বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৯:৩৭ পূর্বাহ্ন




বায়ুদূষণ প্রাণঘাতী রোগের চেয়েও ভয়ংকর

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: রবিবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০২৩ ৪:০১ pm
বায়ুদূষণ Air Pollution Polluted Cities Citi বায়ু দূষণ বাতাস বায়ুমণ্ডল জলবায়ু পরিবেশ স্বাস্থ্য‌ ওজোন স্তর পানি দূষণ মাটি দূষণ শব্দ দূষণ air pollution
file pic

বায়ুদূষণ এইডসের মতো প্রাণঘাতী রোগের চেয়েও ভয়ংকর। সর্বোচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া বায়ুদূষণ কমানো সম্ভব হবে না। তাই সামগ্রিক জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার্থে বায়ুদূষণের বিদ্যমান অবস্থাকে স্বীকার করে সরকারকে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) আয়োজনে অনুষ্ঠিত পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা এসব মতামত তুলে ধরেন।

শনিবার ‘রাজধানীর বিপর্যস্ত বায়ু নগরায়ণের বিদ্যমান প্রেক্ষিত ও করণীয়’ শীর্ষক ‘আইপিডি নগরায়ণ ও উন্নয়নবিষয়ক পর্যালোচনা’ অনুষ্ঠানে পরিবেশ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, বায়ু ও পরিবেশ দূষণের মতো অপরাধকে জনস্বাস্থ্যগত অপরাধ বিবেচনায় নিতে হবে। পরিবেশ আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে দণ্ড ও শাস্তির বিধান করা দরকার। পাশাপাশি দূষণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

বক্তারা বলেন, ঢাকাসহ আশপাশের নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার এলাকার বায়ুদূষণ ক্রমাগত উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। এই দূষণ কমাতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যথাযথ উদ্যোগের অভাব রয়েছে। এমনকি নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়নের দর্শনে পরিবেশকে পেছনে ঠেলে দিয়ে উন্নয়নের যে চিত্র আঁকা হচ্ছে, সেখান থেকে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোকে সরে আসতে হবে। পরিবেশ সমুন্নত রেখে উন্নয়নের কৌশল ঠিক করতে হবে। নগর এলাকাসহ সারা দেশে অবকাঠামো, ভবন নির্মাণসহ যাবতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যথাযথ মানদণ্ডে প্রকল্প ব্যবস্থাপনাসহ বায়ুদূষণরোধে প্রয়োজনীয় তদারকি ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধে আইপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ঢাকার রাস্তায় দাঁড়ালেই দূষণ স্পষ্ট দেখা যায়। এজন্য আলাদা করে গবেষণার দরকার হয় না। নিয়ন্ত্রণহীন ধুলা, যানবাহনের ধোঁয়া ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির অবাধ চলাচল, মোটরসাইকেলসহ ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি, ইটভাটার ধোঁয়া, সড়কের নিয়ন্ত্রণহীন খোঁড়াখুঁড়ি, অবকাঠামো ও মেগা প্রজেক্টের নির্মাণযজ্ঞ, শিল্পকারখানার ধোঁয়া ও বর্জ্য, কঠিন বর্জ্যের অব্যবস্থাপনা ও বর্জ্য পোড়ানো প্রভৃতি কারণে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকার বায়ুদূষণ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। শুষ্ক মৌসুমে যার প্রভাব থাকে সবচেয়ে বেশি।

আইপিডি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, ঢাকার চেয়েও নারায়ণগঞ্জ এলাকার বায়ুর মান বিপজ্জনক মাত্রাকে আরও বেশি ছাড়িয়ে গেছে, যা পুরো জানুয়ারি মাসেই গড়ে প্রতিদিন বায়ুমান সূচক (একিউআই) ৪০০ বা তার চেয়ে বেশি ছিল। ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর এলাকার বায়ুদূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আইপিডি পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, বায়ুদূষণে শুধু স্বাস্থ্যগত বিপর্যয়ই নয়, এতে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। জিডিপিও কমে যায়। বায়ুদূষণ কমাতে নগরে অনাচ্ছাদিত এলাকায় ল্যাস্কেপিং ও সবুজায়নের পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক বায়ুর মান নিয়মিত তদারকির ওপর জোর দেন তিনি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. জামালউদ্দিন বলেন, বায়ুদূষণের কারণে দেশের মানুষের গড় আয়ু ৭ থেকে ৮ বছর কমে যাচ্ছে। বায়ুদূষণকে এইডসের মতো প্রাণঘাতী রোগের চেয়েও ভয়ংকর মন্তব্য করে তিনি বলেন, সর্বোচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া বায়ুদূষণ কমানো সম্ভব হবে না।

কানাডার সেন্ট মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিষয়ক গবেষক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ঢাকার পাশাপাশি রাজশাহী, খুলনার বায়ুদূষণের মাত্রাও উদ্বেগজনক। সারা দেশে মাত্র ১১টি পয়েন্টে রাষ্ট্রীয়ভাবে বায়ুমান পরিমাপ করা হচ্ছে, যা বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা ও কর্মপদ্ধতি নির্ধারণে অপ্রতুল। এগুলোর সংখ্যা বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD