যমুনা নদীতে দৃশ্যমান হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর ১ দশমিক ৯ কিলোমিটার অংশ। দ্রুত এগিয়ে চলছে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারের দেশের দীর্ঘতম ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এই সেতু নির্মাণের কাজ। ৪৯টি স্প্যানের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১০টি স্প্যান বসানো হয়েছে। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৫৩ শতাংশ।
রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ সহজ করতে এবং সার্ক, বিমসটেক, সাসেক ও ট্রান্স-এশিয়ান রেলপথের সঙ্গে যুক্ত করতে যমুনা নদীর উপর নির্মিত হচ্ছে এই রেল সেতু। চারটি প্যাকেজে এই রেল সেতু প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে জাইকা।
যমুনার টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জের দুই প্রান্তে বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার দূরে এ সেতুর নির্মাণ কাজ চলছে। টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ অংশে ডাব্লিউ ডি ওয়ান ও ডাব্লিউ ডি টু প্যাকেজের আওতায় ৫০টি পিলার আর ৪৯টি স্প্যান থাকছে সেতুতে। সেতুর দুই পাশে ০.০৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, ৭ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট এবং লুপ ও সাইডিংসহ মোট ৩০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হবে।
আধুনিকায়ন হবে সেতুর দুই পাড়ে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব ও পশ্চিম রেল স্টেশন। এছাড়াও ডাব্লিউ ডি থ্রি প্যাকেজের আওতায় থাকছে সিগনালিং ও টেলিকমিউনিকেশন উন্নত করার কাজ। আর ডাব্লিউ ডি ফাইভ প্যাকেজে সেতু রক্ষাণাবেক্ষণের জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস ও আবাসন নির্মাণের পাশাপাশি সেতু এলাকায় নির্মিত হবে রেলওয়ে সেতু জাদুঘর।
প্রকল্পের টাঙ্গাইল অংশে এখন পর্যন্ত অগ্রগতি হয়েছে ৬৬ শতাংশ আর সিরাজগঞ্জ অংশে ৩৭ শতাংশ। সিরাজগঞ্জ অংশের কাজ অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে সেতুর টাঙ্গাইল অংশে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা হবে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান।
প্রায় সহস্রাধিক দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী আর কর্মীর পরিশ্রমে চলছে সেতুর পিলারের পাইলিং ও সুপার স্ট্রাকচার বসানোর কাজ। ইতোমধ্যে ১৫টি পিলারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ৩৫টি পিলারের পাইলিং থেকে পিয়ার হেড পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের কাজ চলছে। এছাড়া সেতুর ৪০ থেকে ৫০ নম্বর পিলার পর্যন্ত বসানো হয়েছে ১০টি স্প্যান। সম্পন্ন হওয়া পিলারগুলোর উপর একে একে বসানো হচ্ছে বাকি স্প্যানগুলো।
জাপান ও বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকার এই প্রকল্পের এখন পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৩৭ শতাংশ আর প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৫৩ শতাংশ। সব কিছু ঠিক থাকলে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এই রেল সেতুর ওপর দিয়ে চলবে ট্রেন।
২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই রেল সেতুর নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু ইউসুফ সুর্য জানিয়েছেন, সেতুটি বাস্তবায়ন হলে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে পারাপার হবে যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী ট্রেন। এতে বঙ্গবন্ধু সেতুর দুই প্রান্তে যাত্রী ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবে উত্তরাঞ্চলের মানুষ। সেই সাথে পণ্য পরিবহনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে, প্রসারিত হবে ব্যবসা-বাণিজ্য।