সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে শনিবার তুরস্কবিরোধী বিক্ষোভে পবিত্র কোরআন পুড়িয়েছেন কট্টর ডানপন্থি এক রাজনীতিক। এ ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে তুরস্কসহ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বিভিন্ন দেশ।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, তুরস্কবিরোধী বিক্ষোভের দিনে ন্যাটোতে সুইডেনের যোগদানের চেষ্টার বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ হয়েছে।
এতে বলা হয়, সামরিক জোটে প্রবেশের জন্য যখন তুরস্কের সমর্থন দরকার সুইডেনের, সে সময়ে কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থের ওপর জঘন্য হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানাই…মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে মুসলিমদের লক্ষ্যবস্তু বানানোর পাশাপাশি আমাদের পবিত্র মূল্যবোধকে অপমানকারী এ ধরনের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের অনুমোদন দেয়াটা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য।’
স্টকহোমে তুরস্কের দূতাবাসের কাছে কট্টর ডানপন্থি অভিবাসীবিরোধী এক রাজনীতিক কোরআন পোড়ানোর পর ওই বিবৃতি দেয় আঙ্কারা। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সুইডেনের প্রতি তাগিদ দেয়ার পাশাপাশি ইসলামভীতির বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা নিতে সব দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
সুইডেনের রাজধানীতে একই দিনে তিনটি প্রতিবাদ কর্মসূচি হয়েছে, যার একটি ছিল কুর্দিদের প্রতি সমর্থন এবং ন্যাটোতে সুইডেনের যোগদান চেষ্টার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। অন্যদিকে তুরস্কপন্থি বিক্ষোভকারীরা দূতাবাসের বাইরে সমাবেশ করেছে। তিন কর্মসূচিতেই অনুমোদন ছিল পুলিশের। সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী টোবিয়াস বিলস্ট্রম বলেন, ইসলামভীতিপূর্ণ উসকানির বিষয়টি ভয়ানক।
এক টুইটবার্তায় তিনি বলেন, ‘সুইডেনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিধি ব্যাপক, তবে এর অর্থ এই নয় যে, সুইডেনের সরকার কিংবা আমি এমন মতপ্রকাশকে সমর্থন করি।’
ডেনমার্কের কট্টর ডানপন্থি রাজনৈতিক দল হার্ডলাইনের নেতা রাসমুস প্যালুদেন কোরআন পুড়িয়েছেন। অতীতের বেশ কিছু বিক্ষোভে কোরআন পোড়ানোর নজির আছে সুইডেনের নাগরিকত্ব পাওয়া এ রাজনীতিকের।
এ বিষয়ে জানতে ইমেইলে যোগাযোগ করে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি প্যালুদেনের।
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে সৌদি আরব, জর্ডান, কুয়েতসহ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বেশ কয়েকটি দেশে।
সৌদির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সৌদি আরব সংলাপ, সহিষ্ণুতা ও সহাবস্থানের মূল্যবোধ ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি ঘৃণা ও চরমপন্থাকে প্রত্যাখ্যান করে।’
সুইডেনের রাজধানীতে শনিবার তুরস্কবিরোধী বিক্ষোভে পবিত্র কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বিভিন্ন দেশ।
স্টকহোমে তুরস্কের দূতাবাস ভবনের সামনে এক কপি কোরআন পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানান কট্টর ডানপন্থি রাজনীতিক রাসমুস প্যালুডেন। এর আগেও বিভিন্ন বিক্ষোভে কোরআন পোড়ানোর নজির আছে তার।
তুরস্ক, পাকিস্তান, কুয়েতসহ বিভিন্ন দেশ এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে বলে টিআরটি ওয়ার্ল্ডের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
তুরস্ক
কোরআন পোড়ানোর ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থের ওপর জঘন্য হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানাই…মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে মুসলিমদের লক্ষ্যবস্তু বানানোর পাশাপাশি আমাদের পবিত্র মূল্যবোধকে অপমানকারী এ ধরনের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের অনুমোদন দেয়াটা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য।’
পাকিস্তান
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এ ধরনের কাণ্ডজ্ঞানহীন ও উসকানিমূলক ইসলামভীতিকর কর্মকাণ্ড বিশ্বের দেড় শ কোটির বেশি মুসলিমের ধর্মীয় সংবেদনশীলতাকে আঘাত করেছে।’
কুয়েত
দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ সালেম আবদুল্লাহ আল জাবের আল সাবাহকে উদ্ধৃত করে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেইউএনএর বিবৃতিতে বলা হয়, এ ঘটনা বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের অনুভূতিতে আঘাত হানার পাশাপাশি মারাত্মক উসকানির সৃষ্টি করেছে।
সৌদি আরব
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সৌদি আরব সংলাপ, সহিষ্ণুতা ও সহাবস্থানের মূল্যবোধ ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি ঘৃণা ও চরমপন্থাকে প্রত্যাখ্যান করে।’
সংযুক্ত আরব আমিরাত
সংযুক্ত আরব আমিরাতের পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশটি মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধ এবং নীতির বিপরীতে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বিঘ্নকারী যেকোনো কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে।
কাতার
মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রটি বলেছে, কোরআন পোড়াতে সুইডেনের কর্তৃপক্ষ যে অনুমোদন দিয়েছে, তার প্রতিবাদ জানাচ্ছে তারা।
দেশটি ঘৃণা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ইরান
কোরআন পোড়ানোকে ঘৃণা ও সহিংসতা ছড়ানোর চেষ্টা আখ্যা দিয়ে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি বলেন, বাকস্বাধীনতায় সমর্থনের ভুয়া অজুহাতে ইউরোপের কিছু দেশ চরমপন্থি ও উগ্রবাদীদের ইসলামের পবিত্রতা ও মূল্যবোধের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর সুযোগ করে দেয়।