মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ১২:৪১ অপরাহ্ন




বঙ্গবন্ধু টানেলে যানবাহনের টোল হার চূড়ান্ত, অর্থ বিভাগের সম্মতি

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: শনিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০২৩ ১১:৪০ am
সুড়ঙ্গ karnaphuli Bangabandhu Sheikh Mujibor Rahman Tunnel কর্ণফুলী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল সুড়ঙ্গ কর্ণফুলী টানেল
file pic

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের ভেতর চলতে হলে কোন গাড়িকে কত টোল দিতে হবে, তা চূড়ান্ত হয়েছে। সেতু বিভাগের খসড়া প্রস্তাব কোনো ধরনের কাটছাঁট না করেই সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। চূড়ান্ত প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি নিয়ে শিগগিরই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।

দেশের প্রথম টানেল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে যান চলাচলের জন্য টানেলটি ফেব্রুয়ারির শেষে কিংবা মার্চে উন্মুক্ত করা হবে। আর প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে যোগাযোগ অবকাঠামো খাতের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে বাংলাদেশ।

জানা গেছে, কয়েক দফায় যানবাহনের টোল হার নির্ধারণ করলেও সেগুলো যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের মনঃপূত হয়নি। সেতু কর্তৃপক্ষের গঠিত টোল সম্পর্কিত কমিটি সর্বশেষ গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে নতুন একটি প্রস্তাব দেয়। পরে সেটি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন দেয়া হয়। গত বুধবার খসড়া প্রস্তাবটিতে সম্মতি দেয় অর্থ বিভাগ। এরপর বৃহস্পতিবার সেতু কর্তৃপক্ষের বোর্ড সভায় সেটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

সেতু বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, চূড়ান্ত টোল হারে প্রাইভেটকার বা জিপ গাড়িকে গুনতে হবে ২০০ টাকা, পিকআপ ২০০ টাকা, মাইক্রোবাস ২৫০ টাকা, বাস (৩১ আসনের কম) ৩০০ টাকা, বাস (৩২ আসনের বেশি) ৪০০ টাকা, বাস (৩ এক্সেল) ৫০০ টাকা। এছাড়া ভারী যানবাহন ট্রাকের (৫ টন) টোল ৪০০ টাকা, ট্রাক (৫.০১ থেকে ৮ টন পর্যন্ত) ৫০০ টাকা, ট্রাক (৮.০১ থেকে ১১ টন পর্যন্ত) ৬০০ টাকা, ট্রাক (থ্রি এক্সেল পর্যন্ত) ৮০০ টাকা, ট্রেইলার (ফোর এক্সেল পর্যন্ত) ১ হাজার টাকা। যদিও ফোর এক্সেলের অধিক ট্রেইলারের জন্য ১ হাজার টাকার পাশাপাশি প্রতি এক্সেলের জন্য অতিরিক্ত ২০০ টাকা হারে টোল দিতে হবে।

জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (উন্নয়ন) মো. আবুল হাসান বলেন, ‘সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের অন্যতম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের টোল নির্ধারণের প্রস্তাবে অর্থ বিভাগের সম্মতি পাওয়া গেছে। ফলে এ টোল হারই সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সম্মতি নিয়ে গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।’

সেতু কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, কর্ণফুলী নদীতে প্রতিযোগী একটি সেতু (শাহ আমানত সেতু) থাকায় টানেলের টোল হার নির্ধারণে সংশয়ে ছিল সেতু বিভাগ। কেননা শাহ আমানত সেতুর তুলনামূলক টোল হার কম। ফলে টানেলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী যানবাহন চলাচল করবে কিনা সে বিষয়ে সন্দিহান খোদ সেতু বিভাগও। আবার শাহ আমানত সেতুর প্রায় দ্বিগুণ দৈর্ঘ্য টানেল নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। এটি মূলত দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ কক্সবাজার পর্যন্ত সরকারের শিল্প খাতের উন্নয়ন সহযোগী যোগাযোগ অবকাঠামো হিসেবে তৈরি হচ্ছে। তাই শুরুতে যানবাহনের আধিক্য কম হলেও অপরাপর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গে প্রক্ষেপণ অনুযায়ী টানেলের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ কারণে শুরুতে টোলের হার কম রেখে টানেলকে জনপ্রিয় করতে শাহ আমানত সেতুর তুলনায় প্রায় আড়াই গুণ বর্ধিত টোল রাখা হয়েছে। তাতেও অবশ্য টোলের অর্থে চীনা ঋণের কিস্তি শতভাগ পরিশোধ করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্ট তথ্যমতে, টানেলের টোল হার নির্ধারণ বা পুনর্নির্ধারণে গত বছরের ২২ জানুয়ারি একটি কমিটি গঠন করা হয়। সে কমিটি কর্ণফুলী নদীর ওপর বিদ্যমান শাহ আমানত সেতুর টোল পর্যালোচনা করে দ্বিধায় পড়ে যায়। টানেল দিয়ে প্রাক্কলিত যানবাহন চলাচল নিশ্চিত করতে হলে টোলের পরিমাণ কোনোভাবেই বাড়তি রাখা যাবে না বলে মতামত দেন কমিটির সদস্যরা। রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও থ্রি-হুইলার চলাচলের বিষয়টিও বিবেচনায় নেয়া হয়। কিন্তু পদ্মা সেতুতে দর্শনার্থী ও যাত্রীদের আইন ভঙ্গের প্রবণতা ও টানেলের সার্বিক নিরাপত্তা চিন্তা করে হালকা যানবাহন চলাচলের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সেতু বিভাগ।

বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রকল্প পরিচালক মো. হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, ‘টানেলের শেষ মুহূর্তের নির্মাণকাজ চলছে। সংযোগ সড়কসহ কর্ণফুলীর নদীর দুই পাড়ের সড়ক নির্মাণের কাজ প্রায় শেষদিকে। টানেলে যানবাহন চলাচলের জন্য টোল হারও চূড়ান্ত। যান চলাচলের জন্য টানেলটি কিছু দিনের মধ্যেই উন্মুক্ত করা হবে।’

কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রথম টিউব গত ২৬ নভেম্বর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে সাড়ে ৯৫ শতাংশ। প্রতি মাসে দেড় শতাংশ হারে প্রকল্পটির বর্তমান পূর্ত ও আর্থিক কাজের অগ্রগতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে। তবে শেষ না হওয়া অধিকাংশ কাজই মূল টানেলের বাইরের। ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ কিংবা মার্চের শুরুতে যানবাহন চলাচলের জন্য টানেলটি খুলে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

চীনা অর্থায়নে নির্মিতব্য টানেলটির মূল ঠিকাদার চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি)। ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ ৪০ হাজার টাকার এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয় ২০১৫ সালের ৩০ জুন। ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু হয়। পাঁচ বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। কাজ শেষ করার পর দুই বছর ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড রয়েছে চুক্তিতে। পরবর্তী সময়ে সেতু কর্তৃপক্ষের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে টানেলের জন্য দেয়া অর্থ ব্যয়ের মেয়াদ ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। [বণিক বার্তা]




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD