রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৪:২২ পূর্বাহ্ন




দাম বেশি, রুটি ছেড়ে ভাতে ঝুঁকছে মানুষ

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: শনিবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২৩ ১১:০৬ am
Cooked rice steaming boiling boiled rice চাল চাউল ধান ভাত অন্ন চাল খাবার প্রধান খাদ্য রান্না সিদ্ধ সেদ্ধ Panta Ilish Panta_Ilish Cooked rice steaming boiling boiled rice চাল চাউল ধান ভাত অন্ন চাল খাবার প্রধান খাদ্য রান্না সিদ্ধ সেদ্ধ Panta Ilish Panta_Ilish Cooked rice steaming boiling boiled rice Panta bhat Hilsa Fish Fried পান্তা ইলিশ চাল চাউল ধান ভাত অন্ন চাল খাবার প্রধান খাদ্য রান্না সিদ্ধ সেদ্ধ পান্তা ভাত পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ ইলিশ ভাজা মাছ
file pic

একটা সময় ছিল, গরিব মানুষ খেত রুটি, আর সচ্ছল মানুষ ভাত। কথাই ছিল, ‘হয় কম খাও নয় গম খাও।’ এরপরে পরিস্থিতি বদলে যেতে শুরু করে। পুষ্টি বেশি বিবেচনায় রুটির জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। কিন্তু সেই রুটি হয় যে আটা থেকে, তার দাম দ্রুত বাড়ছে। এমন অবস্থায় আবার সাধারণ মানুষ রুটি ছেড়ে ভাতের দিকে ঝুঁকছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা এবার বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাসের ওপর পড়েছে। বিশ্ববাজারে কম দামে গম রপ্তানির প্রধান উৎস ওই দুই দেশ।

ওই এলাকা থেকে গম আসা কমে যাওয়ায় বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে গেছে। দেশের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্য আটার দাম আরেক দফা রেকর্ড ভেঙেছে। আর বেশি দামে আটা কিনতে না পারায় দেশের মানুষের বড় অংশ রুটি, বিস্কুট ও আটা–ময়দা থেকে তৈরি খাদ্য কম খাচ্ছে। গত এক বছরে ভাতের পরে দেশের দ্বিতীয় প্রধান ওই খাদ্য খাওয়ার পরিমাণ ১৫ লাখ টন কমছে। দাম বেশি থাকায় আটার তৈরি খাবারের বদলে মানুষ ভাত খাওয়া বাড়িয়ে দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএ থেকে বাংলাদেশের দানাদার খাদ্যবিষয়ক মাসিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দৈনিক খাদ্য পরিস্থিতিবিষয়ক প্রতিবেদনেও দেশে গম আমদানি কমে যাওয়া এবং দাম দ্রুত বেড়ে যাওয়ার চিত্র উঠে এসেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত এক বছরে আটার দাম কেজিতে ৩৬ শতাংশ এবং ময়দা ৪৫ শতাংশ বেড়েছে।

ইউএসডিএর প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ আটার দাম গড়পড়তায় প্রতি কেজি ৬২ টাকা। আর ময়দার কেজি ৭২ টাকা। আগামী এপ্রিলে বাংলাদেশে উৎপাদিত গম বাজারে এলে এবং ভারত গম রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে দাম কমতে পারে। আর মোটা চালের দাম নতুন করে না বাড়লেও তা গড়পড়তায় কেজি ৫১ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। তুলনামূলকভাবে দাম কম থাকায় মানুষ ভাত বেশি খাচ্ছে।

প্রতিবেদন বলছে, গত ২০২১–২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের মানুষ মোট ৮৩ লাখ টন আটা–ময়দা খেয়েছে। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে গমের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় ধারণা করা হচ্ছিল, গম খাওয়ার পরিমাণ কমে ৭৪ লাখ টন হবে। কিন্তু ২০২২–২৩ অর্থবছরে তা ধারণার চেয়েও বেশি কমে গিয়ে ৬৮ লাখ টনে দাঁড়াতে পারে। অর্থাৎ এক বছরে গম খাওয়ার পরিমাণ কমছে ১৫ লাখ টন।

এরই মধ্যে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশে ১১ লাখ টন গম উৎপাদিত হয়েছে। আর ৫৫ লাখ টন বিদেশ থেকে আমদানি হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দাম বেশি হওয়ায় আটা–ময়দার তৈরি রুটি, বিস্কুট, পরোটা, কেকসহ নানা ধরনের পণ্য কেনার পরিমাণ কমে গেছে। ভাতের ওপরে চাপ বাড়ায় দেশে চালের চাহিদা বেড়ে গেছে। অনেকে সকালে রুটির পরিবর্তে ভাত খাওয়া শুরু করেছে।

আমন মৌসুমে বাংলাদেশে পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি পরিমাণে চাল উৎপাদিত হয়েছে। এ তথ্য উল্লেখ করে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ইউএসডিএর পূর্বাভাসের চেয়ে ৩৩ শতাংশ বেশি চাল আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকার নিজে আমদানি করেছে ৮ লাখ ৮৫ হাজার টন। ভিয়েতনাম, ভারত ও মিয়ানমার থেকে এসব চাল আমদানি করা হয়েছে। বাকি চাল মূলত ভারত থেকে বেসরকারি খাত আমদানি করেছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আমরা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে চাল ও আটার সরবরাহ বাড়িয়েছি। অন্য বছরগুলোতে খোলাবাজারে চাল বিক্রিসহ নানা কার্যক্রম কয়েক মাসের জন্য বন্ধ থাকত। এখন আমরা তা সারা বছর চালাচ্ছি। এ জন্য আমাদের বেশি করে চাল–গম আমদানি করতে হয়েছে, মজুতও ভালো। ফলে খাবার নিয়ে সমস্যা হবে না।’

বাংলাদেশ রুটি–বিস্কুট ও কনফেকশনারি প্রস্তুতকারী সমিতির সদস্য রয়েছে প্রায় ছয় হাজার। দেশের গমের প্রায় ৬০ শতাংশ ব্যবহার করে ওই সমিতির বেকারিগুলো। পাউরুটি, বিস্কুট, বান, কেকসহ নানা ধরনের খাদ্য উৎপাদনকারী ওই সমিতির সদস্যদের পণ্য বিক্রি গত এক বছরে প্রায় ২৫ শতাংশ কমেছে। এসব পণ্যের প্রধান কাঁচামাল আটা, চিনি, দুধ ও ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রায় প্রতি মাসে বেশির ভাগ পণ্যের দাম বাড়ছে।

সমিতির সভাপতি মো. জালালউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের বেশির ভাগ বেকারি পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। দাম অল্প বাড়াতেই বিক্রি যেভাবে কমছে, তাতে এই খাতকে টিকিয়ে রাখা কঠিন। এর সঙ্গে আবার জ্বালানি গ্যাসের দাম বাড়ানোতে এই খাত বেশি সংকটে আছে।’

আটা–ময়দার অন্যতম ক্রেতা দেশের ছোট–মাঝারি ও বড় হোটেল–রেস্তোরাঁগুলো। সেখানে মূলত রুটি, পরোটা, পুরি, শিঙাড়া, সমুচাসহ নানা ধরনের খাদ্য তৈরি করা হয়। বাংলাদেশ হোটেল–রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির নিবন্ধিত সদস্য রয়েছে প্রায় ৬০ হাজার।

সংগঠনটির হিসাবে সারা দেশে প্রতিদিন প্রায় চার থেকে পাঁচ কোটি মানুষ এসব হোটেল–রেস্তোরাঁ থেকে কোনো না কোনো পণ্য কিনে থাকে। কেবল রাজধানীতে প্রতিদিন ৬০ লাখ মানুষ হোটেলের পণ্য কিনে খায়। করোনার সময় দেশের প্রায় ৩০ শতাংশ হোটেল বন্ধ ছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর অনেকে আবার ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু দাম বেড়ে যাওয়ায় এসব হোটেলের আটা ও ময়দার তৈরি পণ্যের বিক্রি আবারও প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে।

এমন অবস্থায় সুলভ মূল্যে আটা কেনার সুযোগ চেয়েছেন সংগঠনের মহাসচিব ইমরান হাসান। তিনি বলেন, ‘গমের দাম বাড়ার আগে আমাদের মোট খরচের ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ হতো কাঁচামাল কেনা বাবদ। এখন তা বেড়ে ৬৫ শতাংশ হয়েছে। ফলে আমাদের পক্ষে কর্মচারীদের বেতন ও সরকারের বাড়তি গ্যাস–বিদ্যুতের বিল দিয়ে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।’

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নাজমা শাহীন বলেন, এক যুগ ধরে দেশের মানুষের আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাত খাওয়ার পরিমাণ কমছিল। মানুষ রুটি, সবজি, ভোজ্যতেল, দুধ-ডিম, ফলসহ নানা পুষ্টিকর খাবার খাওয়া বাড়িয়েছিল। চালের তুলনায় আটায় পুষ্টিকর উপাদান বেশি। ফলে মানুষ পুষ্টিকর খাবার কমিয়ে দিয়ে ভাত বেশি খেলে তা সামগ্রিকভাবে মানুষের পুষ্টির ঘাটতি তৈরি করবে। ফলে সরকারের উচিত, ওএমএস–সহ নানা সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমে আটাসহ অন্যান্য পুষ্টিকর খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া। [প্রথম আলো]




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD