৯২ ভাগ মুসলমানের চিন্তাচেতনাবিরোধী সিলেবাসের মাধ্যমে জাতিকে ধর্মহীন ও নাস্তিক্যবাদী জাতি তৈরির চক্রান্ত চলছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম (চরমোনাই পীর)। তিনি বলেন, ‘আমরা শিক্ষা সিলেবাস নিয়ে দীর্ঘদিন ধারাবাহিক আন্দোলন ও প্রতিবাদ করে আসছি। শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি আমাদের আন্দোলনকে মিথ্যা সাব্যস্ত করার চেষ্টা করেছিল। এখন প্রতিবাদের মুখে স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছে।’
শুক্রবার রাজধানীর কাজী বশির মিলনায়তনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের দ্বি-বার্ষিক নগর সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সংগঠনের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলমের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন—দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, মহাসচিব হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ।
সম্মেলনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বিগত কমিটি ভেঙে দিয়ে ২০২৩-২৪ সেশনের জন্য মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলমকে পুনরায় সভাপতি, মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল মজুমদারকে সহসভাপতি এবং ডা. মুহাম্মদ শহিদুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটি ঘোষণা করেন মুফতি রেজাউল করিম। পরে তিনি তাদের শপথ বাক্য পাঠ করান।
সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, ‘বিভিন্ন মহল থেকে প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি অবহিত করার পর প্রধানমন্ত্রী বলছেন, তিনি তা জানেন না। অথচ প্রধানমন্ত্রী বই বিতরণ কর্মসূচি উদ্বোধন করেছেন। তিনি না জেনে কীভাবে শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উদ্বোধন করলেন? তাহলে কারা এ দেশকে নিয়ন্ত্র্রণ করছে? কারা শিক্ষা সিলেবাস প্রণয়ণ করেছে? এর জবাব কে দেবে?’
চরমোনাই পীর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীও যদি বিষয়গুলো না জানেন তাহলে এ পদ থেকে তাকে সরে দাঁড়ানো উচিত। শিক্ষার বিষয়ে জড়িতদের কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।’ ভুলেভরা বই এবং সিলেবাস বাতিলের দাবি জানান তিনি।
চরমোনাই পীর বলেন, ‘সরকার উন্নয়নের মহাসড়কে দেশকে নিয়ে গেছে বলে বক্তব্য দিলেও হাকিকত হলো এখনো মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছে। এখনো মানুষ ক্ষুধার যাতনা সইতে না পেরে স্বপরিবারে আত্মহত্যার করার ঘটনা আমাদের বিবেক নাড়িয়ে দেয় স্বাধীনতার ৫২ বছরেও মানুষ প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন নয়। ভাত ও ভোটের জন্য মানুষ এখনো লড়াই করছে। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে মানুষ অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। চিকিৎসা বঞ্চিত মানুষ অসহায় বসবাস করছে। কৃষকরা তাদের পণ্যের ন্যায্য দাম পাচ্ছে না। একটি মধ্যসত্বভোগী গোষ্ঠী বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। দলীয় লোকজন বাজার নিয়ন্ত্রণ করার কারণে সিন্ডিকেট ভাঙতে ব্যর্থ সরকার।’
সুইডেনে কোরআন পোড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সুইডেনে কোরআন পোড়ানোর সুযোগ দিয়ে বিশ্বের ১৬০ কোটি মুসলমানের হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করেছে সুইডেন সরকার। এ ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।’ তিনি বাংলাদেশ সরকারকে সুইডেন বিষয়ে জাতীয় সংসদে নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণের দাবি জানান। সেই সঙ্গে সুইডেনে রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কঠোর ভাষায় নিন্দা করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা দক্ষিণের পুনর্নির্বাচিত সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম বলেন, ‘সরকার জনগণের ভাত ও ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এখন আবার ঈমান নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। তিনি সরকারকে ইসলাম ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র থেকে সরে না দাড়ালে দেশময় তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
১৩ দফা দাবি
সম্মেলনে ১৩ দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—সুইডেনে কোরআন পোড়ানোর ন্যাক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ। মহানবী হযরত (সা.) খতমে নবুওয়ত অস্বীকারকারী কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করা এবং বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা। ভোটাধিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যথাসময়ে সংসদ ভেঙে দিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করে এর অধীনে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে।
জাতীয় শিক্ষাকার্যক্রমে অবৈজ্ঞানিক এবং ভিত্তিহীন কল্পনাপ্রসূত ডারউনের মতবাদসহ যেসব ঈমান বিধ্বংসী কুশিক্ষা পাঠ্যক্রম থেকে বাতিল ও সর্বস্তরে র্ধমীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। দ্রব্যমূল্যে নিয়ন্ত্রণ করা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০২২ বাতিল ঢাকাকে মাদকমুক্ত করতে হবে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গ্রেপ্তার হওয়া নিরপরাধ আলেম ওলামাদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।
রাজধানীবাসীর সুবিধা বৃদ্ধি ও হোল্ডিং ট্যাক্স কমিয়ে সহনীয় করতে হবে। ঢাকার বায়ুদূষণ রোধ এবং অবিলম্বে যানজট ও ট্রাফিক সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান করতে হবে। ঢাকার ফুটপাত জনসাধারণের জন্য মুক্ত করতে হবে। বিভিন্ন পরিবহনে সরকার দলীয় ক্যাডারদের চাঁদা দমন করতে হবে। ঢাকাসহ সারা দেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করতে হবে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে সরকারি তদারকি জোরদার করতে হবে।
সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন—কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, নেজামে ইসলাম পার্টির মুফতী এএনএম জিয়াউল হক মজুমদার, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের কাজী আবুল খায়ের, মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, লুৎফুর রহমান শেখ, মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, কেএম আতিকুর রহমান, মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, শওকত আলী হাওলাদার, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, আলতাফ হোসেন, আনোয়ার হোসেন, ডা. শহিদুল ইসলাম।
সম্মেলন পরিচালনা করেন নগর সাংগঠনিক সম্পাদক কেএম শরীয়াতুল্লাহ ও সহপ্রচার সম্পাদক মাওলানা জিয়াউল আশরাফ। ১৩ দফা সম্মেলন ঘোষণাপত্র পাঠ করেন দক্ষিণ সেক্রেটারি মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল মজুমদার।