ঢাকা মহানগরীতে অনুমোদিত বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সংখ্যা জাতীয় সংসদে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, অনুমোদনহীন কোনো ক্লিনিক এখন ঢাকায় ‘চালু নেই’।
রোববার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপন করা হয়।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হাবিব হাসানের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ঢাকা মহানগরীতে বর্তমানে অনুমোদিত বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সংখ্যা ৪৮৪টি। সরকার অনুমোদিত বেসরকারি ক্লিনিকের নাম ও ঠিকানা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটের ‘বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন’ শীর্ষক লিংকে দেওয়া আছে। সেখানে সরকার অনুমোদিত বেসরকারি ক্লিনিকের নাম ও ঠিকানা সহজেই পাওয়া যাচ্ছে।
“অনুমোদনহীন বেসরকারি ক্লিনিকের সন্ধান পাওয়া গেলে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী সংস্থার সহযোগিতায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ করাসহ বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয় হয়।”
১৯৮২ সালের মেডিকেল অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিস অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া কোনো হাসপাতাল, ক্লিনিক বা ডায়াগনেস্টিক সেন্টার চালানোর সুযোগ নেই।
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ঢাকার রিজেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসার নামে প্রতারণা ও জালিয়াতির ঘটনা উদ্ঘাটিত হওয়ার পর জানা গিয়েছিল, অনুমোদন ছাড়াই চলছিল ওই হাসপাতাল।
এরার ২০২০ সালের নভেম্বরে ঢাকার আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে বরিশাল মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার আনিসুল করিমকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পর জানা যায়, ওই হাসপাতালও সেবা দেওয়ার অনুমোদন পায়নি।
এরপর সারা দেশে অনুমোদিত এবং অনুমোদনহীন বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের তালিকা পাঠাতে বিভাগীয় পরিচালকদের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিভাগীয় কার্যালয়গুলো পাঠানো তথ্য নিয়ে লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের একটি তালিকা তৈরি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
ওই তালিকায় সারা দেশের ১১ হাজার ৯৪০টি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনেস্টিক সেন্টারের নাম আসে, যারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন এবং যথাযথ সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছিল সে সময়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সে সময় বলেছিল, ওই তালিকার মধ্যে ২ হাজার ৯১৬টি হাসপাতাল ও ক্লিনিক লাইসেন্সের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। ৯ হাজার ২৪টি হাসপাতাল-ক্লিনিকের মধ্যে কোনো কোনোটি লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে চিকিৎসা দেওয়া শুরু করলেও এখনও অনুমোদন পায়নি। আবার কোনো কোনোটির লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, সেই অর্থে সেগুলোও অবৈধ।
অনুমোদনহীন যেসব চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র তখন চিহ্নিত করা হয়েছিল, তার মধ্যে ৩ হাজার ৫৩৫টি ছিল ঢাকা বিভাগে, ২ হাজার ২৩২টি চট্টগ্রাম বিভাগে, ১ হাজার ৫২৩টি খুলনা বিভাগে, ১ হাজার ৪৩৮টি রাজশাহী বিভাগে, ১ হাজার ৯৯টি রংপুর বিভাগে, ৯৬৩টি ময়মনসিংহ বিভাগে, ৬০৩টি বরিশাল বিভাগে এবং ৫৪৬টি সিলেট বিভাগে।
ওই তালিকা হওয়ার পর গত বছর মে মাসে অভিযান চালিয়ে ১ হাজার ৬৪১টি অনুমোদনহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর অগাস্টে আরেক দফা অভিযানে বন্ধ করা হয় অন্তত সাতশ প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন ক্লিনিককে জরিমানাও করা হয়।
এর বাইরেও বিভিন্ন সময়ে অভিযান চলে। এখন ঢাকায় আর কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র অনুমোদন ছাড়া চলছে না বলেই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ভাষ্য।
সংসদে আরেক প্রশ্নের জবাবে জাহিদ মালেক বলেন, “বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় নির্ধারিত পরিদর্শন টিম কর্তৃক নিয়মিত পরিদর্শন করা হচ্ছে। এ সময় অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। এছাড়াও কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্তসাপেক্ষে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণসহ নিবন্ধন বাতিল করা হয়।”
সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করে পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রকল্প নিয়েছে সরকার, যেখানে শিশুসহ সব বয়সী ক্যান্সার রোগীদের রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমানের এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্ধারিত পরিদর্শন টিম নিয়মিত পরিদর্শন করে। পরিদর্শনকালে যদি কোনো ‘ভুয়া ডাক্তার’ পাওয়া যায়, তাৎক্ষণিকভাবে জেল ও জরিমানা করা হয়।
“ভুয়া ডাক্তারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় ইদানিং হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহে মোবাইল টিমের ঘনঘন পরিদর্শন ও তৎপরতার কারণে ভুয়া ডাক্তারদের তৎপরতা কিছুটা কমে এসেছে।”
গতবছর সেপ্টেম্বরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দেশের সব বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ব্লাড ব্যাংকের সাইনবোর্ডে তাদের লাইসেন্স নম্বর যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছিল। নির্দেশনা না মানলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শান্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও সতর্ক করা হয়েছিল।