নৈসর্গিক সৌন্দর্যের মোহময় লীলাভূমি, পটুয়াখালীর সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব কোণে বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে ১০ বর্গকিলোমিটার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে জেগে ওঠা নতুন একটি দ্বীপ দেশের পর্যটন খাতে নতুন সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে। এর নামকরণ করা হয়েছে ‘চর বিজয়’।
গভীর সমুদ্রে মাছ আহরণকারী জেলেরা ২০১৭ সালে দ্বীপটির সন্ধান দেন। ওই বছরের ডিসেম্বর মাসে স্থানীয় ১৩ জনের একটি দল প্রথমবারের মতো সেখানে যান। পরবর্তীতে স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা মিলে দ্বীপটিকে ‘চর বিজয়’ হিসেবে নামকরণ করেন। যদিও সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত কোনো নামকরণ করা হয়নি।
চারদিকে সমুদ্রবেষ্টিত জনবসতিহীন এ চরটি লাল কাকড়া আর নানা প্রজাতির পাখির কলতানে মুখরিত থাকে সর্বক্ষণ। দ্বীপের কাছে যেতেই দেখা মেলে দলবাঁধা লাল কাকড়ার দল। মনে হয় নিজেদের সৌন্দর্য ছড়িয়ে দ্বীপে আসা পর্যটকদের স্বাগত জানাতে বহুকাল ধরে অপেক্ষা করছে। আবার পর্যটকরা দ্বীপে নামলেই দৌড়ে পালাচ্ছে তারা।
অপরদিকে সুমদ্রের তীরে নানা প্রজাতির রং-বেরংয়ের পাখির দেখা মেলে। পাখিদের কাছে পর্যটক যাওয়া মাত্রই এক সঙ্গে আকাশের পানে ছুটে চলে পাখির দল। এর সঙ্গে রয়েছে স্বচ্ছ পানিতে সামুদ্রিক মাছের ছোটাছুটি আর ধুধু বালুর চর। যা পর্যটকদের ক্লান্ত মনকে আনন্দে ভরিয়ে দিচ্ছে।
সম্প্রতি চর বিজয় ঘুরে দেখা গেছে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা চারদিক সমুদ্রবেষ্টিত চর বিজয়ের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। এক দিকে লাল কাকড়ার আট পায়ে ছুটে চলা, পাখির কলতান আর সমুদ্রের সঙ্গে মিলিয়ে যাওয়া মেঘের ভেলা। যা প্রতিটা পর্যটকের মনকে আকৃষ্ট করেছে। দেখে মনে হয়েছে এ যেন সমুদ্রের বুকে জেগে ওঠা এক টুকরো আরেক বাংলাদেশ।
একাধিক স্পিডবোর্ড চালকরা জানান, অনেক পর্যটক চর বিজয়ে ঘুরতে এসে লাল কাকড়া, পাখি শিকার করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট করছে। চর বিজয়ের সৌন্দর্য রক্ষায় প্রশাসনের এখনই পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
চর বিজয় যাওয়ার জন্য কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকলেও শীতের মৌসুমে এখানে যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময়। বর্ষা মৌসুমে দ্বীপটি সাগরের পানিতে ডুবে থাকে। কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ বক্সের সামনে থেকে চর বিজয় যাওয়ার জন্য রয়েছে ট্যুরিস্ট বোট ও স্পিটবোড ভাড়া নেওয়ার কাউন্টার। কাউন্টার থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাড়া দিয়ে যাওয়া যাবে চর বিজয়। বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে না পরলে ট্যুরিস্ট বোর্ডে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। আর বোর্ডে ৩০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছানো সম্ভব। এই সময়ের মধ্যে পর্যটকরা উপভোগ করতে পারবেন নয়নাভিরাম বিজয়ের এই সৌন্দর্য।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শংকর চন্দ্র বৈদ্য জানান, চর বিজয় যাওয়ার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো নিয়মকানুন নেই। তবে সাগর উত্তাল থাকলে সেখানে যাওয়ার জন্য পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করা হয়।
তিনি আরও জানান, কোনো পর্যটক সেখানে গিয়ে বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে পড়লে দ্রুত উদ্ধার অভিযানের জন্য আধুনিক কোনো যানবাহন আমাদের হাতে নেই। তবে কোস্ট গার্ডকে বলা আছে। চর বিজয়ের পর্যটকদের জন্য একটি যানবাহন চলাচলের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। [kalbela]