সপ্তাহান্তে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ) ২০২৩-এ দর্শনার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেলেও কমেছে বিদেশি দর্শনার্থীদের উপস্থিতি। সুষ্ঠু পরিবেশ, সুষ্ঠু প্রচারণা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে বিদেশি দর্শনার্থীরা মেলায় আসছেন না বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। শুক্রবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মেলার মাঠে দেখা মেলেনি বিদেশি ক্রেতার।
হাতিল ফার্নিচারের সহকারি ব্যবস্থাপক জহিরুল ইসলাম বলেন; “মেলায় গত ২৭ দিন ধরে খুব কম বিদেশি দর্শনার্থী পেয়েছি। তবে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি আমাদের স্টলে এসে পণ্যের অর্ডার দিয়েছেন।”
তিনি আরও বলেন, “মেলায় বিদেশি দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে আয়োজকদের অবশ্যই তাদের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ব্র্যান্ড এবং নন-ব্র্যান্ড সংস্থাগুলিকে একই প্যাভিলিয়নের নিচে না এনে আলাদা রাখতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, আয়োজকদের উচিত মেলায় সুশৃঙ্খল পরিবেশের ওপর জোর দেওয়া এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা।
“এখন ক্রেতারা আরও ভাল জিনিস খোঁজে। এক্ষেত্রে বিদেশি দর্শকদের আকৃষ্ট করতে জন্য একটি ভাল প্রচারাভিযান প্রয়োজন।”
“তিনি উল্লেখ করেন পর্যাপ্ত এবং ভালো মানের আসবাবপত্র রয়েছে থাকায় তাদের বিক্রি বেশ ভালো।”
মিনিস্টার হাই-টেক পার্ক লিমিটেডের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক এবং মেলার সেলস ইনচার্জ তৈয়বুর রহমান জানান, শুক্রবার তাদের স্টলে একজন জাপানি নাগরিকের সঙ্গে আসা নেদারল্যান্ডসের এক নাগরিকের কাছে তিনি ফ্রিজ বিক্রি করেছেন।
এর আগে নাইজেরিয়ানসহ বেশ কয়েকজন বিদেশি নাগরিক তাদের স্টল পরিদর্শন করলেও সংখ্যায় সেটি খুবই নগণ্য।
“এখন আমরা পণ্যের উপর ভিত্তি করে ১৫ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছি। আমাদের হোম অ্যাপ্লায়েন্সগুলো বেশ ভালো ক্রেতা টানছে।”
তৈয়বুর জানান, তাদের কোম্পানি মেলায় বৈদ্যুতিক হোম অ্যাপ্লায়েন্সে ১৫ শতাংশ, ওয়াশিং মেশিনে ২২ শতাংশ এবং এলইডি টেলিভিশন এবং রেফ্রিজারেটরের উপর ৪০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে।
সারা কাশ্মীর প্যাভিলিয়নের সেলস এক্সিকিউটিভ বলেন; “দর্শনার্থীদের কাছ থেকে তেমন ভাল সাড়া পাননি তারা। তাদের শালগুলো বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার থেকে চার হাজার টাকার মধ্যে।”
২৭তম মেলার টিকিটের দরপত্র নেওয়া আবদুল এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক আবু সুফিয়ান জানান, বিদেশি দর্শনার্থীদের সংখ্যা আলাদা করে গণনা করা হয়নি।
তিনি বলেন; “বাণিজ্য মেলা শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা প্রায় ৮ লাখ টিকিট বিক্রি করেছি। শাক্রবার ছুটির দিনে মেলায় বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীর সমাগম ঘটেছে। আমরা রাত ১০টা-১১ টার দিকে দর্শনার্থীদের সংখ্যা গণনা করব।”
আবু সুফিয়ান আরও বলেন, অতিরিক্ত খরচ বাদে ৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা দিয়ে টিকিট বিক্রির দরপত্র নিয়েছেন তারা। দর্শনার্থীর সংখ্যা কম হওয়ায় প্রায় ২ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।
প্রতিদিন গড়ে ৩০ হাজার টিকিট বিক্রি হয়। মেলার সময় অন্তত আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ বছর কতজন বিদেশি দর্শনার্থী মেলায় এসেছেন এ প্রশ্নের জবাবে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, চীন, জাপান, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের বহু দর্শনার্থী মেলায় এসেছেন। গত বছরের তুলনায় এ বছর মেলায় বিদেশি স্টলের সংখ্যাও বেশি। মেলায় ১০টি দেশ প্রায় ১৭টি স্টল স্থাপন করেছে।
“তবে স্থানীয় দর্শকদের মতো এখানে আসা বিদেশি দর্শকের সংখ্যা আমরা সঠিকভাবে বলতে পারছি না।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে ইফতেখার আহমেদ মেলার সময় বাড়ানোর সম্ভাবনা নাকচ করে দেন। তিনি আরও বলেন, “আমরা ৩১ জানুয়ারি মেলা শেষ করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে সফলভাবে মেলার আয়োজন করতে পেরে আমরা আনন্দিত।”
দেশের বৃহত্তম বার্ষিক বাণিজ্য ইভেন্ট ২৬তম ডিআইটিএফ-এ বাংলাদেশ ১৬ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানির আদেশ পেয়েছে।
শেরেবাংলা নগরে অনুষ্ঠিত ২৫তম আসরে, বাংলাদশি ব্যবসায়ীরা রপ্তানি আদেশের প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে। এ বছরও মেলার আয়োজকরা ২ বিলিয়ন ডলার পণ্য রপ্তানির আশা করছেন।
ঢাকার পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে (বিবিসিএফইসি) মেলায় মোট ৩৩১টি স্টল স্থাপন করা হয়েছে এবং এর মধ্যে বিদেশি ১০ দেশের ১৭ উদ্যোক্তার স্টল রয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ১৯৯৫ সাল থেকে ডিআইটিএফের আয়োজন করে আসছে। ২৫তম আসর পর্যন্ত শেরেবাংলা নগরে ডিআইটিএফের আয়োজন করা হয়েছে।