বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ০২:৩০ পূর্বাহ্ন




মাঘের শীতে রংপুরে নিম্ন আয়ের মানুষ বিপাকে

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: বুধবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২৩ ৯:১৯ pm
Mild cold wave cool আবহাওয়া তাপমাত্রা পূর্বাভাস কুয়াশা লঘুচাপ বঙ্গোপসাগর সেলসিয়াস tem Weather আবহাওয়া Rain বৃষ্টি Cold wave শৈত্যপ্রবাহ শৈত্য প্রবাহ Climate Change Conference COP27 winter season temperate climate polar autumn coldest Cold পৌষ মাঘ শীতকাল তাপমাত্রা ঋতু হিমেল হাওয়া হাড় কাঁপুনি সর্দিজ্বর ঠান্ডা Cold wave
file pic

মৃদু শৈত্যপ্রবাহে শেষ হয়েছে পৌষ। দিনপঞ্জিকায় এখন চলছে মাঘ মাস। শীতের হাড়কাঁপানো আচরণে এই মাসে শীতের তীব্রতা আরও বাড়বে এমনটায় আভাস মিলছে। এরই মধ্যে শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়েছে রংপুরসহ উত্তরাঞ্চল। বুধবার (১৮ জানুয়ারি) দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে, ৬ দশমিক ২ ডিগ্রি।

গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে রংপুর অঞ্চলে চলছে মাঝারি ও তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। সঙ্গে রয়েছে কনকনে শীত আর হিমেল হাওয়া। শীতের তীব্রতার সঙ্গে শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের জনজীবন। কয়েকদিন ধরে সূর্যের দেখা মিললেও ভোরবেলা উত্তরের আকাশ থাকছে ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন। আর বিকেল হওয়ার আগেই কোথাও কোথাও শীতের দাপটে সূর্যের দেখা মিলছে না। এমন জুবুথুবু শীতে বাড়ছে রোগ, সঙ্গে আগুন পোহাতে গিয়ে ঘটছে দগ্ধ হওয়ার ঘটনাও।

এদিকে মাঘের মাঝামাঝি শীতের তীব্রতা আরও বাড়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত এ অঞ্চলের শীতার্ত অসহায় ও দরিদ্র মানুষজন। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষগুলোর পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় দুর্ভোগও বেড়েছে কয়েকগুণ। নদী তীরবর্তী ও ছিন্নমূল মানুষরা রয়েছেন চরম ভোগান্তিতে। যেন তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে শীতের প্রভাব পড়েছে।

শীতের সকালে ছিন্নমূল আর গ্রামীণ মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। শীতের পাশাপাশি কুয়াশা বেশি হওয়ায় সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে গাড়ি। এতে দূরপাল্লার পরিবহন চলছে ধীরগতিতে। এদিকে তীব্র শীতে ইরি-বোরোর চারা রোপণ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। কৃষি শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না, যাদের পাওয়া যাচ্ছে তাদের দিতে হচ্ছে বেশি টাকা। এতে সার, বীজ ও সেচের সঙ্গে কৃষি শ্রমিকের মজুরিতে হচ্ছে বাড়তি খরচ।

এদিকে, রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, শীতের কারণে বেড়েছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগের প্রকোপ। গত কয়েকদিনের তুলনায় হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে লম্বা হচ্ছে মৃত্যুর পরিসংখ্যানও।

রংপুর মহানগরীর শাপলা চত্বরে খাঁন বহুমুখী মার্কেটের সবজি বিক্রেতা আনাম মিয়া জানান, তীব্র শীতের কারণে বিক্রি অনেক কমে গেছে। হাড়কাঁপানো শীতে জীবিকার প্রয়োজনে দোকান খুলে বসে থাকলেও তাতে তেমন লাভ হচ্ছে না।

হাজীপাাড়া চামড়াপট্টি এলাকার গৃহিণী লাভলী বেগম জানান, সাতসকালে উঠেই সন্তানদের স্কুলে রেখে আসতে হয়। গত কয়েকদিন থেকে ঠান্ডায় তার ছোট মেয়ে ও তিনি সর্দি-কাশিতে ভুগছেন। এমনকি চিকিৎসার জন্য এর মধ্যে সদর হাসপাতালেও গিয়েছিলেন। এসময় তিনি জানান, গত রোববার তার এলাকায় শীতজনিত রোগে আক্রান্ত এক বয়স্ক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. তানভীর চৌধুরী বলেন, শীতজনিত রোগবালাই বিশেষ করে নিউমোনিয়া, কোল্ড ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্তদের বেশিরভাগই শিশু ও বয়স্ক মানুষ। শীতজনিত রোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত প্রায় সহস্রাধিক শিশু গত ৭-৮ দিনে ভর্তি হয়েছে। শিশুরা কোল্ড ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া রোগেও আক্রান্ত হচ্ছে। তবে এতে আতঙ্কের কিছু নেই।

তিনি আরও বলেন, এসব রোগ থেকে শিশুকে রক্ষা করতে গরম কাপড় পরানো জরুরি। মায়েদের খেয়াল রাখতে হবে কোনোভাবেই যেন বাচ্চাদের শীত না লাগে। তবে বেশি অসুস্থ মনে হলে স্বাস্থ্যকেন্দ্র কিংবা হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

এদিকে শীতে অসুস্থ নারী, পুরুষ ও শিশুদের জরুরি চিকিৎসার জন্য রংপুর বিভাগের প্রতিটি ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে মেডিকেল কাজ করছে। রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাবিবুর রহমান জানান, জরুরি সেবা দিতে প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে মেডিকেল টিম রয়েছে। পুরো বিভাগে ৫৪৪টি টিম শীতকালীন রোগে আক্রান্ত শিশু, নারী ও বয়স্কদের সেবা প্রদান করছে। এছাড়াও একটি বিভাগীয় মনিটরিং টিম রয়েছে।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, বুধবার সকাল ৬টায় রংপুরে সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। গতকালও একই তাপমাত্রা ছিল। এছাড়া আজ তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ দশমিক ২, দিনাজপুরে ৭ দশমিক ৪, ডিমলা ও রাজারহাটে ৭ দশমিক ৮ এবং সৈয়দপুরে ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রংপুর অঞ্চলের মধ্যে আজ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে রংপুর বিভাগে তাপমাত্রা এত নিচে নামেনি। এ অবস্থা আরও দুই থেকে তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে।

এদিকে রংপুর জেলার জনসংখ্যা প্রায় ত্রিশ লক্ষাধিক, এর মধ্যে শীতার্ত মানুষের সংখ্যা পাঁচ লাখেরও বেশি। এর মধ্যে শুধু রংপুর মহানগরীতেই বাস করে প্রায় ৭০ হাজার ভাসমান নারী-পুরুষ। এরা রেলস্টেশনের প্ল্যাটফরম, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন অফিস-আদালতের বারান্দা আর ফুটপাতে রাত কাটায়। জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংগঠন থেকে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। একইভাবে জেলার আট উপজেলা বিশেষ করে তিস্তা, ঘাঘট, করতোয়া, যমুনেশ্বরী বিধৌত চরাঞ্চলে বসবাসকারী হাজার হাজার পরিবার শীতে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। তাদের বেশিরভাগ মানুষের কাছে এখনো শীতবস্ত্র পৌঁছেনি।

এ বিষয়ে রংপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে মাত্র ৫৯ হাজার কম্বল বরাদ্দ পেয়েছেন। এসব কম্বল রংপুরের আট উপজেলায় ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। আরও শীতবস্ত্র চাওয়া হয়েছে। দুই-চার দিনের মধ্যে ৩০ হাজার পিস কম্বল এসে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD