশমিক পাঁচ-দুই বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২০২২ অর্থবছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫২ দশমিক শূন্য-আট বিলিয়ন ডলারে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ৪ দশমিক আট-শূন্য বিলিয়ন ডলার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বিদেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা পাঠিয়েছেন ২২ দশমিক শূন্য-সাত বিলিয়ন ডলার। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে তা ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। বিশ^ব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ও মূল্যস্ফীতির কারণে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৪ বিলিয়ন ডলারে। যা ৫ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য রিজার্ভ রয়েছে। তিনি বলেন, ২০০৫-০৬ সময়ে শিশুমৃত্যুর হার ছিল প্রতি হাজারে ৪৫ জন। বর্তমানে তা নেমে এসেছে ২২ জনে। গড় আয়ু সাড়ে ৬৪ বছর থেকে ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে।

সাক্ষরতার হার ৪৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৫ দশমিক ২ শতাংশ হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার ছিল ৭১ শতাংশ, তা হয়েছে ৯৯ শতাংশ। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৩৭৩ কোটি টাকা। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে কৃষি খাতে ভতুর্কি দেয়া হয় ৫৯২ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছর কৃষি খাতে মোট ভর্তুকির পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকা। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দেশে চাল উৎপাদন হয়েছিল ১ কোটি ৭৯ লাখ মেট্রিক টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে চাল, গম, ভুট্টো ৪ কোটি ৭২ লাখ ৮৮ হাজার মেট্রিক টন। প্রধানমন্ত্রী বলেন,বিএনপি-জামাত জোটের শেষ বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল মাত্র ৩ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২৫ হাজার ৮২৬ মেগাওয়াট।

সে সময় বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠির হার ছিল মাত্র ৪৫ শতাংশ। ২০২২ সালে শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধা দিয়েছি। সব ঘর আলোকিত করেছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ৪১তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। জেন্ডার সমতা এবং নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে। শেখ হাসিনা বলেন, গত ১৪ বছরে যোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক ও রেলযোগাযোগ স্থাপনের জন্য প্রয়োজন ছিল প্রধান প্রধান নদীগুলোর ওপর সেতু নির্মাণ। বিগত ১৪ বছরে আমরা পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু, তিস্তা সেতু, পায়রা সেতু, ২য় কাঁচপুর সেতু, ২য় মেঘনা, ২য় গোমতী সেতুসহ শত শত সেতু, সড়ক, মহাসড়ক নির্মাণ, পুনঃনির্মাণ করেছি। এছাড়া, ঢাকায় হানিফ ফ্লাইওভার, তেজগাঁও-মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওয়ার, কমলাপুর-শাহজাহানপুর ফ্লাইওভার, বনানী ফ্লাইওভার, টঙ্গীতে আহসানউল্লাহ মাস্টার ফ্লাইওভার, চট্টগামে আক্তারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার ও বদ্দারহাট ফ্লাইওভারসহ বহুসংখ্যক ছোটবড় ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরাই প্রথম ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, নবীনগর-ডিইপিজেড-চন্দ্রা, ঢাকা-এলেঙ্গা মহাসড়ক চার বা তদুর্ধ্ব লেনে উন্নীত করি। ঢাকা-মাওয়া-জাজিরা এক্সপ্রেসওয়ে দেশের প্রথম এ ধরনের মহাসড়ক। এলেঙ্গা-রংপুর মহাসড়ক, আরিচা মহাসড়ক এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এয়ারপোর্ট থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আগামি বছর যানবাহনের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে খুলনা পর্যন্ত এবং চট্টগ্রাম হতে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল যোগাযোগ স্থাপনের কাজ চলছে। যমুনা নদীর উপর রেলসেতু নির্মাণ কাজও এগিয়ে যাচ্ছে।

গত নভেম্বরে একদিন ১০০ সেতু এবং ডিসেম্বরে ১০০ সড়ক উদ্বোধন করা হয়। দেশের উন্নয়নের ইতিহাসে এ এক অনন্য অর্জন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত প্রায় ৭১৮ কিলোমিটার মহাসড়ক ৪ বা তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত করা হয়েছে। ১ লাখ ১৩ হাজার ৩০৩ মিটার সেতু নির্মাণ বা পুনঃনির্মাণ, ২১ হাজার ২৬৭ মিটার কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ মাছ, মাংস ও ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ইলিশ উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম। বর্তমানে বিশ্বে বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে ৩য়, পাট উৎপাদনে ২য়, স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনে ২য়। প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ কৃষককে কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড প্রদান করা হয়েছে। ১ কোটি কৃষক ১০ টাকা দিয়ে ব্যাংক একাউন্ট খুলেছেন। ভর্তুকির টাকা সরাসরি ব্যাংকে জমা হয়। সেচের জন্য সুলভমূল্যে বিদ্যুৎ এবং কৃষিযন্ত্র ক্রয়ে ৭০ শতাংশ ভর্তুকি পাচ্ছেন। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই অনেকগুলি অঞ্চলে দেশী-বিদেশি কোম্পানি বিনিয়োগ শুরু করেছে।

কৃষি পণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন,কৃষি উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনা হচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়ে কোল্ডস্টোরেজ স্থাপন ও ফসল প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা নেয়া হবে। ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রামের জনগণকে শহরের সকল নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেয়ার কাজ চলছে। গ্রামেও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে গেছে। এ পর্যন্ত ৩৫ লাখেরও বেশি মানুষকে বিনামূল্যে জমিসহ ঘর প্রদান করা হয়েছে। ২ কোটি ৫৩ লাখ শিক্ষার্র্থীকে বৃত্তি-উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২০ সালের শুরুতে বিশ^ব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশও এক গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়েছিল। কিš‘ আপনাদের সহায়তায় এবং আমাদের সরকারের সময়মত উদ্যোগ গ্রহণের ফলে আমরা খুব ভালোভাইে সেই মহামারি মোকাবিলা করতে পেরেছি।

টিকা পাওয়ার যোগ্য শতভাগ মানুষকে বিনামূল্যে টিকা প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন,অর্থনীতিতে মহামারির প্রভাব মোকাবিলায় ২৮টি প্যাকেজের আওতায় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছি। গার্মেন্টসসহ অন্যান্য শিল্পকারখানার শ্রমিকদের বেতনভাতা নিশ্চিত করা হয়েছে। ৫০ লাখ প্রান্তিক মানুষকে দুই দফায় আড়াই হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারির সময় প্রায় ৭ কোটি ৩০ লাখ ৫০ হাজার মানুষ নানাভাবে উপকৃত হয়েছেন এবং প্রতিষ্ঠান উপকৃত হয়েছে প্রায় ২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬৭টি। তবে করোনাভাইরাস মহামারির ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে না উঠতেই শুরু হয়েছে রাশিয়া-উইক্রেন যুদ্ধ। পশ্চিমা দেশগুলোর এবং রাশিয়ার পাল্টাপাল্টি অবরোধের ফলে খাদ্য, জ্বালানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে পরিবহন খরচ। ফলে আমাদের দেশেও জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। আমরা কয়েকটি পণ্য বেশি দামে কিনে স্বল্পদামে সীমিত আয়ের মানুষের মধ্যে বিতরণ করছি। ১ কোটি পরিবার টিসিবি’র ফেয়ার প্রাইজ কার্ডের মাধ্যমে ৩০ টাকা কেজি দরে চাল ও সাশ্রয়ীমূল্যে ভোজ্য তেল, ডাল ও চিনি ক্রয় করতে পারছেন। ৫০ লাখ পরিবার ১৫ টাকা কেজি দরে মাসে ৩০ কেজি চাল কিনতে পারছেন।

অসহায় মানুষদের ভিজিডি ও ভিজিএফ-এর মাধ্যমে ৩০ কেজি করে চাল প্রতিমাসে বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। হিজড়া, বেদে, মান্তা, দলিত, হরিজন, কুষ্ঠরোগীসহ সকল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মানুষের জন্য পুর্নবাসন কর্মসূচি গ্রহণ করেছি আমরা। প্রধানমন্ত্রী বলেন,গত ১৪ বছরে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়েছে। বাংলাদেশকে আজ আর কেউ বন্যা, খরা, দুর্যোগের দেশ হিসেবে দেখে না। বাংলাদেশ এখন উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। উন্নয়নের রোল মডেল। বিভিন্ন আন্তজার্তিক ফোরামে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

জাতিসংঘসহ দুই ডজনেরও বেশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং সংগঠনে বাংলাদেশ সক্রিয় সদস্য। গত অক্টোবরে ৫ম বারের মত বিপুল ভোটে বাংলাদেশ জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। প্রতিবেশিদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থানের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। ভারতের সঙ্গে স্থলসীমানা চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সিটমহলবাসীর ৬৮ বছরের বন্দি জীবনের অবসান হয়েছে। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমানার শান্তিপূর্ণ মীমাংসার মাধ্যমে আমরা বঙ্গোপসাগরের ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সামুদ্রিক এলাকার উপর স্বার্বভৌম অধিকার অর্জন করেছি। আমরা ১২ লাখের মত রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বিশ্বে মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। বক্তব্যর শেষে প্রধানমন্ত্রী কবিতার উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ, প্রাণপণে সরাব জঞ্জাল,এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার। আপনারা সবাই ভালো থাকুন। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। খোদা হাফেজ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু,বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD