রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:০৩ পূর্বাহ্ন




আইএমএফ ঋণ: কী কী সংস্কার করতে হবে বাংলাদেশকে

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০২৩ ১:১৭ pm
imf আইএমএফ International Monetary Fund আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল
file pic

অধিক স্থিতিস্থাপক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশের জন্য ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।

এ সংস্কারগুলো মূলত আর্থিক খাতকে উন্নতকরণ, নীতি কাঠামো আধুনিকীকরণ ও জলবায়ু বিষয়ক স্থিতিস্থাপকতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে।

মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) আইএমএফের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ) এবং এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (ইএফএফ) এর অধীনে প্রায় ৩.৩ বিলিয়ন ডলার পাবে।

পাশাপাশি রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) এর অধীনে প্রায় ১.৪ বিলিয়ন ডলার পাবে। এর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য নির্মিত তহবিল থেকে আইএমএফ এর ঋণ পাওয়া এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে নাম লেখালো বাংলাদেশ।

আইএমএফ বলেছে, “কর্তৃপক্ষ (বাংলাদেশ) স্বীকার করে যে, প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে, ব্যক্তিগত বিনিয়োগ বাড়াতে, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে এবং জলবায়ু সহনশীলতা তৈরিতে তাৎক্ষণিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্বলতাগুলো নিয়েও কাজ করা উচিত।”

এর আগে, এই আইএমএফ এর এই ঋণ প্রাপ্ত বিশ্বের প্রথম দেশ ছিল বার্বাডোস, তারপর এ ঋণ পায় কোস্টা রিকা এবং রুয়ান্ডা।

আগামী ৪২ মাসের মধ্যে সাতটি কিস্তিতে দেওয়া হবে এ ঋণ। এরমধ্যে, ৪৭৬ মিলিয়ন ডলার তাৎক্ষণিকভাবে ছাড় করা হবে বলেও জানানো হয়েছে ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে।

অবশিষ্ট ৬ কিস্তির প্রতিটিতে ৭০৪ মিলিয়ন ডলার করে ঋণ ছাড় করা হবে। ঋণের শেষ কিস্তি আসবে ২০২৬ সালে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “৪২ মাসের এ কর্মসূচি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে, দুর্বলদের রক্ষা করতে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গ্রিন গ্রোথকে উৎসাহিত করতে সাহায্য করবে।”

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, “এই ঋণের জন্য আমরা অবশ্যই আইএমএফের কাছে কৃতজ্ঞ। আইএমএফের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) আন্তোয়নেট মনসিও সায়েহ ও মিশন প্রধান রাহুল আনন্দ সহ এই ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ সফরকারী দলকে বিশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।”

ঋণ পেতে যা যা সংস্কার করতে হবে সরকারকে

দুর্নীতি কমানোর পাশাপাশি জ্বালানির দামে সমন্বয়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা, খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি স্থাপন এবং বিনিময় হার বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়াসহ প্রায় ৩০টি শর্ত রয়েছে আইএমএফ- এর ঋণ চুক্তিতে।

অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা টিবিএসকে আরো বলেন, সরকারি ব্যয়ের বিপুল অপচয় কমানোর পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ দল। একে বাজেট ব্যবস্থাপনায় একটি বড় ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত করেছে তারা।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আইএমএফের শর্তগুলোকে এমইএফপিতে ‘লক্ষ্য’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

সামগ্রিক ভর্তুকি কমানোর শর্ত রয়েছে আইএমএফের। এরই অংশ হিসেবে বাড়ানো হয়েছে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম। ২০২৩ অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরে ভর্তুকি অনেক কম হবে বলে উল্লেখ করেন তারা।

কর্মকর্তারা বলছেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের দামের গতিশীল সমন্বয় নিয়ে আইএমএফ কোনো শর্ত দেয়নি। তারা জ্বালানির দাম সমন্বয়ের কথা উল্লেখ করেছে।

যদিও আইএমএফ সারের উপর ভর্তুকি কমানোর পরামর্শ দিয়েছিল, কিন্তু সরকার এতে রাজি না হওয়ায় এটি শর্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

অন্যদিকে, খেলাপি ঋণ কমাতে একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি স্থাপনের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ২০২০ সালের একটি আইনের খসড়া তৈরি করে মতামতের জন্য সেটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে ফাইন্যান্সিয়াল ইন্সটিটিউশনস ডিভিশনস।

খসড়া অনুযায়ী, এটি একটি শতভাগ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিশেষায়িত কোম্পানি হবে। কিন্তু আইএমএফ মনে করে, কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ আদায় করা সম্ভব হবে না। তাই তারা বেসরকারি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি গঠনের শর্ত বেঁধে দিয়েছে।

এছাড়া ঋণ খেলাপির সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনতে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের শর্ত দিয়েছে আইএমএফ। শর্ত অনুযায়ী, যে কোনো ঋণগ্রহীতা তিন কিস্তি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে তাকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।

বর্তমানে ছয়টি কিস্তি পরিশোধ না করলে ব্যাংকগুলো তাদের খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আইএমএফের শর্তাবলীর মধ্যে বাজেট ঘাটতি ৪.৫ শতাংশে সীমাবদ্ধ করা এবং রাজস্ব বাড়ানোর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কর ছাড় বাতিলের পাশাপাশি রাজস্ব প্রশাসন সংস্কারের শর্ত আরোপ করেছে তারা।

এছাড়াও, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন জোরদার করতে, জনসাধারণের আর্থিক ও ঋণ ব্যবস্থাপনা সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছে।

আইএমএফ এর আরেকটি শর্ত ছিল বছরে চার বার মুদ্রানীতি ঘোষণা করা, কিন্তু বাংলাদেশ তিন বার মুদ্রানীতি ঘোষণায় সম্মত হয়। তারই অংশ হিসেবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নতুন মুদ্রানীতিতে আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী বাজারভিত্তিক বিনিময় হারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) আকারও ১ বিলিয়ন ডলার কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর বাইরে, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বরাদ্দ থেকে সরকারি কর্মচারীদের সঞ্চয়পত্র এবং পেনশনের সুদের বরাদ্দ আলাদা করার শর্ত দিয়েছে আইএমএফ। আগামী অর্থবছরে এটি বাস্তবায়ন করতে পারে সরকার।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রথম কিস্তির আগে আইএমএফ এর শর্ত পূরণে সরকারের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে পরবর্তী ৬ কিস্তির বেলায় প্রতিটি কিস্তির আগে সরকারের কী কী শর্ত বাস্তবায়ন করতে হবে তা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে এমইএফপি।

দ্বিতীয় কিস্তি থেকে প্রতিটি কিস্তি পাওয়ার আগে, আইএমএফ মিশন ওই শর্তগুলোর বাস্তবায়ন পর্যালোচনা করতে এবং সংস্থার বোর্ডের কাছে উপস্থাপন করতে বাংলাদেশ সফর করবে। বোর্ড বাস্তবায়নে সন্তুষ্ট হলেই আইএমএফ ঋণ প্যাকেজের পরবর্তী কিস্তি প্রকাশ করবে।

আইএমএফ এর ঋণ চুক্তি নিয়ে বিশদ আলোচনার জন্য রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে একটি আইএমএফ দল গত বছরের ২৬ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকা সফর করে।

এরপর এ বছরের ১৪ থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করেন আইএমএফ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট আন্তোয়নেট মনসিও সায়েহ।

সফরকালে তিনি যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক অগ্রগতি দেখেছিলেন তার প্রশংসা করে আন্তোয়নেট বলেন, এটি সারা বিশ্বে একটি ছাপ ফেলেছে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও অভিনন্দন জানান তিনি।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD