শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৭:৫৩ অপরাহ্ন




শীতের মাঝেই ফিরলো লোডশেডিং!

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: সোমবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০২৩ ১২:৪০ pm
বিদ্যুৎ loadshedding energy crisis electricity power grid বিদ্যুত বিভ্রাট লোডশেডিং মেগাওয়াট
file pic

জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে মাঝারি মানের শৈত্যপ্রবাহ। পৌষ মাসের শেষ সপ্তাহ হওয়ায় এ সময় তাপমাত্রাও ছিল অনেক কম। অথচ এ শীতের মধ্যেই হঠাৎ করে দেশে ফিরে আসে লোডশেডিং। দেশের বিভিন্ন জেলায় তা শুরু হয় ৮ জানুয়ারি তথা ২৪ পৌষ। পরের দিন (৯ জানুয়ারি) ২৫ পৌষ ছিল এক সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ লোডশেডিং।

সূত্রমতে, গত জুলাই থেকে শুরু হয় আনুষ্ঠানিক লোডশোডিং। মাঝে কিছুটা কমলেও সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে তা চরম আকার ধারণ করে। অক্টোবরের শুরুর দিকে লোডশেডিং রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছায়। সে সময় প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। তেল ও গ্যাস সংকটে বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকাই ছিল এর মূল কারণ। যদিও নভেম্বরে লোডশেডিংয়ের মাত্রা কমে আসে। ডিসেম্বরের শেষ দিকে লোডশেডিং ছিলই না। তবে জানুয়ারিতেই তা আবার ফিরে আসে।

লোডশেডিংয়ের এ প্রবণতাকে অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, গত কয়েক বছরে কখনোই পৌষ মাসে লোডশেডিং হয়নি। তবে এ বছর ভিন্ন চিত্র দেখা গেল। যদিও এরই মধ্যে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দামও বাড়িয়েছে সরকার। অর্থাৎ একদিকে ব্যয় বাড়ছে, আরেকদিকে অনাকাক্সিক্ষত লোডশেডিং শুরু হয়েছে। এটা বিদ্যুৎ খাতের জন্য অবশ্যই অশনি সংকেত। কারণ পৌষেই এ অবস্থা শুরু হলে আগামী গ্রীষ্মে কী অবস্থা হবে?

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি বছর প্রথম লোডশেডিং শুরু হয় ৮ জানুয়ারি তথা ২৪ পৌষ। ওইদিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ১৪ ঘণ্টাব্যাপী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন মাত্রায় লোডশেডিং হয়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ লোডশেডিং ছিল সন্ধ্যা ৭টায়। ওই সময় সাবস্টেশন পর্যায়ে লোডশেডিং করা হয় ৫৫৫ মেগাওয়াট। ওই সময় ৯ হাজার ৮৮০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন করা হয় ৯ হাজার ৩২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

পরের দিন (৯ জানুয়ারি) তথা ২৫ পৌষ সকাল সাড়ে ৬টা থেকেই শুরু হয় লোডশেডিং, যা চলে ওইদিন রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত। সারাদিন লোডশেডিং চললেও ওইদিন দুুপুর সাড়ে ১২টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং হয়। এর মধ্যে সন্ধ্যা ৬টায় সর্বোচ্চ এক হাজার ২০২ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। ওই সময় ৯ হাজার ৭৪৮ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় আট হাজার ৫৪৬ মেগাওয়াট।

১০ ডিসেম্বর তথা ২৬ পৌষ সকাল সাড়ে ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলে লোডশেডিং। এর মধ্যে সকাল ১০টায় সর্বোচ্চ ৮১৬ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। ওই সময় আট হাজার ১৯১ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় সাত হাজার ৩৭৫ মেগাওয়াট। ১১ ডিসেম্বর (২৭ পৌষ) সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা ও বেলা সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত দুই দফায় লোডশেডিং দেয়া হয়। মাঝের সময়টায় লোডশেডিং ছিল না। ওইদিন সকাল ৯টায় সর্বোচ্চ ৬১৬ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। ওই সময় আট হাজার ৮৫৫ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় আট হাজার ২৩৯ মেগাওয়াট।

১২ ডিসেম্বর (২৮ পৌষ) দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত চলে লোডশেডিং। এর মধ্যে সন্ধ্যা ৬টায় সর্বোচ্চ ৬৬১ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। ওই সময় ৯ হাজার ৭৫৪ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় ৯ হাজার ৯৩ মেগাওয়াট। ১৩ ডিসেম্বর (২৮ পৌষ) শুক্রবার কোনো লোডশেডিং হয়নি। তবে পরের দিনই (১১ ডিসেম্বর তথা ২৭ পৌষ) লোডশেডিং ফিরে আসে। ওইদিন সকাল সাড়ে ৭টা রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত লোডশেডিং দেয়া হয়। এর মধ্যে সন্ধ্যা ৬টায় সর্বোচ্চ ৭৫৬ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। ওই সময় ৯ হাজার ৪৩৬ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় আট হাজার ৬৮০ মেগাওয়াট।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৯ ও ১০ জানুয়ারি গ্যাস সংকটের কারণে ২৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ ছিল, ১১ ও ১২ জানুয়ারি বন্ধ ছিল ২২টি কেন্দ্র এবং ১৩ ও ১৫ জানুয়ারি বন্ধ ছিল ২১টি কেন্দ্র। একইভাবে জ্বালানি তেল (ফার্নেস অয়েল) সংকটের কারণে ৯ জানুয়ারি ৪১টি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোপুরি বা আংশিক বন্ধ ছিল। ১০ জানুয়ারি তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩টি। আর ১১, ১২, ১৩ ও ১৫ জানুয়ারি জ্বালানি তেল সংকটের কারণে ৪৪টি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোপুরি বা আংশিক বন্ধ ছিল। অর্থাৎ এই ছয় দিন গড়ে ৬৪-৬৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্র আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ ছিল।

পিডিবির এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছর প্রতি মাসেই কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে। গত অর্থবছর প্রথম ছয় মাসে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল চার হাজার ১৫১ কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টা। আর চলতি অর্থবছর প্রথম ছয় মাসে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৩৭৯ কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টা। এ হিসাবে গত ছয় মাসে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে এক হাজার ৭৭২ কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টা বা ৪২ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

যদিও চলতি অর্থবছরের শুরুতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়বে বলেই প্রক্ষেপণ করেছিল পিডিবি। এ সময় গত ছয় মাসে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার হাজার ৪৯২ কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টা। তবে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় অর্ধেক বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে এ সময়। এর মূল কারণ গ্যাস ও তেলের সংকট। চলতি অর্থবছরের বাকি ছয় মাসও এ অবস্থা অব্যাহত থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

সূত্রমতে, চলতি অর্থবছরের বাকি ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার হাজার ৪৯৮ কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টা। তবে সংশোধিত হিসাবে তা কমিয়ে ধরা হয়েছে দুই হাজার ৬০২ কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে প্রায় ৪২ শতাংশ। এতে আগামী ছয় মাসও লোডশেডিংয়ের ধারা অব্যাহত থাকবে বলেই মনে করে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিডিবির একাধিক সদস্য বলেন, গ্যাস ও তেল বর্তমান অনুপাতে সরবরাহ করা হলেও আগামী এপ্রিলে দৈনিক আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকবে। এতে গ্রাহক পর্যায়ে প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হবে। আর ডলার সংকটে তেল ও গ্যাস আমদানিও করা যাচ্ছে না। তাই সহজেই এ পরিস্থিতি উন্নতির আশা নেই।

উল্লেখ্য, গত অক্টোবরে পিডিবির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে ১২ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। মার্চে তা আরও বেড়ে দাঁড়াবে ১৪ হাজার ১০০ মেগাওয়াট। আর এপ্রিল ও মে মাসে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে। সে সময় সর্বোচ্চ ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদা থাকবে। ওই সময় লোডশেডিংও সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। [শেয়ার বিজ]




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD